যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম তার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটা হেরিডিটি বা জিনগত কারণ। দেখা যায় মা হয়তো ওই বয়সে এমনই রোগা ছিল। এটা আরও বোঝা যায় নিউট্রিজেনমিক্সের মাধ্যমে। এটা নিউট্রিশনের সঙ্গে জেনেটিক্সের কম্বিনেশনে একটা কোর্স হয়, যার মাধ্যমে জানা যায় যে আমাদের জিন ঠিক কী রকম অর্থাৎ কোন খাবার খেলে শরীরে তার কী প্রভাব পড়বে, কী কী রোগ ইতিমধ্যেই রয়েছে শরীরে যেটার জন্য কী ধরনের খাবার খেলে সেই রোগ প্রতিরোধ হবে।
আরও পড়ুন-অপব্যবহারের অভিযোগ
দ্বিতীয় কারণ হল বেসাল মেটাবলিক রেট বা বিএমআর। বাংলায় বলতে গেলে বিপাক হার বা বিপাকীয় ক্রিয়ার হার। অর্থাৎ খাবার পর শরীরে গিয়ে সেই খাদ্যের শরীরে পাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি কোনও ব্যঘাত ঘটে তাহলে তখন তাকে বলে মেটাবলিজমের ঘাটতি। তখন ম্যালনিউট্রিশনের শিকার হয় ব্যক্তি। এর ফলে কখনও মানুষ মোটা হয়ে যায় আবার কখনও রোগা হয়ে যায়। সেই কারণেই কারও খুব কম খেলেও গায়ে লেগে যায় আবার কারও বেশি খেলেও গায় লাগে না। এই মেটাবলিজমকে বাড়াতে হলে দরকার ঠিকঠাক ডায়েট।
আরও পড়ুন-ফারুকের বিরুদ্ধে চার্জশিট
ঠিক খাবার সময়মতো খেতে হবে। এর মধ্যেও যাঁদের লিভার দুর্বল অর্থাৎ খাদ্যের যে অংশ লিভারে পরিপাক হয় তা দুর্বল লিভারের জন্য ঠিকমতো সম্পন্ন হয় না। ফলে হজমের গোলমাল, গ্যাস, অ্যাসিডিটির দেখা দেয়। বিশেষ করে যাঁরা সকালে জলখাবার খায় না। অনেকক্ষণ খালি পেট থাকে তাঁদের গ্যাসট্রিক আলসার হয় এতেও খাদ্য পরিপাকে ব্যাঘাত ঘটে এবং বিপাকীয় হার কমে যায়। এর ফলে ওজন কমে যায় এবং বাড়তে চায় না। তাই লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতেও জরুরি প্রপার ডায়েট।
তৃতীয় কারণ হল কৃমি। মানবদেহের অন্ত্রে কৃমি রয়েছে। যদি এই কৃমি না থাকত তাহলে খাদ্য পাচিত ঠিকঠাক হত না। কিন্তু সেটা যদি কারও বেড়ে যায় তাহলে খাদ্য অতিরিক্ত পাচিত হয় ফলে যতই খাবার খাক না কেন তার ওজন বাড়বে না। কৃমি খুব বেশি হলে অনেকের অ্যানিমিয়া হয়ে যায় তাই অ্যানিমিয়াও ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকার কারণ।
আরও পড়ুন-মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ক্যাথল্যাবে হচ্ছে আরও আধুনিক
ওজন বাড়াতে হলে সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন প্রতিদিন শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি ক্ষয় হয় তার চেয়ে অন্তত পাঁচশো থেকে সাতশো ক্যালরি বেশি খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার রাখতে হবে। একটা মিলের সঙ্গে আর একটা মিলের অনেকটা গ্যাপ রাখা একেবারেই ঠিক নয়। যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম তাঁদের পুষ্টিকর খাবার বারবার খেতে হবে। অন্তত দিনে তিন থেকে চারঘণ্টা পরপর। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা চলবে না। দিনে আটঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি অর্থাৎ জীবনযাত্রা ঠিক রাখতে হবে।
ঠিকঠাক ডায়েট মানে প্রোটিনের ভাগটা ঠিক রাখতে হবে। রোজ গরম ভাতের সঙ্গে ঘি, সঙ্গে নানারকম সবজি সেদ্ধ যেমন আলু বা কচু সেদ্ধ, পটল, কুমড়ো সেদ্ধ আর ডিম সেদ্ধ খাওয়া যেতে পারে। খিচুড়ি খুব ভাল ওজন বাড়ায়। অনেক সময় দেখা যায় খুব ছোট বাচ্চাদের মায়েরা দুটো বিস্কিট এবং একগ্লাস দুধ খাইয়ে স্কুল পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সকালের খাবার তাঁদের দিতে হবে একটু ভারী প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট যুক্ত যাতে টিফিন ব্রেক পর্যন্ত পেট ভর্তি থাকে। এটা না হলেই দেখা দেবে পুষ্টির ঘাটতি এবং ক্ষুধামান্দ্য। এর ফলে সেই বাচ্চার ওজন কখনওই স্বাভাবিক হবে না, বাড়বে না। তাই অবশ্যই সকালের খাবারটা পেটভরে খেতে হবে। প্রোটিন শেক খুব ভাল। ডায়েটেশিয়ানরা ওজন বাড়াতে প্রোটিন শেক প্রেসক্রাইব করেন। দুধ খুব ভাল সম্পূর্ণ পুষ্টির জন্য। সারাদিনে একবার দুধ খাওয়া ভাল। কিন্তু যাঁরা রোগা তাঁদের বেশিরভাগেরই ওজন না বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে পেটের সমস্যা রয়েছে। প্লেন দুধ সেই সমস্যা বাড়ায় তাই তাঁদের সরাসরি দুধ না দিয়ে পরিবর্তে দই বা ছানা দিন।
আরও পড়ুন-বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা নিয়ে যোগী সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের
আমন্ড বা আখরোট খেতে পারেন। যাঁদের অ্যানিমিয়া রয়েছে তাঁরা দুটো খেজুর এবং চার-পাঁচটা কিশমিশ নিয়মিত খেলে ভাল। কাঁচা হলুদ খাওয়া যেতে পারে রোজ।
রাতে শোবার আগে হলদি টি খেলে হজম ভাল হবে এবং শরীর থেকে টক্সিন বেরোতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি রোগা থেকে স্বাভাবিক ওজনে আসতে গেলে শারীরিক কসরত কিন্তু খুব জরুরি। কিছু কিছু আসন রয়েছে যা বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ভলিবল, সুইমিং ইত্যাদি সব খেলাধুলোর মধ্যে থাকলে খিদে বাড়বে।। আর খেলে ওজনও বাড়বে।
আরও পড়ুন-বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা নিয়ে যোগী সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের
সকাল : একদম ভোরে ডিটক্স জ্যুস নিতে হবে। যেটা মনে করলার জুস, জাম বা কুমড়োর জুস, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার উষ্ণ জলে মিশিয়ে। এই জুস দেহকে টক্সিন মুক্ত করবে। এরপর অবশ্যই কিছুটা সময় শারীরিক কসরত করতে হবে। যোগাসন, এক্সারসাইজ, খেলাধুলো বা ক্যারাটে জাতীয় কিছু করতে হবে। যোগব্যায়ামের পর অল্প পরিমাণে ছোলা বা কাঁচা বাদাম ভেজানো খেতে হবে সামান্য আখের গুড় দিয়ে।
ব্রেকফাস্ট : চিনি ছাড়া দুধ চা এবং দুটো ফাইবার জাতীয় ওটস বা মাল্টিগ্রেন ডাইজেস্টিভ বিস্কিট। চা না খেলে পরিবর্তে দুধ। দুধে সমস্যা থাকলে ছানা বা দই। আটার ব্রেড। মুড়ি বা চিঁড়ে দই বা কর্নফ্লেক্স। হেল্থ ড্রিঙ্কসও খাওয়া যেতে পারে। ওজন বাড়াতে দুটো ডিম সারাদিনে। ডিম সেদ্ধ বা ডিমের পোচ চলতে পারে। যাঁদের ভাত অভ্যেস তাঁরা ভাত আলুসেদ্ধ বা কোনও সবজি সেদ্ধ, ঘি অথবা মাখন দিয়ে খেতে পারেন।
লাঞ্চ : ভাত বা আটার রুটি বা আটা এবং ময়দা মিশিয়ে রুটি। শুধু ময়দার রুটি, লুচি বা পরোটা এড়িয়ে চলুন। আমিষ হলে একটা সবজি, ডাল, মাছ বা চিকেন এবং স্যালাড। নিরামিষ হলে চিকেন বা মাছের পরিবর্তে পনির বা সয়াবিন খেতে হবে। শাক থাকতে পারে তবে গ্যাসট্রিক বা আমাশা জাতীয় সমস্যা থাকলে শাক খাবেন না।
আরও পড়ুন-মেঘালয় ইস্যুতে সংসদে বিক্ষোভে দল
টিফিন : দুপুরে যাঁরা অফিসে বা কলেজে থাকেন তাঁরা আটার রুটি, কাবলি চানার তরকারি, ঘুগনি, সবজি এবং স্যালাড খেতে পারেন। এরপর একটা ফল খেতে পারেন। অন্তত ২০০ গ্রাম সারাদিনে দরকার। পেয়ারা, পাকা পেঁপে সবচেয়ে ভাল খাওয়া। বেরি জাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে।
স্ন্যাক : চা অথবা কোনও হেল্থ ড্রিঙ্ক। ছোলাসেদ্ধ বা আলু সেদ্ধ দিয়ে মুড়ি। ভুট্টা সেদ্ধ, ছোলা সেদ্ধ, পনিরের ছোট ছোট টুকরো, মাশরুম, স্প্রাউটেড মুগ মিশিয়ে একটা স্যালাডের মতো করে খাওয়া যেতে পারে। এটা খুব হাই প্রোটিনযুক্ত একটি স্যালাড। শরীরের শক্তিবৃদ্ধি হবে, ওজন বাড়বে। মাখানা (শোলার বলে মতো দেখতে, অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন) একটু ঘিয়ে ভেজে খেলে ওজন বাড়বে। মাখানার সঙ্গে ড্রাই ফ্রুট মিশিয়ে লাড্ডু করে খেলে খুব স্বাস্থ্যকর।
আরও পড়ুন-ওষুধের অভাবে শ্রীলঙ্কার হাসপাতালে বন্ধ হল রোগী ভর্তি
ডিনার : ভাত বা রুটি ডাল, চিকেন বা মাছ সঙ্গে সবজি। চিকেন স্ট্যু খাওয়া যেতে পারে। রাতের খাবারটা একটু যেন হালকা হয়। এতে হজমশক্তি বাড়বে, খাবার গায়ে লাগবে। সারাদিন যাঁরা কোনও হেল্থ ড্রিঙ্ক খাচ্ছেন না রাতে শোবার আগে প্রোটিন শেক খেতে পারেন। এটা খুব কার্যকরী ওজন বৃদ্ধিতে। যাঁদের মাঝেমধ্যেই পেটের সমস্যা হয়, পেটরোগা বা ফ্যাটিলিভার রয়েছে তাঁরা রাতে শোবার আগে হলদি টি এক কাপ নিয়মিত খেয়ে শুতে গেলে খুব উপকার পাবেন।