দুটি অনবদ্য ছোটদের বার্ষিকী

পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শারদ সংখ্যার পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে দুটি ছোটদের বার্ষিকী। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘ছোটোদের চাঁদের হাসি’। ছন্দা চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। গত কয়েক বছর ধরেই এই বার্ষিকী সমাদৃত হচ্ছে পাঠকমহলে। এবারের সংকলনে স্থান পেয়েছে নানা স্বাদের লেখা।
শুরুতেই চিরন্তনী ছড়া-কবিতা। ফিরে পড়ার সুযোগ হল রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’, মনোমোহন বসুর ‘নদী ও সময়’, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর ‘মা ও ছেলে’, গুরুসদয় দত্তর ‘তরুণ’। মন হল স্মৃতিমেদুর।

আরও পড়ুন-‘ভারতের বাস্তবচিত্র লুকিয়ে রাখার চেষ্টা’ এক্সে কেন্দ্রকে নিশানা রাহুলের

আছে দুটি বিশেষ রচনা। ‘অথ রামমোহন কথা’ লিখেছেন অশোককুমার মিত্র। গল্পের ছলে বলেছেন রাজা রামমোহন রায়ের জীবন-কথা। পড়তে ভাল লাগে। শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘বাংলার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’। লেখাটি কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। স্বল্প পরিসরে মধুকবির জীবন লিপিবদ্ধ হয়েছে।
দীর্ঘ ছড়া-কবিতা বিভাগ সেজেছে দুটি লেখায়। ভবেশ দাশের ‘চাঁদের হাসি’ অনবদ্য। শ্যামলকান্তি দাশের ‘এবার পুজোয় চাঁদে’ লেখাটিও এককথায় অসাধারণ। মনকে নিয়ে যায় কল্পনার জগতে। জোড়া ছড়া-কবিতা উপহার দিয়েছেন অপূর্বকুমার কুণ্ডু, সুজিত সরকার, প্রদীপ আচার্য, মৃণালকান্তি দাশ।

আরও পড়ুন-গার্লস স্কুল এবং হস্টেলগুলিতে সিসিটিভি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শিক্ষা দফতরের

আছে উপন্যাস। লিখেছেন ছন্দা চট্টোপাধ্যায়। নাম ‘সত্যিকথা’। কাহিনির কেন্দ্রে রূপক। সে মিথ্যে বলতে পারে না। সত্যবাদিতার কারণে তাকে বিচিত্র পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। দেখা যায় ঘটনার ঘনঘটা, বিভিন্ন চরিত্রের উপস্থিতি। গতি আছে। পড়তে ভাল লাগে।
আকর্ষণীয় বিভাগ নানা স্বাদের গল্প। শংকর চক্রবর্তী লিখেছেন ‘দুষ্টু চিল’। ঝড়ে ঘর-ভাঙা পাখির জন্য ব্যাকুলতা দেখা যায় ছোট্ট তিয়ানের মধ্যে। জন্ম নেয় মনখারাপ। লেখাটি মর্মস্পর্শী। সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমেন্দুশেখর জানা, সঞ্জিতকুমার সাহা, শোভন শেঠ, চন্দন নাথ, শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী, অনন্যা দাশ, মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথের গল্পগুলোয় লেগেছে শরতের ঝলমলে রোদ্দুর। ভাল লাগে।

আরও পড়ুন-‘খাবার থালায় ভারতের জাতীয় প্রতীক’ এক্সে সরব সাকেত গোখলে

আছে দুটি চমৎকার নাটক। ‘রবির মা’ লিখেছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎপল ঝা-র লেখার শিরোনাম ‘জয় হোক তব জয়’। ছোটরা যে-কোনও অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ করতে পারে। ছড়া-নাটিকা ‘গ্রীষ্মের গর্ব’ উপহার দিয়েছেন আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়। বিজ্ঞানের গল্পে জ্যোতির্ময় দাশ এবং তপেন্দ্রকুমার পাল সহজ-সরল ভাষায় লিখেছেন দুই বিজ্ঞানীর জীবন-কথা। ক্রিকেট-কিংবদন্তি পঙ্কজ রায়কে নিয়ে অনবদ্য গদ্য উপহার দিয়েছেন দেবাশিস সেন।
এ-ছাড়াও সংকলনটি সমৃদ্ধ হয়েছে গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত্য সুরাল, সুখেন্দু মজুমদার, দীপ মুখোপাধ্যায়, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী প্রমুখ কবির একগুচ্ছ ছড়া-কবিতায়। সেইসঙ্গে আছে কৌতুক নকশা, জানা অজানা, তোমাদের পাতা প্রভৃতি বিভাগ। লেখার সঙ্গে রয়েছে মনকাড়া অলংকরণ। আছে ছোটদের আঁকাও। কিছু পাতা রঙিন। বোর্ড বাঁধাই মলাট, সুন্দর ছাপা। সবমিলিয়ে জমজমাট একটি সংকলন। পরিবেশক পুনশ্চ। দাম ২০০ টাকা।

আরও পড়ুন-সৌদি-কন্যা মহাশূন্যে গড়লেন ইতিহাস

প্রকাশিত হয়েছে ছোটদের আনন্দবার্ষিকী ‘আমপাতা জামপাতা’। দেবাশিস বসুর সম্পাদনায়। গত কয়েক বছর ধরেই এই বার্ষিকী বজায় রেখেছে জনপ্রিয়তা। একাদশ বর্ষের সংকলনে লিখেছেন এই সময়ের বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকেরা।
স্থান পেয়েছে চারটি মনমাতানো উপন্যাস। প্রত্যেকটা ভিন্ন স্বাদের। হেমেন্দুশেখর জানার ‘মুল্লা বেকাশি’-তে রয়েছে ঐতিহাসিক চরিত্রের উপস্থিতি। কাহিনির চলনটি সুন্দর। সাবলীল। কোথাও হোঁচট খেতে হয় না। জয়দীপ চক্রবর্তীর লেখার শিরোনাম ‘সঁপিতে চাই আপনারে’। ছোট্ট ভুতুমকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে কাহিনি। শুরু থেকে শেষ, আছে অদ্ভুত টান, আলোআঁধারি। পড়তে ভাল লাগে। বাকি দুটি উপন্যাস দোলনচাঁপা দাশগুপ্তর ‘উরালের উল্কা-রহস্য’ এবং শাশ্বতী চন্দর ‘জলপরি ও সাঁতারের ক্লাস’। ছোটদের মনের মতো।

আরও পড়ুন-ইয়ে ডর হামলোগোকো আচ্ছা লাগা

উপন্যাসোপম বড়গল্প আছে কয়েকটি। সৈকত মুখোপাধ্যায়ের ‘মনপবনের বন’, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যর ‘সীতারাম’-এ আছে নদীর গতি। তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। পাশাপাশি অশোককুমার মিত্র, যুধাজিৎ দাশগুপ্ত, প্রদীপ দে সরকার, শান্তনু বসু নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। তাঁদের লেখায় লেগে রয়েছে অন্যরকম গন্ধ।

আরও পড়ুন-সকাল থেকে বিঘ্নিত মেট্রো পরিষেবা, নাজেহাল অবস্থা যাত্রীদের

আছে কয়েকটি মনকাড়া গল্প। শেখর বসু ‘ক্যাট-ক্যাফে’-তে ফুটে উঠেছে ছোট্ট টিনার বিড়ালপ্রীতি। বেশ মজার। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘নতুন পৃথিবীর বন্ধুরা’ তীর্থ এবং তার নতুন বন্ধুদের গল্প। সহজ সরল ভাষায় লেখা দুর্দান্ত সায়েন্স ফিকশন। জয়ন্ত দে-র ‘সাধুবাবার জিলাবি’ দুই যমজ ভাই এবং এক সাধুবাবাকে নিয়ে লেখা হাসির গল্প। এ-ছাড়াও ভাল লাগে শিশির বিশ্বাসের ‘ভৌতিক’, দেবাশিস সেনের ‘ছেলেটা’, অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর ‘আলমারির ওপরে কারা?’ চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের ‘গোল্লা ঝড়’, সুস্মিতা নাথের ‘পিকলুর বন্ধু আর্চি’, মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যর ‘জোনাকিগাছটা সাক্ষী ছিল’, কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সমুদ্রযাত্রী’, সপ্তর্ষি চ্যাটার্জির ‘ভূত পোষার বিপদ’।

আরও পড়ুন-জি-২০ সম্মেলন: শনিবার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ দিল্লির এয়ারস্পেস, মুখ্যমন্ত্রীরা যাচ্ছেন আজই

আছে সৌমিত্র বসুর নাটক ‘ফ্যাশন ফ্যাশন’। সংলাপের মধ্যে ধরা পড়েছে বর্তমান সময়ের ছবি। ছোট্ট নাটকটি পড়তে ভাল লাগে।
পবিত্র সরকার, শ্যামলকান্তি দাশ, মৃদুল দাশগুপ্ত, বীথি চট্টোপাধ্যায়, অরুণাচল দত্ত চৌধুরী, দীপ মুখোপাধ্যায়, শৈলেনকুমার দত্ত, প্রদীপ আচার্য, কমলেশ কুমার, অনির্বাণ ঘোষ প্রমুখ তুলেছেন ছন্দ-ছড়ার ঢেউ।
বিশেষ রচনায় উল্লেখযোগ্য শ্যামল চক্রবর্তীর লেখাটি। শিরোনাম ‘ডারউইনের নিকট বন্ধুর দুশো বছর’। এ-ছাড়াও ভাল লাগে ডাঃ গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী সরকার, অনিন্দ্য ভুক্ত, জয়তী রায় প্রমুখের লেখা।

আরও পড়ুন-যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুকাণ্ডে এবার ধৃত ১২ জনের বিরুদ্ধে পকসো ধারা যোগ পুলিশের

ভ্রমণ, শব্দবাজির পাশাপাশি আছে আশিস ভট্টাচার্য এবং রাহুল মজুমদারের কমিকস। বাড়তি পাওনা লেখক এবং শিল্পী পরিচিতি। পাতায় পাতায় আকর্ষণীয় অলংকরণ। রঙিন পাতা আছে কয়েকটা। সুন্দর ছাপা, বোর্ড বাঁধাই মলাট। মনের মতো একটি সংকলন। দাম ৩৯৯ টাকা।

Latest article