দেশে হচ্ছেটা কী !

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে এক বিরাট খাদের কিনারায় দেশকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন মোদিজি। আর্থ-রাজনীতিক পরিসরে বিপন্নতার মুখোমুখি আমাদের স্বদেশ। লিখছেন অনির্বাণ সাহা

Must read

ক’দিন আগে, বুধবারের কথা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ৪৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার তা খারিজ করে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি, এই দুটি রোধ করতে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদি। আগামী বছরের লোকসভা ভোটে এই দুটি ইস্যুই মোদির গলার কাঁটা। সেই ক্ষতে সাময়িক মলম দিতে কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললেন, আগামী শীতের মরশুমে আনাজ-সহ খাদ্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা নামবে। কারণ মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মরশুমি প্রভাব ইতিবাচক হতে শুরু করেছে। আর, সোমনাথনের এই বক্তব্য বা আশ্বাসে দু’দিনের মধ্যে জল ঢেলে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

আরও পড়ুন-তামিলনাড়ুতে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, মৃত ৯

সর্বোচ্চ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস খানিক হতাশার সুরেই শুক্রবার জানান, ডাল, ভোজ্য তেল উৎপাদন কম হয়েছে। খাদ্যশস্যের জোগানে টান রয়েছে। উপরন্তু পর্যাপ্ত বর্ষার অভাবে ফসলের উৎপাদন ধাক্কা খাচ্ছে। এই ত্র্যহস্পর্শে মূল্যবৃদ্ধি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। একে আটকাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর বিশেষ কিছু করার নেই। তার মানে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চলবে। সুরাহা মিলবে না। বরং দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। মোদি জমানায় গত কয়েক বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির রক্তচোখ দেখছে দেশবাসী। দেশের ১৪০ কোটি মানুষের বেশিরভাগের প্রধান সমস্যাই হল নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দাম।

আরও পড়ুন-দাবি মানতে বাধ্য হলেন রাজ্যপাল, ৩ সপ্তাহ সময় দিলেন অভিষেক, তুলে নিলেন ধর্না

একাধিক মূল্যায়ন সংস্থার পূর্বাভাসেও ভারতের চলতি অর্থবর্ষে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। একটি বেসরকারি সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত জুলাই মাসে দেশে নিরামিষ থালি তৈরির খরচ বেড়েছিল ২৮ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে দেখা গিয়েছে, নিরামিষ ও আমিষ রান্নার থালির খরচ যথাক্রমে ১৭ ও ৯ শতাংশ কমেছে। কারণ অবশ্য টম্যাটো ও লঙ্কার দাম কমে যাওয়া। সেইসঙ্গে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকিই অন্যতম কারণ। তবে বৃষ্টির অপ্রতুলতার কারণে খরিফ মরশুমে ফলনে ধাক্কা খাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। এ প্রসঙ্গেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বলেছেন, একদিকে বিশ্বের অর্থনীতিতে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব, আর অন্যদিকে দেশে এলোমেলো বৃষ্টির জেরে চাষে ক্ষতির আশঙ্কা। তাই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। তা ছাড়া পাম তেল, গম, পিঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তো থাকছেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমে ছিল অনাবৃষ্টি। এখন কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি। দুটি কারণেই ফসল নষ্ট হতে পারে। রাজ্যে পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠনও মনে করে, লাগাতার বৃষ্টি হলে এবং তেলের দাম না কমায় আনাজের দাম বাড়বে।

আরও পড়ুন-শ্রমিকের পরিবারের পাশে তৃণমূল সাংসদ, শিশুর বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনে সাহায্য নুসরতের

এরই প্রতিধ্বনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূল্যায়নে। ডাল, তৈলবীজের উৎপাদন কম হওয়ায় এর দাম চড়বে। মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ৭ শতাংশ স্পর্শ করেছে শেষ পরিসংখ্যানে। লাগাতার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টার্গেটের তুলনায় ২ শতাংশ উপরেই থেকে যাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধির হার। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধি একপ্রকার অনিবার্য। সাধারণ নিয়মে, বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে গেলে অর্থনীতিকে সামাল দিতে কোনও না কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, মোদি জমানায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, আবার বাজারে পণ্যের জোগানও কমেছে। নোটবন্দির ঘা এখনও শুকোয়নি।

আরও পড়ুন-শ্রমিকের পরিবারের পাশে তৃণমূল সাংসদ, শিশুর বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনে সাহায্য নুসরতের

বলা বাহুল্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখন কার্যত যেন ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো। তাদের আর কিছু করার নেই। দেড় বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধি একনাগাড়ে বেড়ে চলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক না পারছে রেপো রেটের বদল ঘটাতে, না পারছে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর কোনও পথ বাতলাতে! তাই আবারও সুদ অপরিবর্তিত রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা এখন গুরুতর। ৪৭ মাস ধরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৪ শতাংশ লক্ষ্যের উপরে রয়েছে। কোটি কোটি পরিবার এই বেলাগাম দামবৃদ্ধির জেরে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। সঙ্গত কারণেই মোদি সরকারের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে ঠিকমতো চালাতে পারছে না। দামের সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্ব বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই জমানায় আম জনতার কোনও সুরাহা নেই।

আরও পড়ুন-ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা পেলেন বলিউডের বাদশাহ

রাজনৈতিক মতলব ছাড়া মোদি সরকার একপাও নড়ে না। বাংলার গরিব শ্রমিকদের বাধ্য করছে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যেতে। এমন কিছু শ্রমিক ইতিমধ্যে দুর্ঘটনায় মারাও পড়েছেন। ঘর তৈরি না-হওয়ায় দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে একাধিক শিশুর। এই কেন্দ্রীয় সরকার যে-নিয়মের দোহাই দিয়ে বাংলাকে বঞ্চিত করে চলেছে, সেই নিয়মের গোরোয় সবার আগে যোগীরাজ্যের পড়ার কথা। উত্তরপ্রদেশের ‘অপরাধ’ এই প্রশ্নে তিনগুণ! তবু বারাণসীর এমপি সে-রাজ্যের গায়ে আঁচড়টি পড়তে দেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেরুয়া স্বপ্ন বারবার চুরমার করে দিয়েছেন। তাও মোদি পক্ষ ছাড়ার বান্দা নয়। তাদের ব্যর্থতার তালিকায় রয়েছে আর একটি রাজ্য, মণিপুর।

আরও পড়ুন-মণিপুরে মন্ত্রীর বাড়িতে গ্রেনেড হামলা, জখম CRPF-সহ ২

ছ’মাস অতিক্রান্ত— তবু শান্ত করা গেল না মণিপুরের মতো একটি ছোট্ট রাজ্যকে। অসংখ্য হত্যা, অপহরণ, হুমকি, নারীধর্ষণ এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি বিনাশের সিরিজ ‘উপহার’ দিয়ে চলেছে এন বীরেন্দ্র সিংয়ের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার। তবু সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বদল করা হল না, সরকার ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা দূরে থাক। সারা পৃথিবী চষে ফেলা প্রধানমন্ত্রী সে রাজ্যে একটিবার পৌঁছে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তাও দিতে পারলেন না!
সব মিলিয়ে, ভারত মোটেই ভাল নেই। মোদির আমলে আমরা কেউই আসলে ভাল নেই।

Latest article