বেশ কিছুদিন ধরে ভারতীয় রাজনীতির দুটি জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা হল অপব্যবস্থা আর আরেকটি হল ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকার তার কেন্দ্রীয় এজেন্সি দ্বারা সারা ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গে একটি অপব্যবস্থার আবহাওয়া তৈরি করেছে আর তৃণমূল কংগ্রেস তথা আমাদের নির্ভীক প্রধান সৈনিক মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে কীরকমভাবে প্রতিবাদ করতে হয় বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে দেখাতে হয় তা প্রমাণ করেছেন। সেটাই হল ব্যবস্থা। তাই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে যতই অপব্যবস্থার সৃষ্টি করুক না কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতাদি ঠিক তার ব্যবস্থা করে ছেড়ে দিচ্ছেন এবং দেবেন।
আরও পড়ুন-মঙ্গলবার থেকে বিশ্ব-বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন, নিউটাউন চত্বরে কড়া নিরাপত্তা
সমস্ত শাস্ত্রের সমালোচনার ক্ষেত্রে মূল কথা হল যারা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে তাদের পিছনে অকেজো মানুষগুলো বেশি সমালোচনা করে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও সেই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। গত পাঁচ মাসে যতবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি ডেকেছে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসে প্রবেশ করেছেন এবং বুক চিতিয়ে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে বাইরে এসেছেন আর ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসারদের যেমন মাথাগুলো হেঁট হয়ে গেছে ঠিক সেই একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর নেতা-নেতৃত্বদের মাথাও হেঁট করিয়ে দিয়েছেন। আফ্রিকার একটি দেশ সিয়ারও লিওন যার প্রেসিডেন্টের নাম টেলর। তাঁকেও বিরোধীরা নানাভাবেই সমালোচনা কুসমালোচনায় নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। সেই সঙ্গে সমস্ত পত্রপত্রিকা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রচার করতে শুরু করল। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা গেল ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। তিনি প্রথম থেকেই মানুষের জন্য কাজ করে এসেছেন।
আরও পড়ুন-বিশাখাপত্তনম বন্দরে আগুনে ভস্মীভূত ৩৫টি মাছ ধরার নৌকা, কয়েক কোটির ক্ষতি আশঙ্কা
নবজোয়ার থেকে শুরু করে নানারকম সামাজিক প্রকল্প দ্বারা মানুষের কল্যাণ এবং প্রান্তিক মানুষের সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন চালানোর জন্য সদা তৎপর। কেন্দ্রীয় সরকারের অনৈতিকভাবে টাকা আটকে রাখার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামাটা তৃণমূল কর্মীদের যেমন মনের শক্তি বাড়াচ্ছে ঠিক একইভাবে বিরোধীদের মনের অশান্তি আরও বেশি বাড়িয়ে তুলেছে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার দেখতাম, বিভিন্ন চ্যানেলে যেদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ডেকে পাঠাত ঠিক তার আগের দিন সব দলের ব্যক্তিদের বলতে শুনেছি— এবারেই কিন্তু অভিষেক আর বার হতে পারবে না আর ঠিক প্রতিবারই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজে সাংবাদিকদের সামনে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তাতে সাধারণ মানুষ থেকে বিজ্ঞরাও বুঝে গেছেন যে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে কারও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এত স্বাভাবিক সুন্দর ও গঠনমূলক হতে পারে না। আবার দেখলাম প্রথম কয়েকবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কালো জামা পরে কেন্দ্রীয় এজেন্সির দপ্তরে গিয়েছিলেন তখন অনেকে বলতে শুরু করল যে কালো জামাটার মধ্যে পয়াজাতীয় কিছু আছে এবং কয়েকজন সাংবাদিককেও ওই কালো জামা নিয়ে প্রশ্ন করতে শোনা গেছে। এবং অদ্ভুতভাবে কিছুদিন আগে যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির দপ্তর থেকে বেরিয়ে এলেন এক ঘণ্টা পরে, তখন তিনি কিন্তু কালো জামা পরেননি, একটি সাদা জামা পরে গিয়েছিলেন। যারা জামা নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিল তাদের মুখে জামা ঘষে দিয়েছেন ওই দিন। আসলে তৃণমূল কংগ্রেস সবসময়ের জন্য কালকে কালো দেখে এসেছে এবং সাদাকে সাদা। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাই করেছেন। তাই কখনও তিনি কালো জামা পরেছেন আবার কখনও সাদা জামা পরেছেন আবার যদি ডাকেন আবার তিনি অন্য কোনও রংয়ের জামা পরে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন-আলোর পাশেও এবার থিমে চমক জগদ্ধাত্রীর
আসল ব্যাপারটা হল বিরোধীদের কোনও কিছু বলার নেই। যখন কিছু তারা বলছে সেগুলো মানুষ অন্তর থেকে মেনে নিচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত তারা কালো জামা নিয়ে বেশি চিল্লামিল্লি শুরু করেছিল। বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা শুনছি, সমস্ত বিরোধী দল ভাইজানকে ডায়মন্ড হারবারে এক জোট করে প্রার্থী করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ ডায়মন্ড হারবারে তিনটি বিধানসভা এলাকায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মুসলমান মানুষের বাস। তাই ফাঁকা বুকে সিপিএম, কংগ্রেস এবং অর্ধ ফাঁকা বুকে বিজেপিও আশার আলো দেখতে নাকি শুরু করেছে যে, ওখানে নওশাদ সিদ্দিকি সংখ্যালঘু ভোট পেয়ে অভিষেক ব্যানার্জিকে পিছনে ফেলতে পারেন। আসলে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা খুব ভালভাবেই ভাইজানের চরিত্র বুঝে গিয়েছে। কারণ যখন ভাঙড়ে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এলেন তখন ভাঙড়ের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্যে এই ভাইজান বলেছিলেন যে এবার থেকে তোমরা আর হাতে বোমা-বাজি পেট্রোল-বোমা নিয়ে ঘুরবে না।
আরও পড়ুন-চেয়েছিলাম কাপ হাতে নিক দ্রাবিড়
আমি যখন এসেছি তোমরা আমাদের ভোট দাও তাহলে দেখবে তোমাদের হাতে বই-খাতা-পেন আমি এনে দেব। এবং তোমরা সঠিক সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করবে। ভাঙড়ের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য মানুষের মতো সঠিক সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করছে মমতাদির শাসনব্যবস্থায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, নির্বাচনে জেতার পরে দেখা গেল সেই সমস্ত শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের হাতে খাতা-পেন ধরানো তো দূরের কথা তাদের হাতে আরও বেশি বেশি করে অস্ত্র-বোমা-বন্দুক ধরাতে শুরু করালেন নওশাদ সিদ্দিকি। সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের মধ্যে আগে কোনও অশান্তি ছিল না।
আরও পড়ুন-এই হার হজম করা কঠিন : শামি
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনওদিন দাঙ্গা বিবাদে তারা জড়ায়নি কিন্তু এই সিদ্দিকি এসে সংখ্যালঘুদের মধ্যে সামান্য দ্বন্দ্বটাকে এক ঘরোয়া দাঙ্গায় পরিণত করতে শুরু করল। যেটা আমরা ভাঙড়ের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করতে পেরেছি। শিক্ষাদীক্ষার পরিবর্তে তাদের হাতে এমনভাবে অস্ত্র ধরানোর কৌশল করল যে তারা নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের উপর হামলা করতে শুরু করল। এবং সেটা রাজ্যের সমস্ত মানুষ স্বচক্ষে দেখেছেন কীভাবে সেখানে সিদ্দিকির লাঠি তৃণমূল কংগ্রেসের নিরীহ খালি হাতে থাকা ব্যক্তিদের উপরে অত্যাচার করেছে। আর তারপর থেকে সারা পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সভ্যতার মানুষ বুঝে গেছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া আর কারও আশ্রয়ে তাঁরা থাকতে চান না এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সমস্ত মানুষের মধ্যে এক অভিষেক-আবেগ কাজ করে আসছে বহুদিন ধরে।
আরও পড়ুন-ছাড়পত্র পেলেই বেঙ্গল সাফারিতে আসবে জোড়া সিংহ
সেখানে খেলামেলা সামাজিক প্রকল্প গায়ে গা দিয়ে, হাতে হাত ধরে চলার অঙ্গীকার করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সুতরাং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যদি ডায়মন্ড হারবারে এই ভাইজান নতুন রবিনহুড হতে চান তাহলে কিছুদিনের মধ্যে সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুঝে যাবে আইএসএফ দলটার চরিত্র এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে যাওয়ার পরিকল্পনা করার জন্য ডায়মন্ড হারবারে ভোটে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছে। যে কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে বলছিলাম, সেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির তিনজনকে দেখা গেছে রাজস্থানে ঘুষ নিতে এবং সারা ভারতবর্ষে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজও পর্যন্ত মোট তিন হাজারের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি রেড করেছে বিরোধীদের বাড়িতে বা অফিসে বা অন্য কোথাও এবং মোট ১২৫টির মতো মামলা করেছে যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা ছিল ও আছে। কিন্তু এখনও কোনও মামলার অগ্রগতি মহামান্য আদালত দেখতে পাচ্ছেন না বলে বারবার আদালতে ঘাড়ধাক্কা দিচ্ছেন এবং আবার অন্যায় স্বীকার করে ফিরে আসছে। যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগাযোগ থাকত তাহলে পাঁচবার ডাকার কোনও প্রয়োজন ছিল না একবার বা দুবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির সম্মুখীন হলেই তাঁরা অবশ্যই বুঝে যেতেন যে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এবং তর্কের খাতিরে আমরা বলতে পারি আর যে-সমস্ত তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি গ্রেফতার করেছিল তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু বারবার অফিসে ডাকার পর। এবং তাহলে এটা খুব গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে বারবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তাদের অফিসে ডাকছে কিন্তু কোনও কিছু পাবে না সেটা অনেক আগে জেনেই গেছে। তবুও ডাকছে সেই জন্য যে, তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করা ও তাঁর পরিবারের সবাইকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দেওয়া। যাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও সামাজিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত না হতে পারেন বা মানুষের মাঝে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে কোনও কিছু বলতে না পারে। আর কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে প্রতিক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্য করেছি একটি নির্দিষ্ট পার্টির হয়ে কাজ করে আসছে। যে দলটি পশ্চিমবঙ্গে দিনের পর দিন ক্ষয় হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন-পূর্বিতায় তিন ঘণ্টা জেরা প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎকে
পশ্চিমবঙ্গের মাটি তাদের কাছে এখন অমঙ্গলের মাটি হয়ে গিয়েছে তাই তাদের ৭৭ জন এমএলএ ক্ষয় হয়ে হয়ে এখন ৬৯ জনে। আসলে বিজেপি বোঝাতে চাইছে যে, দেখো পশ্চিমবঙ্গে আমি কেমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাস্তানাবুদ করছি। কিন্তু এর ফল যে উল্টো হতে শুরু করেছে সেটা আমরা কয়েক মাস আগের উপনির্বাচন ধূপগুড়িতে বুঝতে পেরেছি। যারা রাজনৈতিকভাবে লড়তে পারছে না তারা অরাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে আর তার ফল হাতে হাতে পেয়েছে ধূপগুড়িতে। যেখানে তাদের জেতা আসনটা আমরা খুব সহজে ছিনিয়ে নিতে পেরেছি এবং এই বিজেপির পাশে যারা আকার-ইঙ্গিতে সাহায্য করছে সেই সিপিএম কংগ্রেসের ভোটবাক্স কিন্তু ধূপগুড়িতে আগেও যা ছিল আর বর্তমান নির্বাচনেও ঠিক একই আছে। এটাই প্রমাণ করে দেয় যে, যতই কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি ইচ্ছাকৃতভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের উপর জুলুম করবে তত জুলুমবাজ পার্টি হিসেবে খ্যাত হয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে এই বিজেপি পার্টি।