ঐতিহাসিকদের মতে ঊনবিংশ শতাব্দীর নব জাগরণ নারী জাগরণেরই সমার্থক। বলা হয়, সে ছিল নারীজাতির অন্ধকারময় যুগ।অশিক্ষা, অধীনতাও অত্যাচারে কিন্ন নারীজাতির মানসিক জগৎ। যে দেশে গার্গী-মৈত্রেয়ীর মতো ব্রহ্মজ্ঞ নারীর জন্ম। যে দেশে খনার বচন এখনও লোকের মুখে মুখে ফেরে, সেই দেশের মেয়েদের বোঝানো হয়েছিল, বইয়ের পাতা উল্টালে বিধবা হতে হয়। শিক্ষা কেবল দূরে সরে যায়নি, তার সঙ্গে দূরে গিয়েছে স্বাধীনতা। ছয় বছর বয়সে বিবাহিত নারীর জীবনে কত যে মোড় তা বিধাতাই জানেন। বাল্যবিবাহের সঙ্গে ছিল অকালবৈধব্যের যন্ত্রণাময় অস্তিত্ব। কৌলিন্যপ্রথার প্রয়োগ নারীকে সমাজের পুতুল বানিয়েছিল। যা ধর্ম নয় তাকে ধর্মীয় আখ্যায় বিভূষিত করার চরম মূল্য দিতে হয়েছিল নারী সমাজকে।
আরও পড়ুন-মহাশিবরাত্রি
এরই মধ্যে সমাজ এগিয়ে চলেছিল, যদিও ইতিহাসের ভাষায় সে ছিল ভারতীয় নারীর বিরলতম অন্ধকারময় যুগ তবু আমরা শ্রীরামকৃষ্ণ পরিমণ্ডলে আলোচিত নারী চরিত্রগুলির মধ্যে অন্ধকারের মাঝে আলোর স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাই। আলোর মতো জ্বলে থাকা কিছু নারীর উদাহরণ পাই। এ-ছিল ফল্গুধারার মতো। সমাজের গভীরে বহমান সংস্কৃতির স্রোত। এই নারীদের জীবন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্য পূর্ণ। এঁদের মধ্যে অগ্রগণ্যা হলেন রানি রাসমণি। ত্যাগে, তেজে, শিক্ষা, সহবতে, শাসনে, সম্ভাষণে যাঁর তুলনা মেলা ভার।
আরও পড়ুন-ক্ষুদ্রশিল্প-রাস্তা-জলপ্রকল্প-চাষে নজর, বাঁকুড়ায় তোপ মুখ্যমন্ত্রীর
অত্যন্ত সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসেছিলেন রাসমণি। ১২০০ সাল, ১১ আশ্বিন হালিশহরের কাছে কোনা গ্রামে এক মাহিষ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রানি রাসমণি। পিতার নাম হরেকৃষ্ণ দাস, মা রামপ্রিয়া দেবী। হালিশহর বা প্রাচীন কুমারহট্ট অঞ্চল শক্তিসাধক রামপ্রসাদের জন্মস্থল হলেও তা কিন্তু বৈষ্ণবতীর্থ। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের গুরু ঈশ্বরপুরীর জন্মস্থল এই হালিশহর। মহাপ্রভু এখানে এসে উল্লাসে কীর্তন করেছিলেন। রাসমণির পিতা হরেকৃষ্ণ বৈষ্ণব। নিজ ধর্মের প্রতি অত্যন্ত অনুগত। দুই পুত্রের পর রাসমণির মতো কন্যা লাভ করে হরেকৃষ্ণ ও রামপ্রিয়ার আনন্দ আর ধরে না। কন্যা অপূর্ব দর্শনা, রূপবতী। রানির মতো দেখতে বলে রামপ্রিয়া কন্যার নাম রাখেন রানি।
মাতৃপ্রদত্ত নাম রাসমণির জীবনে সত্য হয়ে ওঠে। আশৈশব তিনি ধর্মপ্রাণা ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর কথা উল্লেখকালে বলতেন, রানি মা দুর্গার অষ্টসখীর একজন। কিন্তু রানি রাসমণির মাতা রামপ্রিয়ার অনুভব ছিল অন্যরকম। রাসমণির যখন দেড় বছর বয়স তখন একদিন রামপ্রিয়া স্বপ্নে দেখলেন, বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা চলছে। গোপীরা শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রকে ঘিরে নৃত্য করছেন। কৃষ্ণের কালো রূপের সঙ্গে যেন আলোর বিজলী খেলে যাচ্ছে। এমন সময় সেই গোপীমণ্ডল থেকে একটি মেয়ে নাচতে নাচতে এসে রামপ্রিয়ার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মেয়েটি ঝাঁপিয়ে পড়া মাত্রই নিদ্রাভঙ্গ হল রামপ্রিয়ার। জেগে উঠে সেই স্বপ্নকে আর ভুলতে চাইলেন না, উপরন্তু তাঁর মনে হল সেই গোপীকন্যাই তাঁর মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই তিনি রানির নাম রাখলেন রাসমণি।
আরও পড়ুন-সমবায় ভোটে জিতল তৃণমূল
পিতা হরেকৃষ্ণ দরিদ্র হলেও কন্যাকে নানা শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছিলেন। তিনি নিজে ছিলেন রামভক্ত বৈষ্ণব। কন্যাকে শিখিয়েছিলেন, বিপদে পড়লে রামনাম করতে হয়। রামনামে বিপদমুক্তি ঘটে। আবার সেই সঙ্গে রাসমণি পিতার কাছে শ্রীকৃষ্ণের লীলা কাহিনিতে সমৃদ্ধ ভাগবতপুরাণ ও অন্যান্য পুরাণাদি পাঠ শুনেছিলেন। রাসমণি পিতার কথামতো রামনামে তন্ময় হয়ে এক বন্ধুকে মৃত্যুশয্যা থেকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। আবার তাঁর জীবনে ভাগবতও এক বিশেষ তাত্পর্য বহন করত। ভাগবত শুনতে শুনতে এত তন্ময় হয়ে যেতেন যে দুই চোখের জলে বস্ত্র সিক্ত হয়ে যেত। রামপ্রিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন তাঁর কন্যার অপূর্ব রূপ। তিলকে চন্দনে চর্চিত উন্নত নাসিকা, ছোট্ট কপাল বেয়ে কেশরাশি যেন ধরিত্রীকে ছুঁতে চায়। এ কন্যা যে রাজরানি হওয়ার উপযুক্ত। তাই রামপ্রিয়া আদর করে কন্যাকে বলতেন, ‘তুই রাজরানি হবি মা!’ মায়ের কথা রানির জীবনে সত্য হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আরেকটি কাহিনিও মনোজ্ঞ। একদিন সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতে খেলতে রাসমণি একটি যজ্ঞডুমুর গাছে ফুল দেখতে পান, তিনি সেই ফুল তাঁর বন্ধুদের বারংবার দেখাতে চাইলেও তিনি ছাড়া আর কেউ সেই ফুল দেখতে পাননি। এই ঘটনায় আশ্চর্য হয়ে রানি তাঁর মা রামপ্রিয়াকে বললেন, ‘আমি দেখতে পেলুম সেই ফুল অন্যে কেন দেখতে পেল না?’ রামপ্রিয়া উত্তর দেন, ‘কথায় বলে যজ্ঞডুমুরের ফুল দেখলে রানি হয়। তুমিও মা রানি হবে।’ আমরা জন্মগ্রহণ করি বিধাতা নির্দিষ্ট কিছু কর্মসম্পাদনের জন্য। যে কর্ম আমাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকে তা আপনা থেকেই আমাদের কাছে ধরা দেয়। রানি রাসমণির জন্মও তত্কালের নারী সমাজে একটি দৃষ্টান্ত রাখার জন্য, যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণের সাধন পীঠ প্রস্তুতের জন্য। যে সাধনপীঠে বসে তিনি নারীমুক্তির বিশেষ পথকে তুলে ধরবেন মানুষের কাছে। সেই ইঙ্গিত কিন্তু রাসমণির জীবনে প্রথম লগ্ন থেকেই ধ্বনিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন-বাংলার মুকুটে নয়া পালক, এবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে একাধিক কেন্দ্রীয় পুরস্কার
রানি রাসমণি যখন একাদশ বছরের বালিকা তখন গঙ্গার ঘাটে তাঁর অসামান্য রূপে দেখে মুগ্ধ হন বাবু রাজচন্দ্র দাস। তাঁর পিতা প্রীতিরাম দাস নিজের অধ্যবসায়ে কলকাতায় বিরাট জমিদারির পত্তন করেছিলেন। বিবাহের পর রানির সামাজিক উত্তরণ ঘটেছিল দরিদ্র কৃষক কন্যা থেকে তিনি রানি হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দুটি সামাজিক অবস্থানেই তিনি ছিলেন স্বচ্ছন্দবিহারী। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা তাঁকে দারিদ্র্যে কিন্ন করেনি ধনলাভেও উন্মত্ত করেনি। শারিরীক পরিশ্রম গুরুজনের সেবা এবং দেবসেবায় নিজেকে প্রাচীন ভারতের বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ নারী করে গড়ে তুলেছিল। বিবাহের শুভ লগ্নে রাজবাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন এক সন্ন্যাসী তিনি একটি রঘুবীর শিলা রানিকে দান করেন। সেই রঘুবীর শিলাই নিত্যসেবা পেতে থাকেন রানির অন্দরমহলে।
আরও পড়ুন-সন্ত্রাস-রক্তে ত্রিপুরার ভোট
যে বাঙলার সমাজে শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, গাণপত্যের মধ্যে বিরাট ব্যবধান ছিল। সেই সমাজেই কিন্তু রানি রাসমণি ছিলেন একাধারে বৈষ্ণব অন্যদিকে শাক্ত। আবার তার কাশীযাত্রার সুতীব্র বাসনা তাঁকে শৈব ধারণা অভিমুখী করে তুলেছিল। হিন্দু ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন ধারার মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করা রানির চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়েই তিনি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এক উঠোনের মধ্যে বৈষ্ণব শাক্ত, শৈবধারার পত্তন করেছিলেন। দ্বাদশ শিব, ভবতারিণী ও রাধাগোবিন্দ একই মন্দিরে নিজ ছন্দে লীলাবিহার করেছিলেন। তত্কালে একজন নারীর পক্ষে এই ধারাকে বাস্তবায়িত করা সত্যই আশ্চর্যজনক। তিনি কেবল মন্দির তৈরি করেননি, তিনি গঠন করেছিলেন এক দেবালয়। এক আশ্চর্য দেবভূমি যেখানে সাধু, সন্ন্যাসী, ভক্ত, সকলের আনন্দস্থল হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন-আজ বাঁকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা
দূর-দূর থেকে সন্ন্যাসীগণ এই মন্দিরে ভিক্ষা নিতে ও কিছুদিন বিশ্রাম গ্রহণ করতে উপস্থিত হতেন। ঊনবিংশ শতকের ধর্মজগতে এক আলোড়ন, এক নতুন ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করার ভিত্তিভূমি তৈরি করেছিলেন রানি রাসমণি। তিনি কেবল মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী হননি। তিনি দেববিগ্রহকে অন্ন নিবেদন করতে চেয়েছিলেন। এই চাওয়া যে কত বড় বিপ্লব তা আমরা বর্তমান সমাজে বসে বুঝতে পারব না। যেখানে কোনও ব্রাহ্মণ মাহিষ্যের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে অন্নভোগ উৎসর্গ করবেন না। সেখানে কিন্তু তিনি শাস্ত্রীয় মতে অন্নভোগের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে কামারপুকুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে পরিচয় ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের বা শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দিরে আগমন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সাধনকালে যে আধ্যাত্মিক গবেষণাগারের স্থাপনা করেছিলেন তা ঘটেছিল রানি রাসমণি প্রদত্ত দেবালয়ের পঞ্চবটীতে। ভারতের অধ্যাত্মভাবনায় এই পঞ্চবটীর অবদান কত তা নিয়ে পরবর্তীকালে নিশ্চয়ই গবেষণা হবে। সুতরাং একাধারে ভারতের প্রাচীন ধর্মকে মূর্ত হতে এবং বিশ্বের নবীন ধর্মভাবনা মূর্ত হওয়ার ক্ষেত্রটিকে নির্মাণ করেছিলেন রানি রাসমণি। তবে একথা উল্লেখ্য যে কেবল ধর্ম জগতে নয়, সামাজিক বহু ক্ষেত্রেও তীক্ষ্ণ ছুরির ফলার মতো তেজে মহিমায় ঝলসে উঠেছিলেন রানি রাসমণি।
আরও পড়ুন-দেউচার কাজ হচ্ছে পুরোদমে : প্রশাসন
রানি রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস অসাধারণ মানুষ ছিলেন। মানুষকে সাহায্য করার জন্য উদগ্রীব থাকতেন। তিনি রানির প্রেরণায় বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন। কিন্তু বেশিদিন রাজচন্দ্র জীবিত ছিলেন না। তাঁর দেহত্যাগের পর রানি একাকী হলেন ঠিকই কিন্তু তখন তাঁর তেজের স্ফুরণ লোকগোচর হল। বাবু রাজচন্দ্রের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা কর্জ নিয়েছিলেন এক বিখ্যাত মানুষ। বন্ধু বলে পরিচিত জমিদার রাজচন্দ্রের মৃত্যুর পর রানির সঙ্গে দেখা করে বললেন, ‘দেখুন, বাবু রাজচন্দ্র যে বিপুল সম্পত্তি রেখে গিয়েছেন তা রক্ষণাবেক্ষণ করা বেশ কঠিন। আপনি মেয়েমানুষ হয়ে এই কাজ করতে পারবেন না। আমি আপনার ম্যানেজার পদে নিযুক্ত হতে পারি। যদি অনুমতি করেন।’ রানি এ কথা শুনে বললেন, ‘বেশ তো আপনার মতো বিখ্যাত মানুষ যদি ম্যানেজার হন আমার অনেক সুবিধে হবে। আমি এখনও সমস্ত কাগজপত্র দেখে উঠতে পারিনি। তবে শুনেছিলাম আমার স্বামী আপনার কাছে দুই লক্ষ টাকা পেতেন। অসময়ে যদি সে টাকা ফেরত দেন তো উপকার হয়।’ একথা শুনে সেই ব্যক্তি ম্যানেজারি পাওয়ার লোভে সেই ঋণ শোধ করতে উদগ্রীব হলেন। কিন্তু তখন এত অর্থ তাঁর হাতে না থাকায় ঋণ শোধ করার জন্য তাঁর রংপুর ও দিনাজপুরের জমিদারিটি রানিকে দিলেন। সম্পত্তির হস্তান্তর হয়ে গেলে সেই ব্যক্তি আবার রানির দর্শনার্থী হয়ে উপস্থিত। এবার রানি দেখা তো করলেনই না উপরন্তু বলে পাঠালেন, ‘আমি বিধবা মেয়েছেলে কিন্তু আমার জামাইরা উপযুক্ত এবং সব বিষয়ে দেখাশুনা করতে সক্ষম। আপনার মতো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে ম্যানেজার করার স্পর্ধা আমার নেই।’ এই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিটি হলেন বাবু দ্বারকানাথ ঠাকুর। রানি রাসমণি কেবল ব্রাহ্মণদের নয়, তিনি তত্কালের বাবুসমাজের, নবগঠিত ধনী সমাজেরও অপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তাঁর অসাধারণ সত্যপ্রিয়তার জন্য। তিনি এক মশাল ছিলেন, যে মশাল জ্বলে উঠেছিল সাধারণ মানুষের জন্য, সত্যিকারের ধর্মবোধের জন্য এবং তত্কালের নারীদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবার জন্য।
আরও পড়ুন-মহিলাদের ক্ষমতায়নে বাংলা বিশ্বে ১ নম্বর: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রানি রাসমণি পরাধীন ভারতের নারী ছিলেন। কিন্তু পরাধীন ছিলেন না কারোর কাছে এমনকী ব্রিটিশদের কাছেও নয়। ব্রিটিশরা রানির বুদ্ধিকে, সাহসকে সমীহ করে চলতেন। নানা সময় তিনি ব্রিটিশের অত্যাচারের মোকাবিলা করেছেন। এ ক্ষেত্রে রানি রাসমণি ছিলেন নাটোরের রানি ভবানী ও মেদিনীপুরের কর্ণগড় অঞ্চলের রানি শিরোমণির উত্তরসূরি। রানি ভবানী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একাকী বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। রানি শিরোমণির চুয়াড় আন্দোলন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক সংঘটিত আন্দোলন ছিল। রানি রাসমণি তাঁর সমসাময়িক এই দুই রানির যথার্থ উত্তরসূরি ছিলেন। তাঁর জীবনই ছিল এক যুগ-আন্দোলনের পূর্বক্ষণ। তাই যুগ-আন্দোলনের নিরিখে তাঁর জীবন বিশ্লেষিত হওয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। তাঁর জীবন তখন আন্দোলিত হয়েছিল যখন তাবৎ বিশ্বের নারী সমাজ নতুন কিছু লাভ করার জন্য, নতুন আলোকে অগ্রসর হওয়ার জন্য নতুন পথে চলার চেষ্টা করছে। রানি রাসমণি ছিলেন নবালোকে সমৃদ্ধ নবপথের পথিক ও দিশারি। আজকের দিনেও তিনি আমাদের প্রেরণা হয়ে বিরাজিত।