রবীন্দ্রনাথের অগ্নিকন্যা

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্যা ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অকুতোভয় নারী কল্পনা দত্ত। তাঁকে নিয়ে লিখছেন কাকলি পাল বিশ্বাস

Must read

পরাধীন ভারতে অনেক বিপ্লবী দলই মেয়েদের দলে নিতে আগ্রহী ছিল না। কারণ সেই সময় বিপ্লবী কাজে প্রতি মুহূর্তেই বিপদ ওত পেতে বসে থাকত। সেই সময় অনেকেই মনে করত মেয়েরা কোমল হৃদয়যুক্ত দরদি হয়ে থাকে আর সে কারণে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বিপ্লব করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। এছাড়াও সে সময় অনেকেই মনে করতেন দলে মেয়ে থাকলে অর্থাৎ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পাশাপাশি কাজ করলে ছেলেদের নৈতিক আদর্শেরও স্খলন ঘটতে পারে। আর এই ধরনের মনোভাবের বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কল্পনা দত্ত। তিনি লিখেছিলেন “It was an iron rule for the revolutionaries that they should keep aloof from the women”. আর তিনি এই কঠোর নিয়মের প্রতিবাদ করে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আরও পড়ুন-ডুরান্ডের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ মুখ্যমন্ত্রীকে, বাড়ছে প্রাইজ মানি

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্যা ছিলেন কল্পনা দত্ত। ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর অঞ্চলের বোয়ালখালি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন বিনোদবিহারী দত্ত আর মা ছিলেন শোভনবালা দত্ত। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ব্যক্তি ডাক্তার দুর্গাদাস দত্ত ছিলেন কল্পনা দত্তর ঠাকুরদা। তাঁর ঠাকুরদাকে ইংরেজ প্রশাসন যথেষ্ট সম্মান দিত আর সেই কারণেই তাঁদের বাড়িটা সব সময় পুলিশের নজরের বাইরে থাকত।

আরও পড়ুন-সুরাইয়া তৈয়াবজি, যাঁর হাত ধরে পূর্ণতা পেয়েছিল জাতীয় পতাকা

ছোটবেলা থেকেই কল্পনা দত্ত ছিলেন অন্যান্য মেয়েদের থেকে আলাদা। তিনি ছিলেন স্বপ্ন বিলাসী, স্বপ্ন দেখতেন সুখী সমৃদ্ধ সমাজের। কৈশোর থেকেই তাঁর মধ্যে স্বদেশি ভাবনা জাগ্রত হতে শুরু করে। তাঁর মনে বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা দিনকে দিন বাড়তে শুরু করে, এই সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের স্বদেশি বই পড়তে শুরু করেন। আর এই সমস্ত স্বদেশি বই পড়তে পড়তেই তাঁর মনে স্বাধীন ভারত গড়ার স্বপ্ন প্রকট হয়।
পড়াশোনায় ভীষণ ভাল ছিলেন কল্পনা দত্ত। চট্টগ্রামের খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন তিনি। সে সময় তিনি মেয়েদের মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে আইএ প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়ার সময় থেকেই কল্পনা দত্ত নানা রকমের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। বেথুন কলেজের সেই সময় গড়ে উঠেছিল ছাত্রী সংঘ, আর কল্পনা বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ছাত্রী সংঘে যোগ দেন। ছাত্রী সংঘের কাজ ছিল বিভিন্ন ধরনের হরতাল করা এবং নানাবিদ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা। সেই সব বৈপ্লবিক কাজে পুরোপুরি ভাবে জড়িয়ে পড়েন কল্পনা দত্ত। লেখাপড়ায় ভাল হওয়ার জন্য তিনি স্কলারশিপ পেতেন। আর বিপ্লবী হিসেবে নিজেকে শক্তপোক্ত বানানোর জন্য সেই স্কলারশিপের টাকায় তিনি একটি সাইকেল কিনেছিলেন। এবং রোজ ভোরবেলা বেথুন কলেজের কম্পাউন্ডের মধ্যেই সাইকেল চালানো শুরু করেন তিনি। এছাড়াও প্রতি রবিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে গিয়ে নৌকা চালানোর অভ্যাস করতেন তিনি।

আরও পড়ুন-বিশ্বজুড়ে এবার বন্ধ জনসন এন্ড জনসন বেবি পাউডার

এই সময়ই চট্টগ্রামের বিপ্লবী নেতা সূর্য সেনের অনুগামী পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সঙ্গে পরিচয় হয় কল্পনার। আর পূর্ণেন্দু দস্তিদার এবং প্রীতিলতার প্রভাবেই তিনি বিপ্লবী দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কল্পনার মতো একজন বিপ্লবীমনস্কা নারীকে পেয়ে তাঁকে সবরকম ভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন পূর্ণেন্দু দস্তিদার। আর পূর্ণেন্দুর মাধ্যমেই মাস্টারদা সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে, কল্পনার। আর এর পরেই কল্পনা মাস্টারদার প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন। সে সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টারদা সূর্য সেন সমস্ত নিয়ম শিথিল করে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সাথে সাথে কল্পনা দত্তকেও তাঁর দলে স্থান দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন-আবার ইডেনে ব্যাট হাতে দেখা যাবে মহারাজকে!

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সারাদেশে আলোড়ন ফেলে দেয়। এই অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরবর্তী সময়কালে বিপ্লবী কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য কল্পনা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এরপরই তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের দায়ে অনন্ত সিংহ গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল সহ অনেক বিপ্লবী নেতা গ্রেফতার হন। আর সূর্য সেন আত্মগোপন করেন। বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায়ের মাধ্যমে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে অনেক কষ্টে সাক্ষাৎ করেন প্রীতিলতা আর কল্পনা। মাস্টারদার কাছে সশস্ত্র বিপ্লবে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হওয়ার কথা বলেন। আর এরপর মাস্টারদা তাঁদের বিপ্লবী দলের শপথবাক্য পাঠ করান।

আরও পড়ুন-এবার গুজরাতে বিধায়কের জামাইয়ের গাড়ির ধাক্কায় নিহত ৬

১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে এক বিশেষ আদালতে লুণ্ঠনে বন্দি বিপ্লবীদের বিচার আরম্ভ হয়। আর সেই সময় মাস্টারদা বন্দি বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য একটি দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি ডিনামাইট ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে বন্দিদের মুক্ত করা এবং আদালত ভবন ধ্বংস করার উদ্যোগ নেন। আর এই ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে কল্পনা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে আসার সময় তিনি কিছু বিস্ফোরক নিজের সাথে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, এছাড়াও দলের সদস্য হওয়ার পর অত্যন্ত মেধাবী এই বিজ্ঞানের ছাত্রীটি নিজের পড়ার ঘরে বসে বোমা বানানোর জন্য গান-কটন তৈরি করা শুরু করেন। আর এই সব বিস্ফোরক কল্পনার মাধ্যমেই জেলের ভেতর গোপনে চলে যেত।

আরও পড়ুন-কাজ না করলে পদ ছেড়ে দিন কড়া বার্তা জেলা সভাপতির

এই ডিনামাইট ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা শেষ অবধি ফাঁস হয়ে যায়। আর ব্রিটিশ সরকারের সন্দেহ তালিকায় উঠে আসে কল্পনার নাম, ফলে তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে তারা। সে সময় শুধুমাত্র চট্টগ্রাম কলেজে গিয়ে বিএসসি পড়ার অনুমতি দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু বুদ্ধিমতী কল্পনা ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে রাতের বেলায় মাস্টারদার সঙ্গে গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন আর বন্দুক চালানো শিখতেন।
এরপরে সংগঠনের পক্ষ থেকে পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের জন্য বেছে নেওয়া হয় কল্পনা দত্ত আর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে। কিন্তু আক্রমণের আগেই কল্পনা যখন পুরুষের ছদ্মবেশে সহকর্মী নির্মল সেনের সঙ্গে মাস্টারদার কাছে দেখা করতে যান, সে সময় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। কিন্তু দু’মাস জেলে থাকার পরে প্রমাণের অভাবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তবুও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ১০৯ ধারায় অর্থাৎ ভবঘুরে বলে মামলা দায়ের করেন। আর পুলিশের সন্দেহ দৃষ্টি এড়াতে তাঁকে আত্মগোপনের নির্দেশ দেন মাস্টারদা সূর্য সেন।

আরও পড়ুন-কাজ না করলে পদ ছেড়ে দিন কড়া বার্তা জেলা সভাপতির

১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সমুদ্র তীরবর্তী গ্রাম গৈরালাতে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে বিপ্লবীদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের সঙ্গী ছিলেন কল্পনা। এই সংঘর্ষে মাস্টারদা ও ব্রজেন সেন ধরা পড়লেও কল্পনা দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার তিন মাস পরে ১৯ মে গৈরালা গ্রামেই আরও একটি সশস্ত্র সংঘর্ষ হয় আর এই সংঘর্ষে কয়েকজন বিপ্লবীর সাথে কল্পনাও গ্রেফতার হন। ওই বছরই ১৪ অগাস্ট একটি বিশেষ আদালতে বিপ্লবীদের বিচার শুরু হয়। এই মামলার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সেকেন্ড সাপ্লিমেন্টারি কেস’। এই মামলার আসামি ছিলেন সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার আর কল্পনা দত্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ, ষড়যন্ত্র, বিস্ফোরক আইন, অস্ত্র আইন, হত্যা প্রভৃতি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। বিচারে সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির আদেশ হয়। আর কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হলেও সেটা পরে স্থগিত হয়ে যায়। মামলায় স্পেশাল ট্রাইবুনাল জজ বলেছিলেন যেহেতু কল্পনা মেয়ে এবং তাঁর বয়স কম, তাই তাঁকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা গেল না।

আরও পড়ুন-দুই নায়কের দৌড়

শাস্তি পাওয়ার পরে কল্পনাকে হিজলি স্পেশাল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর সেখানেই তাঁর হাতে আসে জায়াড, কোল, বানার্ড শ-এর লেখা সোশ্যালিজম, কমিউনিজম সম্বন্ধে কিছু বই। এই বইগুলোর যুক্তিতর্ক তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। আর এই সমাজতন্ত্রবাদ এবং সাম্যবাদই তাঁকে অন্য জগতে নিয়ে যায়।
১৯৩৭ সালে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় বিনা বিচারে রাজবন্দিদের ছেড়ে দেওয়া, রাজনৈতিক বন্দিদের আন্দামান থেকে নিয়ে আসা এবং তাঁদের মুক্তি দেওয়ার দাবিতে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই বছরই নভেম্বর মাসে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্পনার মুক্তির আবেদন জানিয়ে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ১৯৩৯ সালের ১ মে ছাত্র আন্দোলনের চাপে কল্পনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। প্রায় ছয় বছর কারাভোগের পরে ছাড়া পান কল্পনা দত্ত।

আরও পড়ুন-বুমরার চোট নিয়ে চিন্তায় বোর্ড, বিশ্বকাপে বিকল্প ভাবনায় শামি

এরপর তিনি চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং সেখানেই শুরু হয় তাঁর অন্য জীবন। সে সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। আর এই নিষিদ্ধ থাকা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন কল্পনা।
সে সময় তিনি দলের মহিলা আর কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেছিলেন। মালিপাড়া, ধোপাপাড়া, কুলিপাড়া, সাঁওতাল পাড়া, প্রভৃতি জায়গায় গিয়ে গোপনে তাদের সাথে সভা করতেন কল্পনা। তিনি মনে করতেন সাম্যবাদই প্রকৃত দেশপ্রেম। আর সাধারণ জনগণের মনে এই দেশপ্রেম নামক আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার কাজে তিনি নিজেকে সমর্পণ করেন।

আরও পড়ুন-সমালোচনায় কান দিই না : শুভমন

১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে কলকাতা ছেড়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন কল্পনা। ১৯৪৩ সালে বাংলায় ঘটে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। সেই সময় কল্পনার নেতৃত্বে মহিলা সমিতি ক্ষুধাতুর মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং তাদের সেবায় নিযুক্ত হয়। সে বছরই কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ণ সদস্য পদ লাভ করেন কল্পনা। আর বছরের শেষে মুম্বইয়ে একটি সম্মেলনে চট্টগ্রামের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। সেখানেই পরিচয় ঘটে তৎকালীন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক পি.সি. জোশির সঙ্গে। ১৯৪৪ সালে পি.সি জোশির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কল্পনা। বিয়ের পর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে মানুষের জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৪৬ সালে আইনসভার নির্বাচনের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে প্রার্থী ছিলেন কল্পনা দত্ত। আর কংগ্রেস থেকে দাঁড়িয়েছিলেন নেলি সেনগুপ্ত। কল্পনা দত্ত অবশ্য সে সময় বিজয়ী হতে পারেননি।

আরও পড়ুন-সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত

১৯৪৭ সালের পর ভারতে চলে আসেন কল্পনা। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন। পরবর্তীকালে তিনি দিল্লি চলে যান। কল্পনা রুশ এবং চিনা ভাষায় দক্ষ ছিলেন। আর সেই জন্য পরবর্তীকালে দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ-এর সম্পাদক ও শিক্ষিকা হন তিনি। দিল্লি থাকাকালীন তিনি নারী আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল লক্ষণীয়।

আরও পড়ুন-কমলজিৎ ইস্টবেঙ্গলে,সই এক ডিফেন্ডারেরও

ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় সমান পারদর্শী ছিলেন কল্পনা। চল্লিশের দশকে কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন মুখপত্র ছিল ‘পিপলস ওয়ার’। এই মুখপত্রটিতে কল্পনা নিয়মিত তৎকালীন সামাজিক বিষয়ের উপর লিখতেন। তাঁর লেখা ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণকারীদের স্মৃতিকথা’ নামক বইটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরে চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান নামে আরও একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কল্পনা দত্তর লেখাগুলো গবেষকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। মাস্টারদা সূর্য সেনের প্রিয় পাত্রী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্নিকন্যা, বীরাঙ্গনা কল্পনা দত্ত ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত একটি চিরস্মরণীয় নাম।

Latest article