হকির অ্যাস্ট্রোটার্ফ থেকে স্পোর্টস ভিলেজ, স্বপ্নপূরণের পথে মুখ্যমন্ত্রী

বাংলায় খেলাধুলোর জোয়ার এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ১৬ অগাস্ট ‘খেলা হবে দিবস’ সাড়া ফেলেছে রাজ্যে। রাজ্য সরকারের অ্যাকাডেমিগুলি থেকে প্রতিভার খোঁজ শুরু হয়েছে। নজর বাংলার হকিতেও। প্রতিবেদন চিত্তরঞ্জন খাঁড়ার।

Must read

চেষ্টা শুরু হয়েছিল অনেক আগে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে অ্যাস্ট্রোটার্ফের মাঠ পেতে চলেছে বাংলার হকি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে সল্টলেক স্টেডিয়াম সংলগ্ন জায়গায় বসে যাবে কৃত্রিম গাসের মাঠ। অলিম্পিয়ান গুরবক্স সিং, কেশব দত্ত, লেসলি ক্লডিয়াসরা বহু আগে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের হাত ধরে তা বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই প্রকল্পের কাজ শেষ করব। চেষ্টা করব আগামী এক বছরের মধ্যে সল্টলেকের জমিতে অ্যাস্ট্রোটার্ফ বসানোর কাজ শেষ করতে। আমাদের আশা, পরের বছর বেটন কাপ প্রতিযোগিতা নতুন টার্ফের মাঠে করতে।’’

আরও পড়ুন-নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি দুই অভিযুক্তর পুলিশ হেফাজত, গর্জে উঠল বাংলা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব চান গ্রামবাসীরা

সল্টলেকের হকি মাঠকে স্টেডিয়ামের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবে সরকার। সংলগ্ন প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের পাশাপাশি আরও কিছু পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও থাকবে। শুধু হকি নয়, বাংলায় অলিম্পিক স্পোর্টসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এ রাজ্যে খেলাধুলোর জোয়ার এসেছে। ক্রীড়ামন্ত্রীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ এবং অনুপ্রেরণায় জেলায় জেলায় খেলাধুলোর প্রসার ঘটছে। বাংলা থেকে প্রতিভা তুলে আনতে রাজ্য সরকারের অ্যাকাডেমিগুলিও তৎপর। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ফুটবল, টেবল টেনিস অ্যাকাডেমি, আর্চারি, সুইমিং অ্যাকাডেমি থেকে ভবিষ্যতের তারকারা উঠে আসবে বলে মনে করি।’’ অন্য সবকিছুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী খেলাধুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ছোট-বড় সমস্ত ক্লাবগুলির পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার। ক্লাবগুলির আর্থিক বুনিয়াদ মজবুত হলেই খেলাধুলোর জন্য পরিকাঠামোর উন্নতি সম্ভব। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্লাবগুলিকে প্রতি বছর আর্থিক সাহায্য করছে। তাতে নিজেদের বাজেট বাড়াতে পারছে প্রতিটি ক্লাব। এছাড়াও এবার ১৬ অগাস্ট খেলা হবে দিবস পালনের জন্য আইএফএ অনুমোদিত ৩০৮টি ক্লাবকে ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে রাজ্য সরকার।

আরও পড়ুন-চার প্রশ্ন তৃণমূলের, নির্যাতিতার কাছে আজ প্রতিনিধি দল, প্রতিবাদ সভাও

তিন প্রধান-সহ ময়দানের তথাকথিত ছোট ক্লাবের কর্তারাও উচ্ছ্বসিত সরকার খেলাধুলোর উন্নতিতে এগিয়ে আসায়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা। টালিগঞ্জ কর্তা শুভঙ্কর ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমরা ছোট ক্লাব। বড় ক্লাবের মতো বাজেট নেই আমাদের। এই সরকার যেভাবে ছোট ক্লাবগুলিরও পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করছে তা ভাবা যায় না। আগের সরকার কোনওদিন এসব ভাবেইনি। কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই মুখ্যমন্ত্রীকে। এমন ক্রীড়াপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী আমরা আগে দেখিনি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় মুগ্ধ তিন প্রধানের কর্তারাও। ক’দিন আগেই শতাব্দীপ্রাচীন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডান ক্লাবকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কয়েকদিন পরই দুই বড় ক্লাবে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে দুই প্রধানকে ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আরও ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান ঘোষণা করেন তিনি।

আরও পড়ুন-রাস্তায় বিজেপির কোন্দল, বখরা নিয়ে মারামারি

এমনকী ইস্টবেঙ্গলের সংগ্রহশালা উদ্বোধনে গিয়ে মহামেডান স্পোর্টিংকেও ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েক বছরে তিন প্রধানে যে পরিকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে তার কৃতিত্ব বর্তমান রাজ্য সরকারের। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর। তাই মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। ওঁর সাহায্য ছাড়া মোহনবাগান মাঠ, তাঁবু সংস্কারের যে কর্মকাণ্ড তা সফল হত না। উনি পাশে ছিলেন বলেই আমরা ঐতিহ্যে ভরসা রেখে ক্লাবের পরিকাঠামোয় আধুনিকতা আনতে পেরেছি। এভাবেই উনি আমাদের পাশে থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।’’ ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না। উনি এভাবে পাশে থাকলে আমাদের কাছে কোনও বাধাই বাধা নয়।’’ মহামেডান সচিব দানিশ ইকবালের কথায়, ‘‘আমরা ভাগ্যবান এমন মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছি। আরও কিছু পরিকল্পনা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে আসায় তার বাজেট নিয়েও আমাদের ভাবতে হল না।’’

আরও পড়ুন-বিশ্বকাপের পর ফের মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান, আজ মহারণ

তবে বিওএ প্রেসিডেন্ট স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, রাজ্যে খেলাধুলোর যে জোয়ার এসেছে সেটাকে ধরে রাখতে এবং আরও উন্নতির লক্ষ্যে অনেক কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে অলিম্পিক ভবন নেই। এটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব অলিম্পিক ভবন না থাকলে খেলাধুলোর উন্নতিতে অন্তরায় হবে। তাই আমাদের অলিম্পিক ভবনটা করতেই হবে। তার সঙ্গে চাই একটা স্পোর্টস ভিলেজ। অলিম্পিক স্পোর্টসের পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য স্পোর্টস ভিলেজ এবং অলিম্পিক ভবন থাকাটা বাধ্যতামূলক।’’

Latest article