ঋতু বদলের মোকাবিলায়

শীতের ফার্স্ট ইনিংস শুরু। একদিকে উত্তরে হাওয়া, অন্যদিকে চড়া রোদ, আবার সুয্যি ডুবলেই হালকা শীত শীতে ভাব। ত্বকে টানটান ভাব, সর্দি-কাশি, গলা খুসখুস, গা ম্যাজম্যাজানি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট। কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন এই সময়, জানালেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ তনুকা মণ্ডল। লিখেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ঋতু পরিবর্তনের কারণ কী
সিজন চেঞ্জের কারণে যে ঠান্ডা লাগা জ্বর বা সর্দি-কাশি হয় তা মূলত ভাইরাল ইনফেকশন। যত ঠান্ডা ভাব বাড়বে তত এই ভাইরাসগুলোর প্রকোপ বাড়তে থাকবে তার কারণ সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব। সূর্যরশ্মি যেহেতু এই সময় ভাইরাসগুলোকে ধংস করতে উপযুক্ত পরিমাণে আসতে পারে না ফলে সেগুলো বাড়তে থাকে যে কারণে এই সময় এত সিজনাল চেঞ্জ জনিত শারীরিক সমস্যাগুলি দেখা দেয়।

আরও পড়ুন-এবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিশেষ সাংগঠনিক দায়িত্বে কুণাল ঘোষ

এর জন্য কোন ভাইরাস দায়ী
এই সময় যে ভাইরাসটি সর্দি-কাশির, জ্বরের জন্য প্রধানত দায়ী সেটি হল রাইনো ভাইরাস। এই ভাইরাসটি অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে সর্দি-কাশির কারণ। এছাড়া রয়েছে প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বা সিজনাল করোনা ভাইরাস। এটা জানা দরকার, সব করোনা ভাইরাস কিন্তু সার্স কোভ টু নয়। মূলত এই সিজনাল করোনা ভাইরাসটি শীতকালেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি সৃষ্টি করে থাকে। তবে এই ঋতু পরিবর্তনজনিত সর্দিকাশি, জ্বর যেমন চার-পাঁচদিন থেকে ঠিক হয়ে যেতে পারে আবার নিউমোনিয়ার মতো সিভিয়র রোগেও পরিণত হতে পারে।

আরও পড়ুন-৩ ডিসেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা কাঁথিতে

ভাইরাল ইনফেকশনের লক্ষণ কী
ঋতু পরিবর্তনের শারীরিক সমস্যাগুলি হল যেমন, মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়ে, গলা ব্যথা বা বসে যাওয়া, গা ম্যাজম্যাজ করে, হালকা গলা খুসখুস, কখনও কাশি, হাঁচি, জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বর আসা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
গলায় খুব ব্যথা হলে
গলায় কষ্ট, ব্যথা থাকলে বা অল্প কাশি থাকলে হালকা কুসুম গরম জল নুন দিয়ে দিনে তিনবার গার্গল করুন। তারপর গলাটা সুতির কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখুন।
গাঁটে গাঁটে ব্যথা হলে
গাঁটে গাঁটে ব্যথা হলে গরম সেঁক নিন। শরীরে আড়ষ্টভাব লাগলে হাঁটাচলার মধ্যে থাকুন। হালকা হলেও ব্যায়াম করুন রোজ।
যদি জ্বর আসে
যদি জ্বর আসে তাপমাত্রা দেখে নিন। একশো হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে দিনে তিনবার শরীরের অবস্থা বুঝে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওষুধ দেবার আগে একবার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন।

আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীই নাটের গুরু, শাস্তি দেবে কে?

কাদের সমস্যা বেশি হয়
সিজন চেঞ্জে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে শিশু এবং বৃদ্ধ। তাই আগে থাকতে প্রতিরোধ গড়তে সবচেয়ে জরুরি হল ভ্যাকসিনেশন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ফ্লু ভ্যাকসিন প্রতি বছর নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির অবশ্যই নিতে হবে। এটি দু’বার নিতে হবে এক বছরের গ্যাপে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ইমিউনাইজেশন চার্ট মেনেই ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার।
আঠারোর ঊর্ধ্বে বয়স হলে
যাঁরা অল্প বয়সি বা আঠারোর ঊর্ধে বয়স, সিজন চেঞ্জে তাঁদের অল্পস্বল্প উপসর্গ দেখা দিলেই ভেপার নিন। মুখে মাস্ক পরুন, অন্তত তিনটে দিন আইসোলেশনে থাকুন। যাতে আপনার ভাইরাস অন্য কারও মধ্যে না ছড়ায়।
সুগার বা প্রেশার থাকলে
যাঁদের সুগার বা প্রেশার রয়েছে, কিডনি সমস্যা রয়েছে, হার্টের রোগী হলে বা বারো বছরের নিচে বয়স যে শিশুর, অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ক্ষেত্রে হালকা সর্দি-কাশি, জ্বর বলে অবশ্যই প্রথমেই তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশনটা চেক করুন। স্যাচুরেশন কম থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
অ্যাজমা বা সিওপিডি থাকলে
ঋতু পরিবর্তনের মুহূর্তে শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার এবং সিওপিডির পেশেন্টদের সমস্যা বাড়ে। এক্ষেত্রে তাঁরা যেন ইনহেলার নেওয়া বন্ধ না করেন। অনেকেরই শ্বাসকষ্ট খুব বেড়ে যায় সেক্ষত্রে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক চালু করলে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হবে। না হলে বিপদ বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন-আলোকবর্ষের উজ্জ্বল বিভা

এখন জ্বর মানেই কি ভাইরাল
এখন জ্বর মানেই শুধু সিজন চেঞ্জের ভাইরাল ফিভার হয়েছে এটা ভেবে ফেলা কিছুটা হলেও বোকামি হবে কারণ এই সময় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ে। বিশেষত এখন খুব ডেঙ্গির কথা শোনা যাচ্ছে।
ডেঙ্গির বা ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণ আলাদা হয়। মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, ধুম জ্বর আবার ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। সিম্পটম বুঝে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতে হবে। কারণ এগুলি দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন বা জানলায় নেট লাগিয়ে নিন, লম্বা হাতার জামাকাপড় পরুন। জ্বরের কারণ যাই হোক, ধরা পড়লে প্রচুর পরিমাণে জল খান।

আরও পড়ুন-হাবিবুলের পরিবারের পাশে তৃণমূল

ঘরোয়া টোটকা

একদিকে গরম, ঘাম অন্যদিকে ত্বকে টান, খসখসে ভাব। সুন্দর চেহারা, লালিত্য হঠাৎ কোথায় যেন উধাও হবে। তাই এখন থেকেই হালকা ময়শ্চারাইজার লাগান। সরষের তেল হালকা গরম করে অথবা বাজার চলতি বডি অয়েল স্নানের আগে ম্যাসাজ করুন। একটু দুধ আর বাসি রুটি চটকে মাখতে পারেন রোজ। একটুও রুক্ষ হবে না ত্বক বরং দারুণ ঝকঝকে হয়ে উঠবেন।

এটা ডিহাইড্রেশনের আদর্শ সময় তাই প্রচুর জল খান। অন্তত তিন থেকে চার লিটার। এছাড়া ঘোল, ডাবের জল খান। এতে প্রথমেই যেটা হবে ত্বকের হঠাৎ রুক্ষ, শুকনো ভাবটা আসবে না। সঙ্গে রোজ খালি পেটে হালকা গরম জলে লেবুর রস দিয়ে খান। এতে সিজন চেঞ্জ জনিত সমস্যা হবে না সহজে।

হঠাৎ গলাটা ব্যথা ব্যথা করছে, খুসখুসানি ভাব? আদা কুচি,গুড় আর জোয়ান একসঙ্গে নিয়ে খান সকালে খালি পেটে। এই পথ্য গলার সমস্যায় খুব উপকারী অথবা গরম দুধে হলুদ দিয়ে খান বা লেবু এবং মধু দিয়ে চা খান৷ আদা, লেবু আর হলুদে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা যে কোনও প্রদাহ কমায়।

আরও পড়ুন-শোকপ্রকাশ করে তৃণমূল বলল, সাহস থাকলে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বলা সেই চারটি লাইন গুজরাতেও বলুন

সর্দি-কাশি শুরু হয়েছে? রোজ বাসকপাতা জলে সেদ্ধ করে ছেঁকে উষ্ণ গরম খান। কাশির উপশম হবে। এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো এবং দু’চামচ মধু মিশিয়ে খান। কয়েকদিনেই কাশি থেকে মুক্তি। ৪ থেকে ৫ কোয়া রসুন ঘিতে নেড়ে নিন। গরম থাকতে খান। পরপর খান। দেখুন ম্যাজিকের মতো কাজ হবে।

গা ম্যাজম্যাজ করছে, জ্বর জ্বর ভাব? কুসুম গরম জলে স্নান করে নিন, তাপমাত্রা নেমে যাবে। শরীরের জ্বর ভাব দূর হবে। ভুলেও ঠান্ডা বা সাধারণ তাপমাত্রার জল গায়ে ঢালবেন না।

Latest article