চেয়েছিলেন শোষণহীন সাম্য, ধর্মবিযুক্ত রাজনীতি

দুর্ভাগ্যবশত দেশের মানুষজন তখন ওঁকে বুঝতে পারেনি। মহাত্মা গান্ধির সাথে ওঁর মতভেদ ছিল বৈচারিক, ব্যক্তিগত নয়।

Must read

সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর চিন্তা–দর্শনের অনুধ্যানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ হিতেন্দ্র প্যাটেল

আধুনিক ভারত গঠনের প্রতি পর্যায়ে চিন্তন ও মননে যার নাম বার বার অনুরণিত হয় তিনি হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এই সম্মান উনি অর্জন করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব অর্পণ করার জন্য। হীরেন মুখোপাধ্যায়ের একটা কথা কেউ কোনওদিন অস্বীকার করতে পারবে না, সুভাষচন্দ্র বসু অর্জুনের মতো দেশের স্বাধীনতার জন্য সমস্ত শক্তি নিয়ে লড়েছিলেন। এই ধরনের দেশপ্রেম ওঁকে অন্যান্য অনেকের থেকে আলাদা করেছে। দেশের প্রতি এই আবেগের জন্য ঐতিহাসিক এস. গোপাল ওঁকে ‘সেন্টিমেন্টাল রিভলিউশনারি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন-ন্যক্কারজনক ড্যামেজ কন্ট্রোল, দেশনায়ককে নিয়ে নষ্টামির পরম্পরা

কিন্তু আমরা হামেশাই ভুলে যাই, এই আবেগের পেছনে একটি সুচিন্তিত মতাদর্শ ছিল। তাঁর যাবতীয় চিন্তা ও কর্মের মূল কেন্দ্রে ছিল দেশের কৃষক, যুব সমাজ, শোষিত ও নিপীড়িত মানুষজন। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে তিনি কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে, স্বামী সহজানন্দের মাধ্যমে কিষান সভার সহযোগিতা পেয়ে দেশের নানান জায়গায় গিয়ে দেশের মানুষকে নিজের ধ্যান- ধারণা সম্বন্ধে তুলে ধরেন। এই সম্বন্ধীয় ভাষণগুলি এখন সংকলিত হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। রাঘব শরণ শর্মা নামক বেনারসের একজন এই কাজ করেছেন। এই বক্তৃতাবলি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে সুভাষ কীভাবে দেশের শুধু স্বাধীনতা নয়, সর্বাংশে উন্নয়নের কথা ভেবে কাজ করতে চেয়েছেন।

আরও পড়ুন-গোয়ায় ভাঙন বিজেপিতে – পদ্মশিবির ছাড়ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত

১৯৩৯ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে আরম্ভ করে ১ জুন ১৯৪০, এই পর্বে তিনি নিজের ধ্যানধারণাগুলিকে ফরওয়ার্ড ব্লক নামক সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত দেশের মানুষজন তখন ওঁকে বুঝতে পারেনি। মহাত্মা গান্ধির সাথে ওঁর মতভেদ ছিল বৈচারিক, ব্যক্তিগত নয়।
বলা যেতে পারে, সুভাষচন্দ্র ভারতীয় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিকল্পনার নির্মাতা ছিলেন । ৬ এপ্রিল, ১৯৪০-এ তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতা আর সমানতা হলো শান্তি আর রুটির সমান। তাঁর লড়াই শুধু একমাত্রিক ছিল না, বুর্জোয়া সমাজ ও সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক সত্তা তাঁকে কোনওদিন পছন্দ করেনি। স্বাধীনতা মানে তাঁর কাছে ছিল, শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরাধীনতা থেকে মুক্তি নয়, সম্পদের সমান বিতরণ, জাতি ব্যবস্থার অবসান আর সামাজিক অসাম্য দূর করা, সাম্প্রদায়িকতা ও ধার্মিক কট্টরপন্থা থেকে মুক্তি (১৯২৯, সেক্যুলার ইম্পলিটিকস)। উনি গান্ধির সমালোচনা করতেন শুধু রাজনীতিতে ধর্মীয় সংযোজন ঘটানোর জন্য।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পেলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক মিহির গঙ্গোপাধ্যায়

সুভাষচন্দ্র যে পথে দেশকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সে পথে চললে দেশ এতদিনে স্বাধীন, আত্মনির্ভর, আধুনিক উদার সমাজ হিসেবে এগিয়ে যেত। এখনও তা হয়নি, তবে এখনও দেরিও হয়ে যায়নি। আজ যেন এইটুকু মনে রাখি।

Latest article