সব চক্রান্ত ভেঙে ২০২৪ সালে দিল্লি থেকে তাড়াব বিজেপিকে

Must read

প্রতিবেদন : সব চক্রান্ত ভেঙে ২০২৪-এ দিল্লি থেকে বিজেপিকে তাড়াব। বিজেপির বিরুদ্ধে যখন কেউ লড়তে পারছে না আমরা লড়ব। বাংলাকে ঠিক রেখেই এই লড়াই হবে। সোমবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা মঞ্চ থেকে প্রত্যয়ী ঘোষণা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (BJP- TMC Supremo Mamata Banerjee)। এদিনের সভা থেকে একাধিক ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন নেত্রী। কোটি কোটি টাকা ঢেলে সরকার ভাঙা, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদের হেনস্তা করা এবং ২০২১-এর নির্বাচনে বিপুল জনাদেশ নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসা মা মাটি মানুষের সরকারের বিরুদ্ধে ও দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্রমাগত চক্রান্ত বিজেপির। এদিন এই সবকিছুর বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছেন দলনেত্রী।

লক্ষ্য ২০২৪: ২০২৪-ই যে নেত্রীর পাখির চোখ তা আরও একবার পরিষ্কার হয়ে গেল সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চে তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। যখন ক্রমাগত অন্য দলগুলি দেশে বিজেপির কাছে হারছে তখন বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া একমাত্র রুখে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (BJP- TMC Supremo Mamata Banerjee) নেতৃত্বে। তাই তাঁর আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা, বাংলাকে ঠিক রেখে ২০২৪-এ দিল্লি থেকে বিজেপিকে সরাবে তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রীর কথায়, বিজেপির বিরুদ্ধে যখন কেউ লড়তে পারছে না, তখন আমরাই লড়ব-জিতব।

সরকার ভাঙতে টাকা ঢালছে বিজেপি : অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি দখল করতে চাইছে বিজেপি। তার জন্য যথেচ্ছ টাকা ঢালছে তারা। সোমবার মেয়ো রোডের সভা থেকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, মহারাষ্ট্র সরকার ভাঙতে কত টাকা ঢেলেছে বিজেপি? দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, আপের সরকার ভাঙতে ৮০০ কোটি টাকা নিয়ে নেমেছিল বিজেপি। এরপরই নেত্রীর সংযোজন, ঝাড়খণ্ডের সরকারও ভেঙে দিত। আমরা রুখে দিয়েছি।

পাল্টা অ্যাকশন : দিল্লিতে ডেকে রাজ্য সরকারের অফিসারদের কোনও সমস্যা তৈরি করলে এবার কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব অফিসার বাংলায় আছে তাঁদের বিরুদ্ধেও রাজ্য সরকার প্রয়োজনমতো পদক্ষেপ করবে। হুঁশিয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (BJP- TMC Supremo Mamata Banerjee)। ‌বারবার দিল্লিতে ডেকে রাজ্যের অফিসারদের হেনস্তা করা হলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এসব যে বরদাস্ত করবেন না, এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দুষ্টুদের তালিকা তৈরি হচ্ছে : নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসকে দুর্বল করতে কিংবা রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে যারা কলকাঠি নাড়ছে, যারা বিভীষণের ভূমিকায় নেমেছে, যারা লুকিয়ে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করে দলের নেতা-নেত্রীদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে, সে যে-ই হোক, সবার নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ঠিক সময়মতো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাফ কথা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নেত্রীর কথায়, এভাবে যারা দুষ্টুমি করছে এই তালিকায় তাদের নাম রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সাভারকর স্তুতি করতে গিয়ে গাঁজাখুরি গল্প ফাঁদল বিজেপি, নির্লজ্জ ইতিহাস বিকৃতি কর্নাটক সরকারের

সবাই চোর, বিজেপি সাধু? বিজেপির বাইরে যারা তাদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দিচ্ছে। বাংলায়-বাংলার বাইরে সব জায়গাতেই একই কাজ করছে বিজেপি। এদিন তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, সবাই চোর আর বিজেপি সাধু? নেত্রীর কথায়, ববি চোর, অভিষেক চোর, আমরা সবাই চোর। কে গ্রেফতার হবে আগে থেকে বিজেপির নেতারা বলে দিচ্ছে। কাকে গ্রেফতার করবে, ববিকে? অভিষেক কে? একুশে জুলাই সভার পরেই ২২ তারিখ ইডি পাঠিয়ে দিল। গ্রেফতার করল। আজ এখানে অভিষেক দারুণ বলেছে। দেখা যাবে কাল ওর বাড়িতে আবার নোটিশ পাঠাবে। এবার তো মনে হয় ওর বাচ্চাটার বিরুদ্ধেও নোটিশ পাঠিয়ে দেবে। বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ নেত্রীর।

আইন আইনের পথে চলবে : পার্থ চট্টোপাধ্যায় চুরি করলে আইন তার মতো করে ব্যবস্থা নেবে। কেউ অন্যায় করলে আইন আইনের পথে চলবে, আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথায়, আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম মানুষের সেবা করার জন্য। এখন তো দেখছি মুড়ি-মুড়কি সব এক করে দিয়েছে। পার্থ চ্যাটার্জি দোষ করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনো। ফিরহাদ হাকিম দোষ করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে আনো। এসব করে কোনও লাভ নেই, সাফ কথা দলনেত্রীর। ইডি সিবিআইয়ের প্ল্যানিং হল ববি-অভিষেক সবাইকে গ্রেফতার করবে। আমাকে আটকে দেখুক না কী হয়। আমি জেলে থাকলেও জেল ফুটো করে বেরিয়ে আসব। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলা : একজন বলল আমার বিরুদ্ধে নাকি কোর্টে মামলা করেছে সম্পত্তি বৃদ্ধির। শুনে রাখুন, আমি সাংসদ হিসেবে এক লক্ষ টাকা করে পেনশন পাই, ১২ বছর ধরে সেটা নিইনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সব মিলিয়ে অন্তত তিন লক্ষ টাকা মাসে পাই, সেটাও নিই না। সরকারের গাড়িও চড়ি না খুব দরকার না পড়লে। যে বাড়িটায় থাকি, ওটা আমার নয়। ওটা ঠিকা স্বত্ব, আমি প্রজা। এগুলো সব রানি রাসমণির জায়গা ছিল। সম্পত্তি বৃদ্ধির মামলায় সপাট উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পরিবারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নেত্রী বলেন, আমাদের ভাই-বোনেদের পরিবার সব আলাদা। যে যার মতো থাকে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়, কথা হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়। এর বাইরে কারও সঙ্গে কারও কোনও যোগাযোগ নেই। ফলে সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে হাইকোর্ট আমাদের বিরুদ্ধে বলে কোনও লাভ নেই। পরিষ্কার বক্তব্য নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

বিষয় চাকরি : গত ১১ বছরে আমাদের সরকারের আমলে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৭০ জনকে চাকরি দিয়েছি আমরা। ক’টা কমপ্লেন হয়েছে? প্রশ্ন নেত্রীর। ২০০-২৫০ হবে। তাও বলেছিলাম করে দেব। কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি হয়, তা শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিতে হয়। আমরা সে সুযোগ পাইনি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি প্রসঙ্গে বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, সিপিএমের আমলে কত চাকরি হয়েছে? তার নথি কোথায়? তোমরা পয়সা নিয়েছ আর চাকরি দিয়েছ। এখন সব সাধু হয়ে গেছ।
বিদেশে টাকা পার্ক করছে বিজেপি : ১০০ দিনের কাজ-সহ রাজ্যের পাওনাগণ্ডা নিয়ে এদিন আবারও সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রাজ্যের পাওনা- জনগণের টাকা দিচ্ছে না, গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা দিচ্ছে না। ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু ইডি-সিবিআই করছে। নেত্রীর অভিযোগ, বিজেপির ঘনিষ্ঠ লোকজন সব টাকা বিদেশে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে পার্ক করছে টাকা। বিজেপি টাকা বাইরে পার্ক করছে। এসবের উত্তর চাই। বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

রাজ্য সরকারের সাফল্য : মেয়ো রোডের সভা থেকে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একবার মনে করিয়ে দেন তাঁর সরকারের আমলে একাধিক স্কুল-কলেজ-নার্সিং ট্রেনিং কলেজ-আইটিআই— সব হয়েছে। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে সবমিলিয়ে ১৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। দেশে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বাড়লেও এ রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে।
মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ হোক : কোনও একটা ঘটনা ঘটলেই মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়ে যাচ্ছে, আক্ষেপ নেত্রীর। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, বিজেপি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে, কিনে নিচ্ছে, তাদের কথা শুনে মিডিয়াকে চলতে হচ্ছে। তবে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কোনও দোষ নেই, তারা চাকরি করে। এরপরেই ক্ষোভের সঙ্গে নেত্রী বলেন, এখন সিপিএম বড় বড় কথা বলছে, বিজেপি বড় বড় কথা বলছে, চোর বলছে। আমি যদি চেয়ারটায় না থাকতাম, রাজনীতি না করতাম তাহলে ওদের জিভটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতাম।
৪৮ ঘণ্টার অবস্থান বিক্ষোভ : বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের ছেড়ে দেওয়া ও বাগদায় বিএসএফ জওয়ানদের হাতে এক তরুণীর গণধর্ষণের প্রতিবাদে দলকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান বিক্ষোভ করার নির্দেশ দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার মেয়ো রোডের সভা থেকেই দলের মহিলা নেতৃত্বকে এই নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ হবে।
বৈদিক বিলাস : ২ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে বৈদিক ভিলেজে বিজেপির চিন্তন শিবির করা নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এটা কিসের মন্থন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে? এরপরই নেত্রীর সংযোজন ২০২১-এ নির্বাচনের আগে তো এখানকার বিভিন্ন হোটেলে যা হয়েছে সব আমাদের কাছে খবর আছে, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেগুলো সামনে আনিনি।

অহংকারের পতন হবেই : ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীকেও হারতে হয়েছিল। এই সময়ের কথা মনে করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিজেপিও যাবে আর ২০২৪-এই বিজেপি দেশ থেকে বিদায় নেবে।

Latest article