চারিদিকে কতকিছুই না ঘটে চলেছে। বিদ্বেষের বিষে ঢাকছে আকাশ-বাতাস। বিবস্ত্র নারীর অসম্মানে ধুলোয় লুটোচ্ছে দেশের সম্মান।
কিন্তু ক্যামেরার লেন্সে সেসব কিছুই ধরা পড়ছে না। বিষাদ বাজার পত্রিকার দোসর যে টিভি চ্যানেলটি, সেটির সান্ধ্য মজলিসে নিত্য আলোচ্য তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়। সেখানে রোজ মুণ্ডপাত চলছে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের। অথচ সেই ক্যামেরার লেন্সে, সেই টক শো-এর আলোচনায় মণিপুর থাকে না।
আরও পড়ুন-ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি আবেদন, শিল্পের সমাধান দারুণ সাড়া
কোন মণিপুর?
যে মণিপুরের ডবল ইঞ্জিন সরকার বিবস্ত্র শীর্ষ আদালতের এজলাসে। যে মণিপুর সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার বলেছে, মণিপুরে মহিলাদের ওপর হিংসার ঘটনা ‘নজিরবিহীন’, ওই বর্বরতা কোনও কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়।
তাও কেন বিষণ্ণ বাজারে কুমন নরেন্দ্র মোদির মতোই নীরব?
কারণ, ভারতের বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যমের সত্যাসত্য বিচার ক্ষমতা বেবাক লোপ পেয়েছে, মোদিজির জমানায়।
আরও পড়ুন-জমিজট কাটিয়ে শুরু হয়ে গেল প্রায় ৪ কোটির সরকারি প্রকল্প, চার মাসেই চালু হবে নতুন দমকল কেন্দ্র
লোকনীতি – সিএসডিএস-এর রিপোর্ট ‘মিডিয়া ইন ইন্ডিয়া : ট্রেন্ডস অ্যান্ড প্যাটার্নস’ স্পষ্ট দেখাচ্ছে, কর্মরত সাংবাদিকদের ৮২ শতাংশ মনে করেন, তাঁরা যে যে সংস্থায় কর্মরত, সেগুলি ভারতীয় জঞ্জাল পার্টির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। সোজা কথায়, গোদি মিডিয়া। ইংরেজি মাধ্যমের মিডিয়ার ৮০ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, সংবাদমাধ্যম বিজেপির হয়ে কাজ করছে। ৮০ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, তাঁদের সংস্থাগুলি মোদির প্রতি ‘অতিরিক্ত আনুগত্য’ প্রদর্শন করছে। আর ৬১ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, তাঁদের সংস্থাগুলি বিরোধী দলগুলির প্রতি ‘অতিরিক্ত বৈরিতা’ প্রদর্শন করছে। ১৬ শতাংশ সাংবাদিক জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক লাইন মানতে না চাওয়ায় তাঁদের কাজ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করতে চেয়েছিলেন। সেটাই তাঁদের দোষ। ৭২ শতাংশ সাংবাদিক মনে করছেন নিউজ চ্যানেলগুলো এখন আর আগের মতো স্বাধীনতা ভোগ করে না। প্রিন্ট মিডিয়ার ৫৫ শতাংশ সাংবাদিক মনে করছেন, কাজের জায়গায় তাঁদের স্বাধীনতা ক্রমশ কমছে।
এককথায়, গোদি মিডিয়ার সুবাদে ভারতের সংবাদমাধ্যমে এখন অন্ধকারের প্রসৃতি সহজেই অনুভববেদ্য হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন-এনবিএসটিসির কর্মীদের ভাতাবৃদ্ধি
শুধু মণিপুর নয়। গোষ্ঠী সংঘর্ষে দীর্ণ হরিয়ানার নুহ। নাসির-জুনেইদকে গাড়ির ভিতর জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বঘোষিত গোরক্ষক বজরং দলের নেতা মনু মানেসরের উসকানিতে দাঙ্গা ছড়িয়েছে সেখানে। ব্রজ মণ্ডল জলাভিষেক যাত্রার সময় গাড়ি ভাঙচুর, গুলি ছোঁড়া ইত্যাদি হয়। ভিড়ের মধ্যে থেকে ছোঁড়া গুলিতে মারা যান দু’জন হোমগার্ড। হিন্দুদের শোভাযাত্রা আক্রান্ত, এই গুজব ছড়িয়ে পড়া মাত্র গুরগাঁওয়ের সোহনা, পলওয়াল ও ফরিদাবাদে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে তাঁদের বাড়িঘর, যানবাহন জ্বালানো শুরু হয়। হরিয়ানার পুলিশের খাতায় অভিযুক্ত স্বঘোষিত গোরক্ষক ফেরার। অথচ তার মদতেই কীভাবে দাঙ্গা বাধল ও ছড়াল, সে বিষয়ে চারদিকে আশ্চর্য নীরবতা।
আরও পড়ুন-এনবিএসটিসির কর্মীদের ভাতাবৃদ্ধি
শুধু মণিপুর কিংবা হরিয়ানা নয়, রাস্তাঘাটেও নয়, ট্রেনের কামরাতেও হিংসা। জাতিগত বিদ্বেষের বুলেট। আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিং, মহারাষ্ট্রের পালঘর স্টেশনের কাছে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে বেছে বেছে তিনজন সংখ্যালঘুকে খুন করেছে। উত্তরপ্রদেশের হাথরসের বাসিন্দা, চেতন সিংয়ের সাফ বক্তব্য, হিন্দুস্তান মেঁ রহেনা হ্যায় তো মোদি, যোগী কো ভোট দেনা হোগা। চলন্ত ট্রেনের মধ্যে আরপিএফ-এর একজন কনস্টেবলের গুলিতে চারজনের মৃত্যু বুঝিয়ে দেয়, মোদিজির সৌজন্যে দেশের জনমানসে বিকৃত ধর্মান্ধতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এসবের সঙ্গে জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের শাসানি তো আছেই।
আরও পড়ুন-ভাঙল রায়মঙ্গলের বাঁধ, নদীগর্ভে রাস্তা, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রশাসন
এমন ভারতই তো গড়তে চান মোদিজি।
আর, এমন ভারত ভেঙে সংবিধানসম্মত সুন্দর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পুনরুদ্ধারে ব্রতী INDIA।
ভারত বাঁচানোর স্বার্থে ২০২৪-এ INDIA-কে জয়যুক্ত করুন।
এ কাজ আমাদের করতেই হবে।