সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য
পাহাড়ের পাদদেশে স্বর্গের মতো সুন্দর এক রাজ্য কেরল। অনেকেই বলেন, ঈশ্বরের আপন দেশ। দেখা যায় সর্ব ধর্ম সমন্বয়। জীবনের গভীরে প্রোথিত শেকড় আর প্রকৃতির অকাতর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে দিন যাপন করেন রাজ্যের মানুষ। শতাব্দীর পর শতাব্দী। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে জানা যায় ঐতিহ্য সম্পর্কে।
আরও পড়ুন-আজ মহারণ, অপেক্ষা শুধু বিরাট সেঞ্চুরির
কেরল শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। প্রথম কেতালপুতোতে মগধের সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে। কেরলের প্রভাবশালী শাসকরা হলেন চেরাস, তামিল রাজবংশ। তাঁদের প্রধান কার্যালয় ছিল ভানচিতে। নাম্বুদিরি ব্রাহ্মণরা মধ্যযুগের প্রথমদিকে কেরলে আসেন। অষ্টম শতাব্দীতে আদি শঙ্কর জন্মান মধ্য কেরলের ক্যালাদিতে। ১৪৯৮ সালের ২০ মে ভাস্কো দা গামা কেরলে সমুদ্রপথ স্থাপন করেন। গড়ে তোলেন পর্তুগিজ জনবসতি। মনে করা হয়, পশ্চিম বিশ্বের সঙ্গে পূর্ব বিশ্বের মেলবন্ধন হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। কেরলের আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছিল এই ভাবেই। পরবর্তী সময়ে ডাচ, ফরাসি এবং ব্রিটিশরা পা রাখেন।
আরও পড়ুন-মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে জখম মেটাকর্তা জুকেরবার্গ, হল অস্ত্রোপচারও
আনন্দ উৎসব মানেই ওনাম
জীবনে আছে নানা জটিলতা। তার মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নেন কেরলবাসীরা। বিশেষত পূজাপার্বণ, উৎসব, অনুষ্ঠানে। ঘরে ঘরে ওঠে খুশির ঢেউ। রঙিন হয়ে ওঠে মন। আমাদের যেমন শারদোৎসব, তেমন দক্ষিণ ভারত তথা কেরলের অন্যতম বড় উৎসব ওনাম। মূলত ১০ দিনের। তবে কোথাও কোথাও চলে টানা ১২ দিন। প্রথম ১০ দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় আনন্দ বাঁধ মানে না। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মঙ্গল কামনায় সবাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। তারপর মুখে দেন কলা এবং ভাজা পাপড়। বেশিরভাগ মানুষ দশ দিন এই খাবার খান। করা হয় ঘর পরিষ্কার, চলে দেদার কেনাকাটা। ফুল এবং রঙ্গোলি দিয়ে সাজানো হয় বাড়িগুলো। মহিলারা ওনামের চতুর্থ দিনে আলুর চিপস এবং আচার তৈরি করেন। প্রতিদিন কিছু না কিছু বিশেষ পদ রাঁধা হয়। পাশাপাশি হয় নৌকা-দৌড় প্রতিযোগিতা। যাকে বলা হয় বল্লমকালী। ওনামের অষ্টম দিনে তৈরি করা হয় মাটির মূর্তি। যাকে বলা হয় তারা মা। ওনাম শেষ হয় নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে। বড় হোক বা ছোট উৎসব, আনন্দ-স্ফূর্তির পাশাপাশি প্রতিটিতে লাগে নিজস্ব সংস্কৃতির ছোঁয়া। জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব ও পূজাপার্বণে স্থানীয়দের পাশাপাশি মেতে ওঠেন দূর থেকে আসা মানুষরাও। আমাদের মতো কেরলেও বড় উৎসবে নতুন পোশাক পরার রেওয়াজ আছে।
আরও পড়ুন-রাজ্যে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ভােটার তালিকা সংশোধনের কাজ
নৃত্য-সংগীতকলা ও খাদ্য সংস্কৃতি
কেরলের মানুষরা দারুণ রুচিশীল। শিক্ষার আলোয় আলোকিত প্রায় প্রত্যেকেই। উন্নত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে। কেরলের নৃত্যকলার বিশেষ সুনাম রয়েছে। সারা দেশে তো বটেই। বিদেশেও। কথাকলি নৃত্যের সঙ্গে পরিচয় আছে বহু মানুষের। বিশেষ এই নৃত্যশৈলীর জন্ম কিন্তু কেরলে। কথাকলি হল ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম প্রধান ধারা। কেরলের মালয়ালমভাষী দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের হিন্দু প্রদর্শন কলা। এই নৃত্যের প্রথাগত বিষয়বস্তু হল হিন্দু মহাকাব্য ও পুরাণে বর্ণিত লোক-পৌরাণিক গল্প, ধর্মীয় কিংবদন্তি ও আধ্যাত্মিক ধারণা। নৃত্যের সঙ্গে পরিবেশিত গান সংস্কৃত, মালয়ালম ভাষায় গাওয়া হয়ে থাকে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত বসে কথাকলি নাচের আসর।
কেরলের মালাবার অঞ্চলের স্থানীয় জনজাতিদের লোকশিল্প বা লোকনৃত্য হল কোলকালি। এটা দলগত নৃত্যের পর্যায়ভুক্ত। বর্তমান কোলকালি কেরালা স্কুল কলোলসাভমের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসাবেও বিবেচিত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিদেশ থেকে উৎসাহী দর্শকরা এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য আসেন। এছাড়াও কেরলের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগুলো হল ভেলাকালি, পুরক্কালি, থাচোলিকালি ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-ভূকম্পনে বিধ্বস্ত নেপালে বাড়ছে মৃত্যু, নিখোঁজ বহু
কেরলের সংগীতের একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। গদ্যের অনেক আগেই মালায়ালম ভাষায় সংগীত ও কবিতার বিকাশ হয়েছিল। এখানকার সংগীত সোপানা সংগীতামের জন্য পরিচিত। সোপানা সংগীতাম হল শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি রূপ যা কেরলের মন্দিরগুলিতে জন্ম নিয়েছিল। সোপানম ধর্মীয় প্রকৃতির। এই রাজ্যের শাস্ত্রীয় সংগীত আজ সর্বত্র সমাদৃত।
এবার আসা যাক খাদ্য সংস্কৃতির কথায়। কেরলের বাসিন্দারা দারুণ ভোজনরসিক। সেইসঙ্গে অতিথিপরায়ণ। অতিথিদের তাঁরা দেবতা মনে করেন। তাঁদের রান্না মূলত মশলাদার। দারুণ সুস্বাদু। আমিষ এবং নিরামিষ, দুই ধরনের খাবারেই মেলে স্বর্গীয় স্বাদ। আরিকাদুক্কা পছন্দ করেন অনেকেই। বর্ষা আবহাওয়ার জন্য উপযোগী এই খাবার। ভাজা, শুকনো, মশলাদার। খুবই সুস্বাদু। খোল তৈরি করে প্রথমে চাল, নারকেল এবং মশলার মিশ্রণ ভরা হয়। তারপরে ভাজা। কোঝিকোড় মাপিলা খাবারের জন্য বিখ্যাত। এটা মূলত বর্ষার সুস্বাদু খাবার। পারিপ্পুভাদাও জিভে জল আনে। মুসুর ডাল, মশলা, কারিপাতা এবং পেঁয়াজ কুঁচো ভাজা দিয়ে তৈরি। বৃষ্টিদিনে চায়ের অনুষঙ্গী। বর্ষায় শুকনো মাছের সঙ্গে ভাত দিয়ে তৈরি কাঞ্জি খাওয়ার চল আছে। এই খাবার শরীরকে সুস্থ রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কেরলে আছে বেশ কয়েকটি নামী রেস্তোরাঁ। পাওয়া যায় জিভে জল আনা রকমারি পদ। সেখানেও লেগেছে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি অন্য রাজ্য এবং অন্য দেশের খাবারও জায়গা পেয়েছে মেনু লিস্টে। কেরলে বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায় মাছ, ঝিনুক এবং ডাব।
আরও পড়ুন-শহরের বাজারগুলিতে টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত
উন্নত আয়ুর্বেদ চিকিৎসা
কেরলের আয়ুর্বেদ চিকিৎসার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। উন্নত পরিষেবা দেয় বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। কুলাক্কাডের পুনথোত্তম আয়ুর্বেদাসরামে আয়ুর্বেদিক থেরাপি দেওয়া হয়। জায়গাটা পালাক্কাদের একটি গ্রাম। কোচি থেকে তিন ঘণ্টার পথ। সীতারাম বিচ রিট্রিট পঞ্চকর্ম নিরাময়, যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের সেশন এবং স্থানীয় উপাদান দিয়ে তৈরি নিরামিষ খাবার সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন-১০০ দিনের টাকা আটকানো ফৌজদারি অপরাধ : পুলক রায়
এ ছাড়াও আছে নাটিকা বিচ আয়ুর্বেদ রিসর্ট। এটি একটি রিট্রিট। অবস্থান ১৬ একর রসালো নারকেল গাছের মধ্যে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিতে বহু মানুষ কেরলে ছুটে আসেন। বর্ষাকে আয়ুর্বেদের আদর্শ সময় মনে করা হয়। শীতল তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা মন ও শরীরকে প্রশমিত করে এবং চিকিৎসায় সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্য সারা বছর বহু মানুষ কেরলে ছুটে যান।
পায়ে পায়ে ঈশ্বরের দেশে
ইতিহাস, ঐতিহ্য, উৎসব, সংস্কৃতির কথা তো হল। এবার বলি, কেরলের কোথায় কোথায় বেড়ানো যায়। সমুদ্র, পাহাড়, নদী, জলপ্রপাত সারাবছর হাতছানি দেয় পর্যটকদের। এখানকার প্রকৃতি মনের মধ্যে অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। কেরলের জাদুকরী সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। কোথায় কোথায় যাবেন?
বাণিজ্যিক রাজধানী কোচি
আরব সাগরের উপকূলীয় রেখা বরাবর অবস্থিত কোচি কেরলের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি দক্ষিণ ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। কেরল ভ্রমণের সেরা জায়গাও বলা যেতে পারে। রাজ্যের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত। এখান থেকে রাজ্যটিকে বেশি উপভোগ করা যায়। তাই কোচি থেকেই কেরল ভ্রমণ শুরু করা উচিত। বেড়ানোর সেরা সময় মার্চ থেকে মে। এখানকার আবহাওয়া খুবই মনোরম। শহরটি যথেষ্ট আধুনিক। ব্রিটিশ, ডাচ ও পর্তুগিজ সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত পুরনো শিল্প ও স্থাপত্যে পূর্ণ। একসময় ছিল এর্নাকুলাম। এর্নাকুলাম প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যের জন্য বিশিষ্ট ছিল। পরে কোচিতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং পরিণত হয়েছে কেরলের বাণিজ্যিক রাজধানীতে। কোচির দর্শনীয় স্থানগুলো হল ফোর্ট কোচি, মাট্টানচেরি প্রাসাদ, ইন্দো-পর্তুগিজ জাদুঘর, তিরুপুনিথারা হিল প্যালেস, এর্নাকুলাম শিবমন্দির, ভিগাল্যান্ড, পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক। কোচি থেকে সড়কপথে চার ঘণ্টায় পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছানো যায়। দেখা যায় হাতির পাল। পেরিয়ার হ্রদের তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও দেখা যায় বানর, হরিণ। বর্ষাকালে উন্মুক্ত কয়েকটি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে পেরিয়ার অন্যতম।
আরও পড়ুন-বাতিল রেশন কার্ড নিয়ে আদিত্যনাথ প্রসঙ্গ তুলে বিরোধী দলনেতাকে বিঁধলেন কুণাল ঘোষ
জনপ্রিয় হিল স্টেশন মুন্নার
শুধুমাত্র কেরলের নয়, দক্ষিণ ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় হিল স্টেশন মুন্নার। অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সবুজ বলয়ের জন্য পরিচিত। কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব ১৪৩ কিলোমিটার। মুন্নারের দর্শনীয় জায়গাগুলো হল ব্লুসম পার্ক, আট্টুকাল জলপ্রপাত, কুন্ডালা লেক, পোথামেদু ভিউপয়েন্ট, মারাইউর দোলমেনস, এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান, লাইফ অব পাই চার্চ, লকহার্ট গ্যাপ ও চিয়াপাড়া জলপ্রপাত। আবহাওয়া ঠান্ডা ও মনোরম। মুন্নার হল শীর্ষস্থানীয় হিল স্টেশন। ৮০ হাজার মাইল সবুজ চায়ের খেতে মোড়া। এর সঙ্গে আছে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ি উপত্যকা। বছরের যে কোনও সময় বেড়াতে যাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-বাতিল রেশন কার্ড নিয়ে আদিত্যনাথ প্রসঙ্গ তুলে বিরোধী দলনেতাকে বিঁধলেন কুণাল ঘোষ
সমুদ্রসৈকত কোভালাম
কেরলের ৫৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কোভালাম। আরব সাগরের তীরে অবস্থিত। ১৯৩০ সাল থেকে এটি পর্যটকদের একটি প্রিয় আস্তানা। ভ্রমণপিপাসু মানুষরা এই সৈকতের সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন। কোভালম শুধুমাত্র কেরলের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র নয়, সেইসঙ্গে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্যও বিশেষ পরিচিত। ত্রিবান্দ্রম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব ১৩.৩ কিলোমিটার। ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি। এখানকার দর্শনীয় স্থান বাতিঘর সৈকত, করমানা নদী, হাওয়াহ সৈকত, হালসিয়ন ক্যাসল, কোভালম আর্ট গ্যালারি, ভিজিনজাম রক কাট গুহা মন্দির, ভালিয়াথুরা পিয়ার ও নেয়ার বাঁধ। আবহাওয়া বেশ গরম। উন্নত চিকিৎসা ও থেরাপিউটিক ম্যাসেজের জন্যও বিশেষ পরিচিত কোভালম। নারকেল গাছে পূর্ণ।
আরও পড়ুন-সন্ধে নামলেই ছাদে ভূতের উপদ্রব, ভরসা বিজ্ঞান মঞ্চ
ব্যাকওয়াটার ট্রিপ মানেই আলেপ্পি
আল্লেপি কেরলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। জায়গাটিকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এটি পরিচিত ব্যাকওয়াটার ট্রিপ ও হাউসবোটের জন্য। এর চারিদিকে রয়েছে সবুজের সমারোহ। কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। বেড়ানোর সেরা সময় জানুয়ারি-মে, সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো হল আলাপ্পুঝা সৈকত, কুমারকোম পাখি অভয়ারণ্য, মারারি সৈকত, পুন্নামাদা হ্রদ, রেভিকারনুকরণ জাদুঘর, আর্থুনকাল চার্চ, ভগবতী মন্দির, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, কৃষ্ণপুরম প্রাসাদ, পাথিরামনাল। আবহাওয়া মূলত গরম ও মনোরম। বর্ষায় দেখা যায় অন্য রূপ। ঝিরঝির ঝমঝম বৃষ্টি। এখানকার ব্যাকওয়াটারে হাউসবোট ভ্রমণ দেখার সুযোগ করে দেয় ধানখেত, মাছ ধরার অঞ্চল, হাঁস ও শাপলা-সহ সব ধরনের ল্যান্ডস্কেপ দৃশ্য। আলেপ্পির সব জায়গায় কলাপাতায় খাবার খেতে দেওয়া হয়। পর্যটকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
আরও পড়ুন-শামিদের বিরুদ্ধে সেরাটা চান বাভুমারা
সবুজ স্বর্গ ওয়ানাড
ওয়ানাড হল কেরলের সবুজ স্বর্গ। এটা বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিশেলে অপরূপ। জীবন ও প্রকৃতি এখানে মিলেমিশে একাকার। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য কেরলের সেরা জায়গা এটাই। এ ছাড়াও, ওয়ানাড আদাবাসী ঐতিহ্যের পাশাপাশি কৃষিপ্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা মুগ্ধ করবে এবং নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। যাঁরা ট্রেকিং এবং অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা। কোঝিকোড় বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। ভ্রমণের সেরা সময় জুন-অক্টোবর। ওয়ানাডের দর্শনীয় স্থানগুলো হল বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান, কালপেট্টা, সুলথান বাথেরি, মানানথাভাডি, লাক্কিডি, ওয়ানাড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, তুষারগিরি, আথিরাপল্লি জলপ্রপাত, থিরুনেলি। কেরল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ট্রি-হাউস। বর্ষায় গাছের উপরে বসে বৃষ্টি উপভোগ করা যায়। ওয়ানাডে ভিথিরি রিসর্টে পাঁচটি ট্রি-হাউস রয়েছে। আথিরাপল্লি জলপ্রপাতের কাছাকাছি। আথিরাপল্লি কেরল তথা দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। রেইনফরেস্ট রিসর্টের ট্রি-হাউসের উপর থেকে এই জলপ্রপাত দেখতে দারুণ লাগে।
আরও পড়ুন-রোহতাসে থানার কাছে সাব-ইন্সপেক্টরকে মারধর
বেকাল দুর্গ ও সৈকত
বেকালের প্রধান দর্শনীয় স্থান দুর্গ। যা গোটা ভারতের এক অনন্য রত্ন। আরব সাগরের ঢেউ ধাক্কা মারে দুর্গের দেওয়ালে। প্রবেশের মুখে শ্রীমুখ্যপ্রাণা মন্দির। ১৬৫০ সালে শিবাপ্পা নায়ক আরব সাগরের ধারে তৈরি করেন এই দুর্গ। পর্তুগাল আর বাকি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সামুদ্রিক বাণিজ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করত বেকাল। তার এই ‘স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন’-এর জন্য অষ্টাদশ শতকে হায়দার আলি আর ব্রিটিশদের মধ্যে অনেক যুদ্ধের সাক্ষী থেকেছে এই দুর্গ। টিপু সুলতানের সময় বেকাল ছিল তুলুনাড়ু আর মালাবারের প্রশাসনিক রাজধানী। ১৭৯৯ সালে টিপুর হাত থেকে ব্রিটিশদের ক্ষমতায় চলে আসে বেকাল। দুর্গের পাঁজরে পাঁজরে ইতিহাসের ছড়াছড়ি। বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি দুর্গটি। রয়েছে ১২ মিটার উঁচু পাঁচিল। দুর্গের উত্তর দিক ঘেরা রয়েছে জলপূর্ণ পরিখায়। ১৯৯৭ থেকে ২০০১, এই চার বছর ধরে খননকাজ হয়েছে এখানে। মন্দির, আবাসিক স্থান, দরবার হল, টিপুর সময়ের টাঁকশাল এবং আরও অনেক কিছুই খননের পর পাওয়া গেছে। দুর্গের দেওয়ালে দরজার মধ্য দিয়ে ঢালু পথে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রসৈকতে। দারুণ পরিবেশ। কানহানগাড এবং কাসারগোড়ে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে বেকাল যেতে হয়।
আরও পড়ুন-কেরালায় ৫ বছরের মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি
বন্যজীবন অভয়ারণ্য থেক্কাডি
কেরলের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বন্যজীবন অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত থেক্কাডি। এখানে আছে বাঘ, হাতি, বাইসন, গৌর, সাম্বার ও সিংহ, লেজযুক্ত ম্যাকাক-সহ অনেক প্রজাতির প্রাণী। মার্চ থেকে মে, বেড়ানোর আদর্শ সময়। ত্রিবান্দ্রম বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব ২৫৭ কিলোমিটার। দর্শনীয় স্থানগুলো হল পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান, টাইগার ট্রেইল, আব্রাহামের স্পাইস গার্ডেন, থেক্কাডি লেক, বাঁশের রাফ্টিং, মঙ্গলা দেবী মন্দির ও মুরিক্কাডি। থেক্কাডি আসলে পেরিয়ার হ্রদের তীরে অবস্থিত একটি বন। এর আয়তন প্রায় ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার ঘন। এই জায়গাটির বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বছরের পর বছর ধরে সারা বিশ্বের দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে আসছে। সম্ভবত বন্যপ্রাণীদের জন্য কেরলের সেরা জায়গা থেক্কাডি। এখানকার হ্রদে দুর্দান্ত নৌকা ভ্রমণের সুযোগ আছে।