ফ্যাটি লিভার

ফ্যাটি লিভারে এখন বহু মানুষ আক্রান্ত। প্রথমেই ধরা পড়ে না এই রোগের লক্ষণ। ফলে হঠাৎ সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আগে থাকতেই সতর্ক হোন। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন। কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে ফ্যাটি লিভার। কী খাবেন-কী খাবেন না, জানালেন ডায়েটেশিয়ান সৃজিতা মুখোপাধ্যায়। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ফ্যাটি লিভারকে হেপাটিক স্টেটোসিসও বলা হয়। এই রোগে লিভারের কোষের মধ্যে অত্যধিক চর্বি জমে থাকে। ফ্যাটি লিভারের দুটো ভাগ— অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এবং নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। ধরন যেটাই হোক, এর তিনটে ধাপ— গ্রেড ওয়ান, গ্রেড টু এবং গ্রেড থ্রি।
গ্রেড ওয়ান ফ্যাটি লিভারকে সিম্পল স্টেটোসিসও বলে। এরপর হল নন অ্যালকোহলিক স্টেটো হেপাটাইটিস। এর পরের ধাপে আসছে সিরোসিস অফ লিভার, এটাই সিভিয়র বা থার্ড স্টেজ।

আরও পড়ুন-‘কি বিচিত্র এই সিপিএম!’ কেরালার মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা দেবাংশুর

গ্রেড ওয়ান ফ্যাটি লিভারে হালকা প্রদাহ হয়, অল্প চর্বি জমা শুরু হয়। সামান্য দুর্বলতা থাকে। অনেকসময় পেটের ডানদিকের উপরিভাগে ব্যথা হয়। অনেকে এটাকে গ্যাস্ট্রাইটিসের পেন ভেবে ভুল করেন।
গ্রেড টু ফ্যাটি লিভারে মাঝারি চর্বি জমে। এই স্টেজে প্রদাহ বাড়ে, সঙ্গে ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেটে অস্বস্তি, এবং ওজন কমতে থাকে। ত্বক চোখ হলুদ হয়ে যায়।
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণ অতিরিক্ত মদ্যপান, তার সঙ্গে খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ঘুম ঠিকমতো না হওয়া, অ্যাংজাইটি— এগুলোই মুল কারণ।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণ খারাপ খাদ্যাভ্যাস থেকে, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, খাবারে দীর্ঘ গ্যাপ, সময়মতো না খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া ইত্যাদি।

আরও পড়ুন-রাজ্য সঙ্গীত দিয়ে উদ্বোধন হয়ে গেল ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, উদ্বোধন করলেন সলমন খান

কেন হয়
শুধু উল্টোপাল্টা খাবার খেলেই যে ফ্যাটি লিভার হয় এমনটা কিন্তু নয়, এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন অথচ সময় মেনে খাচ্ছেন না, অনেকটা গ্যাপ পড়ে যাচ্ছে অর্থাৎ অনিয়মও কিন্তু ফ্যাটি লিভারের জন্য অনেকাংশেই দায়ী।
জল কম খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, সেই সঙ্গে স্ট্রেস লেভেলটাও কিন্তু দায়ী। কতটা মানসিক চাপ নিয়ে চলছেন একজন ব্যক্তি তার উপরেও ফ্যাটি লিভার হওয়া নির্ভর করে।
শুরুর দিকে ফ্যাটি লিভারের কারণ ভুল লাইফস্টাইল, এক্সারসাইজ না করা, ওয়েট ম্যানেজমেন্টে গোলমাল অর্থাৎ ওজন খুব বেশি হওয়া। একজন মানুষের সারাদিনে দশহাজার স্টেপ হাঁটা প্রয়োজন কিন্তু এতটা বেশিরভাগের পক্ষেই করা সম্ভব না। অনেক ক্ষেত্রে কিছু মেডিকেশনের জন্যও হয়। এছাড়া মেটাবলিজম ঠিক না থাকলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যিনি ডায়াবেটিক, হাই ব্লাডপ্রেশার রয়েছে, দ্রুত ওয়েট লস অর্থাৎ কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাচ্ছে, আবার অনেকেই হয়তো চটজলদি ওজন কমাতে চান। সামনেই বিয়ে, না বুঝেই ডায়েট করছেন। কার্ব কমিয়ে দিলেন দুম করে কিন্তু পরিবর্তে কী খেতে হবে জানেন না। ডায়েট করে ফেলেন কোনও পরামর্শ ছাড়াই, তখন শরীর নিতে পারে না, ফলে ফ্যাটি লিভার হয়।
গ্রেড থ্রি বা একেবারে থার্ড স্টেজ ফ্যাটি লিভার তখনই আসে যখন উপরের দুটো স্টেজকে অবহেলা করা হয়। সতর্ক করা সত্ত্বেও যদি রেস্ট্রিকশন মেনটেন না করে সেক্ষেত্রে বিপদ বাড়তে থাকে এবং সিরোসিসের দিকে গড়ায়। যত সিভিয়র তত পেটে অস্বস্তি, যন্ত্রণা বাড়তে থাকে, ওজন বাড়তে এবং ব্লাড সুগার লেভেল বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন-পরাজয়ের ‘শাস্তি’! ফল প্রকাশের দু’দিনের মধ্যেই রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরতে বলা হল কমলকে

কী করবেন
শরীরে মধ্যে পেটে মেদ জমা সবচেয়ে ক্ষতিকর কিন্তু শুধু পেটের মেদ ঝরানো যায় না, পুরোটাই ঝরাতে হয়। সেটা দরকার অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী।
মদ্যপানের অভ্যেস থাকলে তা সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।
সুগার থাকলে অবশ্যই ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মাঝে মধ্যেই এইচবিএমআরসি এবং লিপিড প্রোফাইল চেক করতে হবে।
অনেকের স্টেজ টুতে বমি বমি ভাব, বমি, জন্ডিস ইত্যাদি ধরা পড়ে। ত্বকে অ্যালার্জি বা চুলকানিও দেখা যায়। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ এবং মেডিকেশন জরুরি।
হেলদি ডায়েট করতে হবে কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিশেষ ধরনের খাবার খেতে হবে। বাড়ির খাবারই খান।
তেল নিয়ে অনেকের কনফিউশন থাকে ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে কোন তেল ভাল। এরকম কিন্তু কোনও রুল নেই যে কোনও একটা নির্দিষ্ট তেল খেলেই আর ফ্যাটি লিভার হবে না। অনেকেই এখন রান্নাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাঁরা অলিভ অয়েলের ব্যবহারটা জানেন না। কষিয়ে মাংস হোক বা ভাজাভুজি, অলিভ অয়েলেই করছেন। এতেও একই রকম ক্ষতি। তাই অলিভ অয়েল স্যালাড ড্রেসিং, শ্যালো ফ্রাই, হালকা সঁতে করে কোনও রান্না বা খুব কম ফুটিয়ে, কষিয়ে রান্নার জন্যই ব্যবহার করা উচিত। রিফাইন্ড অয়েল খাওয়া খারাপ নয় তবে পরিমাণটা খেয়াল রাখতে হবে।
ফ্যাটি লিভার হয়েছে মানেই তিনি ইনভিটেশনে যাবেন না বা মাসের মধ্যে একবারও বাইরে খাবেন না তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে একটু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেদিন বাইরে খাবেন ভেবেছেন সেদিন সকাল থেকে অয়েলি ফুড, ঝালঝোল বা বেশি কার্ব বাদ দিন। পরিবর্তে স্যালাড, স্যুপ, হালকা কিছু খেয়ে থাকুন। এতে সুন্দর ব্যালান্স হয়ে যাবে। মাসে একটা দিন বাইরের খান কিন্তু পরিমাণ বুঝে। ছাঁকা তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে যান।

আরও পড়ুন-শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা হচ্ছে না, আন্দোলনের পথে ব্যবসায়ী সমিতি

ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ অথবা ডিনার বাদে বাদবাকি সময় খিদে পেলে হালকা কিছু খাওয়া যেতে পারে। যেমন মিক্সড সিডস, আমন্ড, ওয়ালনাট, পেস্তা খেতে পারেন, সমস্যা হবে না। দু’চামচ খেলেই যথেষ্ট। খালি পেটে থাকবেন না। বারবার চা বা কফি নয়, এতে ক্ষতি হতে পারে।
ওজন অবশ্যই কমাতে হবে। ব্যায়াম ভীষণ জরুরি, তাই নিদেনপক্ষে তিরিশ মিনিট হাঁটুন, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। হেঁটে যাতায়াত করে কাজকর্ম করুন।
ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লেই
ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে অন্তত ছ’টা মাস রেস্ট্রিকশন মেনটেন করতেই হবেই। আগে নিজেকে একটু স্টেবল পজিশনে নিয়ে এসে তারপর আবার খাওয়া যেতে পারে। এই সময় মিষ্টি পুরো বাদ দিন। তেল মশলা খুব কম খান। ভাজাভুজি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। রেস্তোরাঁর খাবার, জাঙ্ক ফুড খাবেন না। বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারেন একান্ত যদি ইচ্ছে করে। শুকনো মশলা রান্নায় বেশি ব্যবহার করবেন না বা খুব ঝাল খাবেন না। ডিমের সাদা অংশটা খাওয়া যেতে পারে। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবোমিন থাকে যা খুব উপকারী। সপ্তাহে একটা ডিম চলতে পারে। রোজ যাঁরা ডিম খান তাঁরা কুসুমটা বাদ দিয়ে খান। সিরোসিস হয়ে থাকলে ডিম বাদ। ফ্যাটি লিভারের কোনও স্টেজেই মাটন চলবে না। মাখন, চিজ, মেয়োনিজ বাদ দিতে হবে। ঘি চলতে পারে তবে খুব কম এবং ভাল কোয়ালিটির ঘি খেতে হবে। চিকেন খাওয়া যেতে পারে। স্ট্যু হলে ভাল। যতটা সম্ভব প্রেশার কুকারের রান্না করুন। এতে তেল কম লাগবে, হালকা সহজপাচ্য হবে খাবার।

Latest article