ভূমিকন্যা

মাটির নিচে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের নবীন রূপকার তিনি। পেশা আইনের অধ্যাপনা, নেশা হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের পুনরুদ্ধার। তিনি হলেন ঝাড়গ্রামের ভূমিকন্যা সুস্মিতা হালদার। বগড়ী বিদ্রোহ খ্যাত ঐতিহাসিক গড়বেতার মর্যাদা আদায়ের জন্য লড়ছেন। গবেষণা করছেন এবং লিখেছেন গবেষণালব্ধ বইও। কথা বলে বিস্তারিত জানালেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

সমাজনীতি, রাজনীতি, ধর্মনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে তীব্র প্যাশনকে সঙ্গে নিয়ে কিছু করে দেখানোর উত্তরণে সফল এক নারী সুস্মিতা হালদার। বয়স তিরিশের কোটা পেরোয়নি কিন্তু ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি খবর ছাপা হয়ে গেছে তাঁকে নিয়ে। পেশায় আইনের অধ্যাপক আর নেশা হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের পুনরুদ্ধার। কর্মক্ষেত্র ঐতিহাসিক বাংলার বিপ্লবী পটভূমি। সেই পটভূমিকে তিনি খানিক গুলে খেয়েছেন বলা চলে।

আরও পড়ুন-খেজুরিতে সোমবার সভা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজের বিষয়ে বাইরের আগ্রহ তো অনেকেরই থাকে কিন্তু তা বেশিরভাগেরই জীবনে অধরা স্বপ্ন হয়েই রয়ে যায়। কিন্তু সুস্মিতার ক্ষুরধার মেধা আর মনন সেই অধরা স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার হয়েছে। একসঙ্গে অনেককিছু তাঁকে ম্যানেজ করতে শিখিয়েছে অনায়াসে। একাধারে তাই আইনের অধ্যাপক। আবার অন্যদিকে ইতিহাসের গবেষক। তাঁর লেখা বইও সেই ইতিহাস নিয়েই। ভাবতে একটু অবাক লাগলেও এটাই সত্য।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার যখন পুব আর পশ্চিমের অস্তিত্ব ছিল না সেই সময় ঝাড়গ্রামে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। জঙ্গলমহলের বাসিন্দা সুস্মিতা অরণ্যভূমের মাটির এতটা কাছাকাছি বলেই হয়তো তাঁর ভাবনার ক্ষেত্র এতটা বিস্তৃত, বিশাল। ঝাড়গ্রামের বাছুরডোবায় স্কুলগণ্ডি পেরিয়েছেন সুস্মিতা। বারো ক্লাসের পর বাবার বদলির সুবাদে পাকাপাকিভাবে এখন কল্যাণীতে। ঝাড়গ্রামের সারদাপীঠ স্কুলের ঠিক পিছন থেকেই কলাবনীর জঙ্গলের শুরু। ২০০৭ কি ২০০৮ সালের অস্থির পরিস্থিতির সময় অনেক কিছু সাক্ষী থেকেছেন। কখনও স্কুলের সামনে গাছ ফেলে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হত স্কুল। মাঝে মধ্যে স্কুল না যেতে পারাটাই ছিল যেন আম ঘটনা। আলাদা করে সেই চাপানউতোর তাঁর মনে দাগ কাটেনি বড় একটা। কিন্তু ইতিহাসের প্রতি, ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি একটা সুগভীর টান ছিল বরাবর। পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস পড়তে একঘেয়ে লাগত না কখনও। সেই ইতিহাস চর্চাই একটা সময় নেশা হয়ে উঠল তাঁর।

আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীর অসভ্যতা, অমর্ত্য বিদেশে তবু দেখা করার নোটিশ

আর সেই টানে একটা সময় হাজির হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা মঙ্গলাপোঁতার রাজভূমিতে। বিপ্লবের মাটি এই গড়বেতা, যার প্রামাণ্য ইতিহাস থাকলেও সেই ইতিহাসের চর্চা নেই, নেই কোনও আলাদা স্বীকৃতি। এখান থেকেই সুস্মিতা এক অন্য কর্মযজ্ঞে শামিল।
একদিকে আইনের শিক্ষকতা, অন্যদিকে মাটির তলায় চাপা পড়ে যাওয়া ইতিহাসের প্রতি টান এবং গবেষণা। দ্বিমুখী এই ভাললাগা, পেশা এবং প্যাশন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। গড়বেতা রাজবাড়িকে হেরিটেজ করা তাঁর এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। কবে থেকে এর শুরু এই প্রসঙ্গে সুস্মিতা বললেন, ‘‘স্কুলে ইতিহাস পড়তে খুব ভাল লাগত। কিন্তু গবেষণার বিষয় নিয়ে তখনও কোনও চিন্তাভাবনা ছিল না। আমার ঠাকুরদা ছিলেন আইনজীবী। তাই বাবার স্বপ্ন ছিল আইন পড়ানোর। আমিও তাই এলএলবি করি। ল’ পড়তে গেলে পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং ইতিহাস দুটোরই কিছু কিছু ভাগ দেখতে হয়। সেই স্টাডির সময় দেশভাগের ইতিহাসের প্রতি একটা টান অনুভব করি। তখন থেকেই দেশভাগের ইতিহাস নিয়ে কাজ শুরু করি। ধীরে ধীরে হেরিটেজ বা আঞ্চলিক ইতিহাসের প্রতি একটা ঝোঁক তৈরি হয়। যদিও সেই কাজটা এখনও শেষ হয়নি।”

আরও পড়ুন-জি-২০ তে গুরুত্ব বাংলার কৃষ্টিকে

কিন্তু একজন এলএলবির ছাত্রী অন্য বিষয়ের ওপর গবেষণা করবে এটা একটু অসম্ভব ছিল। তবু ল’-এর ফাইনাল ইয়ারের সময় গবেষণা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সুস্মিতা এবং এলএলএম করার কথা ভাবেন। কিন্তু ল’ নিয়ে পাঁচবছর কমপ্লিট করার পর যেহেতু এটি ইন্টিগ্রেটেড কোর্স সেহেতু হিস্ট্রি বা সোশ্যাল সায়েন্স ইত্যাদি বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সরকারি গ্রান্ট পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব ছিল। বিশেষ করে ফিল্ডে নেমে কেউ কাজ করতে চাইলে সরকারি বা বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে একটা সাপোর্ট লাগে। তখন খোঁজ শুরু করেন। অবশেষে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট বা এনবিটি-র থেকে রিসার্চ গ্রান্ট পান আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপর কাজ করার জন্য। গবেষণার সুযোগ মিলে যায়।

আরও পড়ুন-“মহানায়ক আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন”

এনবিটি-র ফান্ডিং যে বিষয়গুলির উপর ছিল তা হল ভারতীয় আঞ্চলিক ইতিহাসে যাঁদের কথা এখনও উঠে আসেনি আড়ালেই রয়ে গেছেন তাঁরা। সেইসব অগোচরে থাকা নায়ক বা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট রয়েছে এমন সব জায়গা যার কথা ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায় না। সুস্মিতার গবেষণার বিষয় ব্রিটিশবিরোধী কৃষকবিপ্লব, যা আজও আঞ্চলিক ইতিহাস হয়েই রয়ে গিয়েছে। প্রাচীন বগড়ী পরগনা তাঁর গবেষণার প্রাণভূমি। যা বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ব্লক এক, দুই এবং তিন এবং তার আশপাশের কিছু অংশ বলে পরিচিত। এই বগড়ী পরগনাতে ১৮০০ শতক মতান্তরে ১৮০৪ কি ১৮০৬ থেকেই শুরু হয়েছিল একটি আঞ্চলিক বিদ্রোহ যা ইংরেজদের নথিপত্র অনুযায়ী চুয়ার বিদ্রোহ নামে পরিচিত কিন্তু ইতিহাসের পাতায় যার নাম লায়েক বা নায়েক বিদ্রোহ।

আরও পড়ুন-ভিডিও ফাঁস, গেরুয়া বাহিনীর হাতে রিভলভার ও তরোয়াল

কী এই লায়েক বা নায়েক বিদ্রোহ তা নিয়ে সুস্মিতাই আলোকপাত করলেন, তাঁর কথায়, ‘‘১৭৬০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার পায়। সেই সময় প্রথমে তিনটে চাকলা বিভাগের রাজস্ব আদায়ের অধিকার পান তাঁরা। যে তিনটে হল মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং চট্টগ্রাম। অধিকার পেয়েই তারা যেন তেন প্রকারেণ রাজস্ব আদায় শুরু করে। স্থানীয়দের উপর শুরু হয় অত্যাচার এবং উৎপীড়ন। বগড়ী পরগনার যাঁরা বাসিন্দা, তাঁরা একযোগে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। রাজার বাইরে আর কাউকে রাজস্ব দেবেন না বলে পণ করেন। এরপর বিদেশিরা জোর-জবরদস্তি রাজস্ব আদায় করতে চাইলে এঁরাই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহই প্রথমদিকে ‘বগড়ী বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত হয়, পরে এটাই লায়েক বা নায়েক বিদ্রোহ বলে আঞ্চলিক ইতিহাসে স্থান পায়।”

আরও পড়ুন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই অনুমতি ছাড়া প্ররোচনার মিছিল

সুস্মিতা মনে করেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কিন্তু কোনও বিরাট আয়োজন করে শুরু হয়নি। ইংরেজরা একদিনে গোটা দেশ দখল করেননি। একটু একটু করে এগিয়েছিল। ফলে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে ছোট ছোট প্রতিবাদ আঞ্চলিক বিদ্রোহগুলোই ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার। এই যুদ্ধগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামেই পরিণত হয়েছিল কারণ ব্রিটিশরা এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে রাজাদের অপসারিত করে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করে। এক-এক করে দখল করতে থাকে সব জায়গা।”
রাজস্ব না দেবার কারণে একটা সময় এই বগড়ী পরগনাও নিলামে চলে যায়। তখন ব্রিটিশরা এই গড়বেতা মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ির বর্তমান পূর্বপুরুষদের সিংহাসনচ্যুত করে। ফলে সেখানে বিদ্রোহ শুরু হয়। প্রথম চুয়ার বিদ্রোহ আর দ্বিতীয় চুয়ার বিদ্রোহে উঠে আসে কর্ণগড়ের রানি শিরোমণির নাম, এরপর বগড়ী বিদ্রোহে গোবর্ধন দিকপতি এবং লায়েক বিদ্রোহে নেতৃত্ব অচল সিংহের নাম পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় জমিদার ছত্র সিংহের নামও।

আরও পড়ুন-ক্রনোলজি বুঝিয়ে অভিষেক বললেন, দিল্লিতে ‘শাহি’ সাক্ষাতেই তৈরি অশান্তির ব্লুপ্রিন্ট

সুস্মিতার আক্ষেপ, ‘‘এদেরকে কেউ সেই অর্থে বিপ্লবী বা স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে মান্যতা দেয়নি আমাদের ইতিহাসে। ওদের ক্ষেত্রে বিপ্লব কথাটাও প্রযোজ্য ছিল না। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এরা কোনও স্থানই পায়নি। কারণ এদের কর্মকাণ্ড আঞ্চলিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার যে ইংরেজরা একদিনে পুরো দেশ দখল করেনি। ছোট ছোট জায়গা দখল করেছে ফলে যে জায়গা তারা দখল করতে গেছে সেখানকার মানুষ বিদ্রোহ করেছে তাই এই ছোট ছোট বিদ্রোহগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বগড়ী পরগনাকে স্বাধীন করতে এঁরা যা করেছিলেন তার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এঁদের গুরুত্ব খর্ব করার নয়।”

আরও পড়ুন-গিল ধামাকায় হার্দিকদের জয়

ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক অসন্তোষের অন্যতম স্থান গড়বেতা এবং লায়েক বিদ্রোহ। অধরা এক জাতীয় ইতিহাস। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়। স্থানীয়দের মুখে মুখে এই গল্প ফিরলে অধিকাংশই জনশ্রুতি ছাড়া আর কিছু নয়। সেই অধরা ইতিহাসকে তুলে আনতেই সুস্মিতার গবেষণা। ফিল্ড ওয়ার্কের সময় বগড়ী পরগনা বিদ্রোহ নিয়ে প্রচুর নথি হাতে পাওয়ার পর তিনি দেখেন স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ইতিহাসে এঁদের কোনও স্থানই হয়নি। আঞ্চলিক ইতিহাসে থাকলেও তা খুব বেশি নয়। এই গবেষণা করতে করতেই মঙ্গলাপোঁতা রাজবাড়ির কথা, গড়বেতার ইতিহাস নিয়ে নাড়াঘাঁটা। যেখান থেকেই জানা যায় প্রথমে গড়বেতায় একটা রাজবাড়ি ছিল। পরবর্তীকালে যাদবচন্দ্রর সিংহ তাঁর সময় গড়বেতা ছেড়ে পাকাপাকিভাবে চলে যান মঙ্গলাপোঁতায়। সেখানেই বসবাস শুরু করেন। কিন্তু গড়বেতার এই রাজবাড়িটা ঠিক কোথায় এটা আজ আর বোঝার উপায় নেই। গড়বেতার এক সুবিশাল ইতিহাস যা আজও মাটির তলাতেই চাপা পড়ে আছে। সেই মাটি চাপা সত্যকে তুলে আনবার দায়িত্ব নিয়েছেন সুস্মিতা হালদার।

আরও পড়ুন-দুশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ, জীবনদায়ী ওষুধের দাম একলাফে বাড়ছে ১২ শতাংশ

সুস্মিতার কিছু দাবি
তিনি চাইছেন খননকার্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংস্কার এবং সংরক্ষণ। গড়বেতা এবং মঙ্গলাপোঁতায় রয়েছে বহু প্রাচীন নিদর্শনও। মঙ্গলাপোঁতা রাজবাড়ির বর্তমান উত্তরাধিকারীরাও বা সদস্যরাও চাইছেন যদি এটাকে হেরিটেজের মর্যাদা দেওয়া যায়। সেইসঙ্গে এলাকাবাসী চায় হেরিটেজ ঘোষিত হোক পুরনো মন্দিরটিও। কারণ এখন আর এই রাজবাড়ির বা তার আশপাশের অংশগুলো কেউ ঠিকমতো দেখভাল করতে পারছেন না। অবহেলিত হচ্ছে এইসব প্রাচীন নিদর্শন। বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে।
এই নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সুস্মিতা আবেদনও জানিয়েছেন নচেৎ হয়তো হারিয়ে যাবে গড়বেতার সুদীর্ঘ ইতিহাস।
সেই সঙ্গে তিনি চেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য। কারণ এমন অনেককিছু নিদর্শন যা হয়তো মাটি খুঁড়লে পাওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ সুস্মিতা বললেন, যেমন গড়বেতা রাজবাড়ির একটি প্রাচীর ছিল সেটি এখন অদৃশ্য। বিশেষ বিশেষ স্থান চিহ্নিত করে খনন করলে সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচ থেকে পাওয়া যাবে বলেই সুস্মিতার বিশ্বাস।

আরও পড়ুন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই অনুমতি ছাড়া প্ররোচনার মিছিল

আর চেয়েছেন হেরিটেজ সার্কিট মানচিত্রে স্থান পাক এই অঞ্চল।
সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রয়েছে জীর্ণ মন্দির বাড়ি, সুড়ঙ্গ এবং ধ্বংসস্তূপ। তিনি চান ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এবং রাজ্য হেরিটেজ কমিশন খাতায়-কলমে মর্যাদা দিক।
ইতিমধ্যেই একাধিক জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিক সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
সুস্মিতা যে গ্রন্থটি লিখেছেন তার নাম ‘লায়েক গাঁথার নায়ক খোঁজে’। এই বইটিতে গড়বেতার প্রথমদিকের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে সঙ্গে গড়বেতা রাজপরিবারের ইতিহাসের কথাও রয়েছে। এরপর তাঁর ইচ্ছে রয়েছে আরও গভীরে যাওয়ার। কারণ, সবটা এক বইতে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে ২০১৭ সালে সুস্মিতার একটি বই ছাপা হয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ভবনে ইতিহাসের পাতায় অগোচরে থাকা ঐতিহাসিক বিপ্লবের নায়কদের নিয়ে একটি ডিজিটাল মিউজিয়াম তৈরি কথা কানে আসার পর তিনি চাইছেন এই বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস বা সুপ্রাচীন ঐতিহ্য গাঁথাও যাতে ওই মিউজিয়ামে স্থান পায়।

আরও পড়ুন-‘মোদি হটাও, দেশ বাঁচাও’ পোস্টার এবার গুজরাতেই

সুস্মিতার আগামী পরিকল্পনা গবেষণার কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এর জন্য তিনি চান রাজ্য সরকারের তরফে সাহায্য পেতে। পাশাপাশি বইটির আরও একটি খণ্ড বের করা তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য।
সুস্মিতা বলেন, ‘‘রাজ্য পর্যটন মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহের পীঠস্থান গড়বেতা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ড্রিম প্রোজেক্ট গড়বেতায় পর্যটনকেন্দ্র। এই পর্যটনকেন্দ্রের সামান্য দুরেই রয়েছে ঐতিহাসিক একাধিক স্থাপত্য। খাতায়-কলমে সমগ্র এলাকাটিকে হেরিটেজ জোন হিসেবে মান্যতা দেওয়া হলে এবং হেরিটেজ সার্কিটে এই অঞ্চল স্থান পেলে রাজ্যের মুকুটে যুক্ত হবে আরও একটি নতুন পালক।

আরও পড়ুন-রামনবমীতে অশান্তির জন্য দায়ী বিজেপি, কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

এই গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আরও একটি বড় দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা হল আইন পড়ানো। সুস্মিতা এই মুহূর্তে হুগলির সরকারি ল’ কলেজ গভর্নমেন্ট সেন্টার অফ লিগাল এডুকেশনে রয়েছেন। পড়ানোর পাশাপাশি আবার ল’ নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার আবেদন জানিয়েছেন। ক্রিমিনাল ল’-এর একটি ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করতে চান, পাশাপাশি ইতিহাসের গবেষণাও চালিয়ে যাবেন। পড়ানোর ফাঁকে একটু বেশি ছুটি পেলেই ভালবাসার টানে চলে যান গড়বেতায়। আরও দুটি বইয়ের কাজ শেষ করেছেন সুস্মিতা।

Latest article