তালিবান-শাসিত আফগানিস্তানও আমাদের হারিয়ে দিল! তবু আমরা বলতে পারব না, ভারত বর্তমানে হিন্দু তালিবান দ্বারা শাসিত।
২০২৩-’২৪-এর বাজেট পেশের সময় তৃণমূল কংগ্রেস বারবার বলেছিল, নির্মলা-মোদি জুটির ওই বাজেটে বেকারত্বের মতো ইস্যু মোকাবিলার কোনও ব্যবস্থাই নেই। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির তো কোনও সম্ভাবনাই এই বাজেট দেখাতে পারবে না, উল্টে কর্মসংস্থানের পরিসরকে সঙ্কুচিত করবে এই বাজেট। কিন্তু সেকথা উড়িয়ে দিয়েছে মোদি সরকার।
আরও পড়ুন-পুলিশের হাতে ধর্ষিতা তরুণী
অথচ এখন যে ছবিটা উঠে আসছে, সেটা পুরোদস্তুর ভিন্ন ছবি। সরকারের দাবির সঙ্গে তা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একেবারেই নয়। বেকারত্ব ক্রমবর্ধমান।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে এক ধাক্কায় এগারো ধাপ নেমে গিয়েছে মোদির ভারত, মদীয় ভারত। পাঁচটি বিষয়ের কথা বিবেচনা করে এই সূচক ঠিক করা হয়। এই পাঁচটা বিষয় হল— ১. রাজনৈতিক প্রেক্ষিত। ২. আইনের কাঠামো। ৩. অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত। ৪. আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত আর ৫. সাংবাদিকদের নিরাপত্তা।
আরও পড়ুন-জেলেনস্কিকে খতমের হুমকি দিলেন রাশিয়ার নিরাপত্তা ডেপুটি দিমিত্রি
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স কর্তৃক প্রকাশিত এই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে আর্থ-সামাজিক মাপকাঠিতে ভারতের স্থান ১৪৩-এ আর সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় ভারতের জায়গা ১৭২-এ। এই রিপোর্ট বলছে, ২০১৪ থেকে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ বাড়ছে। এর পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতমূলক মিডিয়া আর মিডিয়ার মালিকানার কেন্দ্রীভবন। এই কেন্দ্রীভবন জাতীয় স্তর এবং আঞ্চলিক ভাষা; উভয় ক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান। মালিকানা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক বছর আগেও ভারতের সূচক ছিল ১৪৯, এখন তা নেমে ১৫৫-তে। একইসঙ্গে মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে, সেটাও সূচক থেকে স্পষ্ট। একবছর আগেও এই প্রেক্ষিতে ভারতের সূচক ছিল ১৪৫। আর এখন তা ১৬৯।
আরও পড়ুন-বিজেপিই পেল সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দলের তকমা, কর্নাটকে সমীক্ষা রিপোর্টে জনরায়
মিডিয়া মালিকানার কেন্দ্রীভবন নিয়ে কতিপয় তথ্য এখানে উল্লেখ করা জরুরি। রিলায়েন্স ৭০টির বেশি মিডিয়া সংস্থার মালিক। প্রায় ৮০ কোটি ভারতীয় এই মিডিয়া সংস্থাগুলির গ্রাহক। ২০২২-এই আদানিরা এনডি টিভি কিনে নিয়েছেন। এসবের অনিবার্য পরিণামে তথাকথিত মোদি ‘ভক্ত’রা মিডিয়া-সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। মোদি-বিরোধী কোনও কথা তাঁরা বলেন না, অন্য কেউ বললে তাদের ওপর নেমে আসে সর্বাত্মক আক্রমণ আর হয়রানি।
আরও পড়ুন-জেলেনস্কিকে খতমের হুমকি দিলেন রাশিয়ার নিরাপত্তা ডেপুটি দিমিত্রি
একই সঙ্গে মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা স্পষ্টতর হয়ে যায় যখন দেখি, মিডিয়ার একটা বড় অংশকে মোদির প্রচারের কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মোদি দেশের সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেন না। তিনি কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করেন না, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না।
এই রিপোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইনি কাঠামো নিয়েও। খাতায়-কলমে ভারতের আইন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু বিজেপির শাসনাধীন ভারতে সরকারের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুন্ন করার অভিযোগ এনে তাঁদের জেলে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের হাতরসে খুন-ধর্ষণের খবর করতে গিয়ে জেলবন্দি হতে হয়েছিল সিদ্দিক কাপ্পানকে। মধ্যপ্রদেশের থানায় সাংবাদিককে বিবস্ত্র করার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন-বার্সা ঘুরে সৌদিতে মেসি
আসলে, ২০১৪ থেকে ভারত শাসন করছে হিন্দি-হিন্দুত্ব জাতীয়বাদের প্রতীক নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহ। কোভিড-সংকটের মোকাবিলা করার অছিলায় মোদি সরকার আর তাদের সমর্থকেরা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রায় ‘গেরিলা যুদ্ধে’ নেমেছিল। গতবারের রিপোর্টস উইদাউট বর্ডার্সের রিপোর্টে সেকথা উল্লিখিত হয়েছিল। কোভিড নিয়ে সরকারি বিবৃতির সুরে সুর মেলাতে না পারলেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল মোদি সরকার ও তাদের সমর্থকরা। তখনও আন্তর্জাতিক সূচকে ভারত ছিল ১৫০ তম স্থানে। আর এবার তা নামতে নামতে ১৬১-তে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানও তালিকায় ভারতের ওপরে! ভারতের ১০-এর বেশি সংখ্যক সাংবাদিক সরকার-বিরোধী খবর করার দায়ে এখনও জেলে।
আরও পড়ুন-ইডি ডিরেক্টরের মেয়াদবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রকে কড়া প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকের পরিসংখ্যানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে নরওয়ে। এবার নিয়ে একটানা সপ্তমবারের জন্য এই তালিকার শীর্যস্থানে রয়েছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে আয়ারল্যান্ড। অন্যদিকে ১৫২তম স্থানে রয়েছে তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান। ১৫০তম স্থানে অর্থাৎ ২০২২-এ যেখানে ছিল ভারত, সেখানে এখন পাকিস্তান। এই তালিকায় সবচেয়ে নিচের দিকে রয়েছে ভিয়েতনাম, চিন ও উত্তর কোরিয়া।
অন্যদিকে, মোদি-জমানায় দেশে বেকারত্বের হার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এপ্রিলে দেশের বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৮.১১ শতাংশে। তার একমাস আগেও, অর্থাৎ গত মার্চে এই হার ছিল ৭.৮ শতাংশ, গ্রামীণ বেকারত্বের হার সামান্য কমলেও প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইআই)-র রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন-ব্যর্থ বিজেপি, মণিপুর নিয়ে সরব তৃণমূল
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা বাড়লেও শ্রমশক্তি বা ওয়ার্কফোর্স বাড়েনি। অর্থাৎ কাজে যুক্ত মানুষের সংখ্যা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যাটা ৪০ কোটির আশেপাশে। অথচ, মোদিজি ২০১৪-র নির্বাচনী প্রচারে ‘অচ্ছে দিন’–এর স্বপ্ন দেখানোর সময় বলেছিলেন, বছরে দু’কোটি বেকারকে চাকরি দেবেন। অথচ দেখা যাচ্ছে, এই এপ্রিলে গ্রামীণ ভারতে বেকারত্বের হার ৭.৩৪ শতাংশ আর শহরাঞ্চলে সেটা ৯.৮১ শতাংশ। স্বাধীনতা কমছে। বেকারত্ব বাড়ছে। সত্যিই ‘অচ্ছে দিন’ এসে গিয়েছে!