ঘুরে আসুন চিসাং

উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি গ্রাম চিসাং (Chisang) । কালিম্পং জেলায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। নির্জন নিরিবিলি। পরিবেশ পুরোপুরি দূষণমুক্ত। সারাবছর যাওয়া যায়। তবে নভেম্বর-এপ্রিল বেড়ানোর আদর্শ সময়। উৎসবের মরশুমে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

সময়টা উপভোগ্য। না গরম, না ঠান্ডা। এটাই বেড়ানোর আদর্শ সময়। কোথায় যাবেন? ঘুরে আসুন উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে। মনের মতো ডেস্টিনেশন হতে পারে চিসাং। খুব বেশি মানুষ নাম শোনেননি। তবে জায়গাটা ফাটাফাটি। কালিম্পংয়ের ছোট্ট গ্রাম। জেলা শহরের কাছেই।
প্রাকৃতিক পরিবেশ অসাধারণ। রাতের চাদরে, দিনের ঝলমলে রোদ্দুরে কারা যেন কবিতা লিখে যায়। ভোরবেলা ঘুম ভাঙবে নানারকম পাখির ডাকে। এককাপ গরম কফি নিয়ে বসুন খোলা জানলার সামনে। মন ভাল হয়ে যাবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে পেয়ে যাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা।

আরও পড়ুন-এটা তোমার প্রাপ্য মেসিকে এমবাপে

পর্যটক খুব বেশি আসে না। সেই কারণে বেশ ফাঁকা ফাঁকা। ব্রেকফাস্ট সেরে নির্জন পাহাড়ি পথে কিছুটা হেঁটে আসতে পারেন। তবে একা একা বেশি দূরে না যাওয়াই ভাল। পাহাড় ঘেরা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় নানারকম বন্যপ্রাণী। যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে।
ভুটান সীমান্ত খুব কাছেই। তাই চিসাং ভ্যালির সময় আধঘণ্টা এগিয়ে। কারণ ভুটানের সময় আধঘণ্টা এগিয়ে ভারতের সময় থেকে। এখানে আছে ফোনের টাওয়ারের সমস্যা। কয়েকটি ফোনের নেটওয়ার্ক একেবারেই পাওয়া যায় না। এক কথায়, চিসাং ভ্যালিতে ইন্টারনেট মোবাইল ছাড়া নির্ভেজাল ছুটি কাটানো যায়। সারাদিন পার করে দেওয়া যায় সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে অনর্গল কথা বলে।
বেড়িয়ে আসতে পারেন জিরো পয়েন্ট থেকে। দুই দেশের সীমান্ত যেখানে মিশেছে। এখান থেকে ভুটান পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। জিরো পয়েন্ট থেকে ভুটানের সীমান্ত দেখায় আরও পরিষ্কার। পাওয়া যায় পুরো ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। দেখা যায় সীমানা খোলা নদী। এখান থেকে নামার সময় কিছুক্ষণ সময় কাটানো যায় মূর্তি নদীর পাড়ে। ভুটানের গ্রাম তেন্দু চোখে পড়ে। পাশাপাশি দেখা যায় ভুটানের মিলিটারি ক্যাম্প এবং ডকালাম। ডকালাম হল চিন ও ভুটানের সীমান্ত।

আরও পড়ুন-লিস্টনদের দাপটে চারে চার মোহনবাগানের

চাপরামারি ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় চিসাং ভ্যালি। এখান থেকে দেখা যায় নাথু লা রেঞ্জ, জোরথাং। আবার কালিম্পং থেকে গরুবাথান, চালসা হয়েও চিসাং পৌঁছনো যায়। চালসা ভ্যালি থেকে চাপরামারি ফরেস্টের মধ্য দিয়ে ২০ কিলোমিটার পথ রয়েছে। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার।
জনবসতি কম। তাই চিসাং ভ্যালিতে প্রকৃতিকে নিজস্ব ছন্দে পাওয়া যায়। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠেছে সুন্দর গ্রামটি। অসাধারণ সৌন্দর্য একাকার মূল আকর্ষণ। দেখতে পাবেন এলাচ গাছের চাষ। অর্কিড ফুলের বাহার এবং অরগ্যানিক ফসলের চাষও চিসাংয়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। পরিবেশ দূষণমুক্ত। সারাবছর কোনওরকম ফ্যান বা এসির প্রয়োজন হয় না। শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়লেও, গরমকালে কিন্তু আবহাওয়া মনোরম থাকে। অক্টোবর মাস পর্যন্ত। রাতের দিকে ঠান্ডা একটু বেশিই পড়ে। সারা বছরই রাতে লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে কাটাতে হয়। বছরের যেকোনও দিন চিসাং যেতে পারেন। তবে পরিষ্কার আকাশ, ভুটানের পাহাড়ের ভিউ ও দূরে নাথু লা পাহাড়ের বরফ ঢাকা ভিউ পেতে নভেম্বর-এপ্রিল আদর্শ সময়। মেঘে ঢাকা চিসাং যেন পৃথিবীর বুকে এক চিলতে স্বর্গ।

আরও পড়ুন-পাইলটদের মাউথওয়াশ, টুথজেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ডিজিসিএর

চিসাং থেকে ঘুরে আসতে পারেন ডুয়ার্স ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা। যেমন তোদে, তংতা, রংপো, দলগাঁও, ঝালং, বিন্দু, প্যারেন। আছে প্যাগোডা। এছাড়া খুব কাছেই রয়েছে দলগাঁও ভিউ পয়েন্ট, তোদে বাজার ও তংতা বৌদ্ধগুম্ফা। পাওয়া যায় দাওয়াইখোলা, জলঢাকার দেখা। চিসাংয়ে এসে নিরিবিলিতে কিছু সময় কাটানোই ভাল। পাখিদের ডাক ছাড়া আর কোনও কোলাহল শোনা যাবে না। দিনের বেলা তো বটেই, রাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও আপনার চোখ ও মন জুড়িয়ে যাবে। চিরসবুজ এই জায়গার প্রেমে পড়ে যাবেন কয়েকদিন থাকলে। ভাবনাচিন্তা ছাড়ুন। চটপট বেরিয়ে পড়ুন।

আরও পড়ুন-সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে ৫০, বিজয়া সম্মিলনীতে শতাব্দী

কীভাবে যাবেন?

হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। সেখান থেকে চিসাং পৌঁছনোর জন্য সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়ি করেও চালসা এবং সেখান থেকে অন্য গাড়ি করে চিসাং পৌঁছনো যায়। চিসাং পর্যন্ত যাওয়ার সরাসরি শেয়ার গাড়ি পাবেন না। সব থেকে কাছের রেল স্টেশন নিউ মাল জংশন। সেখান থেকে চিসাং-এর দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। নিউ মাল জংশন থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন চিসাংয়ে। পাহাড়ি গ্রামটিতে পা রাখা মাত্র ভাল হয়ে যাবে মন। দূর হয়ে যাবে নাগরিক ক্লান্তি।

আরও পড়ুন-বকেয়া ফেরানোর দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক মুখ্যমন্ত্রীর, ১৬ নভেম্বর বৈঠক

কোথায় থাকবেন?

চিসাংয়ে কয়েকটি হোম-স্টে আছে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। খরচ মোটামুটি নাগালের মধ্যে। জনপ্রতি ১,৫০০ থেকে ২,৫০০ টাকার মতো। আশপাশের গ্রামে বা পাহাড়ি শহরে পেতে পারেন হোটেল। সেখানেও পাবেন খাবার। খরচ তুলনায় একটু বেশি। লোকাল ফুড অবশ্যই ট্রাই করবেন।

Latest article