কাজের সুযোগ বাড়ছে ওয়েব ডিজাইনিংয়ে

Must read

ওয়েব দুনিয়ার সঙ্গে মানুষের জীবনযাপন যত ওতপ্রোত হয়ে উঠছে কী শহরে পড়াশোনা-বিনোদন-অফিস কাছারি বা ব্যাঙ্কিং-বুকিং পরিষেবায়, কী গ্রামের চাষবাসে, কিংবা যে-কোনও জায়গায় যে-কোনও সময়ে যেকোনও অবস্থায় থেকে বিশ্বনাগরিকের মতো কাজকর্মে— সবকিছু সম্ভব হচ্ছে যে তথ্যপ্রযুক্তি কারিগরির উন্নতির ফলে তার মধ্যে ওয়েব ডিজাইনারদের ভূমিকা কম নয়। পড়াশুনা বা সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ব্যবসা, বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, কেনা-বেচা, পাত্র-পাত্রী, চাকরি, তথ্যসন্ধান মানুষের সবই আজ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ওয়েবদুনিয়ার উপর। স্বাভাবিকভাবেই, ওয়েবসাইটের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। যার দরুন ওয়েব পেজ সজ্জার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ছে অজস্র ডিজাইনিং বিশেষজ্ঞদের। ছবি, লেখা, গ্র্যাফিক্স সহযোগে একটি ওয়েবসাইটকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য হিসাবে গড়ে তোলা হয়। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও সৃজনশীল ডিজাইনারের। মানুষের কাছে ওয়েবসাইটকে আরও উপযোগী এবং ব্যাবহারিক দিক থেকে সহজতর করে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন ওয়েব ডিজাইনাররা।

ওয়েব ডিজাইনিং (Web Designing) কী ?
ওয়েব পেজ বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনকে কম্পিউটারের ভাষার সহায়তায় ডিজাইন করার জন্য প্রয়োজন হয় ওয়েব ডিজাইনারের। ছবি, লেখা, লিঙ্ক, গ্রাফিক্স ব্যবহার করে ওয়েবসাইটকে সাজিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন হয় ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশুনা করার। কম্পিউটার সম্পর্কযুক্ত কোর্সগুলির মধ্যে ওয়েব ডিজাইনিং কোর্স তাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুনিয়া যত এগোচ্ছে, ভিসুয়াল ডিজাইন এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকেও আরও উন্নততরভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন ওয়েবসাইটের সংখ্যা কয়েক গুণ হারে বেড়ে চলেছে, প্রতিযোগিতার যুগে তাই উন্নতমানের পরিষেবা প্রদানের জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনিং-এর পেশাদার কারিগরদের। এইচটিএমএল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ওয়েবসাইটকে আরও আধুনিকতর ও কর্মোপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজন ওয়েব ডিজাইনিং নিয়ে প্রশিক্ষণ।

কী ধরনের কোর্স ?
ওয়েব ডিজাইনিং নিয়ে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন এইচটিএমএল, এএসপি, পিএইচপি নিয়ে পড়াশুনা করানো হয় এই কোর্সে। এছাড়াও ডিজাইনিং করার সময় একাধিক ওয়েব ডিজাইনিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ফটো- সফটওয়্যার সম্বন্ধে ভাল জ্ঞান থাকা দরকার। এর পাশাপাশি জাভা এবং ফ্ল্যাশিং- স্ক্রিপ্টিং এবং কোডিং, ড্রিম উইভার, ফটোশপ এইরকম ধরনের সফটওয়্যার সম্বন্ধে পড়াশুনা করতে হয়।

কীরকম যোগ্যতা দরকার ?
উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করলে, উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর এই বিষয়টি নিয়ে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা কোর্স করা যায়। এছাড়া স্নাতক স্তরে পড়েও মূলত বিএসসি শাখা থেকে এই বিষয়ে ডিপ্লোমা বা অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। গ্র্যাজুয়েশনে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করেও ওয়েব ডিজাইনিং (Web Designing) পেশায় আসা যায়। তবে টেকনিক্যাল পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এই পেশায়। নতুন চিন্তাভবনা, নকশা, লে-আউট এসবের দক্ষতায় ডিজাইনিং-এর কাজে দ্রুত উন্নতি করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে একটি টিম হিসাবেও কাজ করা হয় ওয়েব পেজ এবং তার ডিজাইনিং-এর বিশেষ প্রয়োজনে, সেক্ষেত্রে একজন টিমম্যান হিসাবে কাজ করা এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে কম্পিউটারের কাজে যুক্ত থাকার মতো ধৈর্য ও সহনশীলতা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন-চাপে পড়ে রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষমা চাইলেন প্রেসিডেন্সির উপাচার্য

কোথায় করা যেতে পারে ?
কলকাতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ব্রেনওয়্যার প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েব ডিজাইনিং-এর (Web Designing) উপর কোর্স হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কোর্সেও ওয়েব ডিজাইনিং পড়ানো হয়ে থাকে। এছাড়াও এরিনা মাল্টিমিডিয়া, সিএমসি ইত্যাদি বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে কলকাতা ও তার আশপাশেই। সারা দেশে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ইন্টারনেটে গুগল সার্চ করে পাওয়া যাবে প্রতিষ্ঠানগুলির বিশদ তথ্য।

কী কাজ করতে হয় ?
ভারতের মতো দেশে আইটি সংস্থাগুলির প্রভূত উন্নতির সঙ্গে-সঙ্গে ওয়েব দুনিয়ার বিপুল প্রসার ঘটেছে গত কয়েকবছরে। কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংবাদ সংস্থা, বিজ্ঞাপন সংস্থা তাদের তথ্য বা বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত তথ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, এবং প্রতিযোগিতায় এগোনোর জন্য গুণমান বজায় রেখে রঙিন, আকর্ষণীয় এবং সহজ ব্যবহার্য সাইট বা পেজ ডিজাইনিং-এর কাজ করতে হয় ডিজাইনারদের। কাজ করার সময় একাধিক বিষয়ের উপর নজর রাখতে হয় ডিজাইনারদের। ডিজাইনিং সলিউশন, ওয়েব কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব কনটেন্ট প্ল্যানিং, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ফ্ল্যাশ ডিজাইনিং— সমস্ত বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয় ডিজাইনারদের। প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওয়েব ডিজাইনার, ওয়েব ডেভেলপার, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনার এইরকম বিভিন্ন পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ধৈর্য সহকারে কাজের অভ্যাস এবং সূক্ষ্ম ও কারিগরি প্রযুক্তিগত কাজের প্রতি যত্নশীল থাকতে হয়। ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজের বিভিন্ন লিঙ্ক ও লে আউটের সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য কেনা-বেচা, অর্থ লেনদেন ইত্যাদি বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, ফলত এই সমস্ত দিকগুলিতে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে কাজের প্রয়োজন।

পেশার চাহিদা কেমন ?
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রসারের সঙ্গে-সঙ্গেই ওয়েব ডিজাইনিং পেশার জগতের প্রসারও গত কয়েক দশকে বহুল পরিমাণে ঘটেছে। আগামী দিনে এই শিল্পে মন্দা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও সামগ্রিকভাবে নেই। স্বভাবতই, ডিজানিং- কাজে কম্পিউটারসহযোগী পেশায় প্রবেশের ইচ্ছা থাকলে ওয়েব ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশুনা করাটা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বহু আইটি সংস্থা বা ওয়েব ডিজাইনিং এজেন্সি/ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি তৈরি হয়েছে শহরগুলিতে, দেশে-বিদেশে। এর বাইরেও ডিজাইনিং স্টুডিও, অডিও-ভিসুয়াল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এজেন্সি, পাবলিশিং হাউসগুলিতেও ওয়েব ডিজাইনিং নিয়ে প্রশিক্ষিত কর্মীর চাহিদা প্রচুর। বলা যেতে পারে, যেকোনও কর্পোরেট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা প্রোডাকশন বা ওয়েব নির্ভর ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলি আলাদা করে ওয়েবসাইট মেন্টেনের জন্য ওয়েব ডিজাইনার নিয়োগ করে থাকে। সরকারি ক্ষেত্রেও সরকারের বিভিন্ন দফতর নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে জনসংযোগ এবং জন পরিষেবা প্রদানের জন্য। এর বাইরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সংস্থা বা পণ্য কেনাবেচার জন্য সাম্প্রতিককালে যেভাবে প্রতিযোগিতা গড়ে উঠছে, তার জন্য ওয়েব ডিজাইনিং-এ দক্ষ কর্মীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে, নিজের সৃজনশীল ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে এক বিশাল পেশার জগতে প্রবেশের জন্য ওয়েব ডিজাইনিং অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করছে এবং আগামী দিনে করবেও।

Latest article