শিউলি-গন্ধ মাখা শারদ-সাহিত্য

পুজো উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে ‘জলফড়িং’ এবং ‘ইলশেগুঁড়ি’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা। নানা বিষয়ের লেখায় সমৃদ্ধ। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

অল্প দিনেই সাড়া জাগিয়েছে ‘জলফড়িং’। জায়গা করে নিয়েছে পাঠকদের মনে। হাওড়া থেকে প্রকাশিত হয় পত্রিকাটি। কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। পুজোর অনেক আগেই বেরিয়েছে এবারের শারদ সংখ্যা। ছোটদের জন্য এলাহি আয়োজন। রকমারি লেখা। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। লিখেছেন এই সময়ের খ্যাতনামা কবি ও সাহিত্যিকরা।
শুরুতেই স্মৃতিকথা। পার্থ দত্ত স্মরণ করেছেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়কে। লেখার শিরোনাম ‘সব চরিত্রই বাস্তব’।

আরও পড়ুন-লাইফলাইন শেষ, চাঁদের দেশে চিরঘুমে বিক্রম-প্রজ্ঞান

উচ্চতার সঙ্গে বন্ধুতা পাতিয়েছেন চন্দননগরের কন্যা পিয়ালী বসাক। জয় করেছেন এভারেস্ট শৃঙ্গ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রদীপ রক্ষিত। রূপক বসু লিখেছেন ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীকে নিয়ে।
রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর মা সারদা দেবীকে নিয়ে অনবদ্য প্রবন্ধ ‘মা ও ছেলে’ উপহার দিয়েছেন অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। লেখাটার মধ্যে অদ্ভুত এক মায়া লেগে রয়েছে। শ্যামল চক্রবর্তীর প্রবন্ধ ‘বাঘ বসতির পঞ্চাশ বছর’। বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ একটি লেখা। আছে আরও কয়েকটি প্রবন্ধ। যুধাজিৎ দাশগুপ্ত, দেবীপ্রসাদ দুয়ারী প্রমুখের।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘ধরাকরা’ এককথায় অসাধারণ। কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে শুরু। তারপর গড়গড়িয়ে এগিয়েছে। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও ভাল লাগবে। ছোটগল্প আছে আরও। ইমদাদুল হক মিলনের ‘এক রকম তিনজন’, অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘হলুদ বাঘ-সাদা বাঘ’, সৈকত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভূতের বেগার’, চন্দন নাথের ‘পালোয়ান’, জয়দীপ চক্রবর্তীর ‘অচেনা লোকটা’, বিনতা রায়চৌধুরীর ‘কুট্টুস ভোজন’ বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

বড়গল্পে ভগীরথ মিশ্রর ‘ঘটোৎকচ জেঠুর গল্প’, অমর মিত্রর ‘ডক ক্যানিঙের লেডিকেনিং’ মনে দোলা দিয়ে যায়। সমুদ্র বসুর পৌরাণিক গল্প ‘গুরু-শিষ্য সংবাদ’-এ তুলে ধরা হয়েছে আরুণি, উপমন্যুর কথা। গোয়েন্দা কাহিনি ‘শেষ চিঠি’ উপহার দিয়েছেন সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়। একটি মৃত্যুকে ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য।
আছে ছটি ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস। জয়ন্ত দে-র লেখার শিরোনাম ‘হুলো ভার্সেস হুলো’। বেশ মজার। হুলো, মেনি, ছুঁচোরাই প্রধান চরিত্র। এক দমে পড়ে ফেলা যায়। দীপান্বিতা রায়ের উপন্যাস ‘রেড ড্র্যাগন’। রেনো আর বেটোর জমজমাট অ্যাডভেঞ্চার। দাঁড় করায় বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখে। অদ্ভুত টান আছে লেখাটার মধ্যে। পড়তে ভাল লাগে। পাশাপাশি মন ছুঁয়ে যায় সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীল পাথরের দেবতা’, তৃষ্ণা বসাকের ‘ব্যাংককের বাঘ’, শিশির বিশ্বাসের ‘খ্যাপা সাহেব ও দানো রহস্য’, মনজিৎ গাইনের ‘বাঘের মুখে ট্যাঁপাদা’ উপন্যাসগুলো।
কবিতা বিভাগটি আকর্ষণীয়। লিখেছেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, রত্নেশ্বর হাজরা, পবিত্র সরকার, দীপ মুখোপাধ্যায়, যশোধরা রায়চৌধুরী, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অনির্বাণ ঘোষ প্রমুখ। এ-ছাড়াও আছে নাটক, অজানা খবর, অনুবাদ গল্প, ভ্রমণ, কুইজ, কমিকস ইত্যাদি বিভাগ। সবমিলিয়ে জমজমাট একটি পুজো-উপহার। দেবব্রত ঘোষের প্রচ্ছদ প্রশংসার দাবি রাখে। দাম ২৪০ টাকা।

আরও পড়ুন-দুর্গত এলাকা দেখলেন অরূপ, দুর্যোগেও কেন্দ্রের বরাদ্দ-রাজনীতি, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

চতুর্মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘ইলশেগুঁড়ি’। হাওড়া থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ৮ বছর ধরে। দেবব্রত ঘোষ মলয়ের সম্পাদনায়। বেরিয়েছে শারদ সংখ্যা। স্থান পেয়েছে নানা বিষয়ের লেখা।
শুরুতেই একগুচ্ছ মননশীল নিবন্ধ। রূপম চক্রবর্তীর লেখার শিরোনাম ‘সর্বমঙ্গলময়ী মা দুর্গা এবং সমাজ চিন্তা’। একটি পুজো কীভাবে সর্বজনীন হয়ে ওঠে, দেয় সমাজ সৃষ্টির শিক্ষা, লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। মূল্যবান রচনা সুগত ত্রিপাঠীর ‘ডারউইনের তত্ত্ব, ব্রহ্মাণ্ড-তত্ত্ব ও স্বামী বিবেকানন্দ’। দীপক সাহার লেখার শিরোনাম ‘মৃত্যুর সার্ধশতবর্ষেও সমুজ্জ্বল মাইকেল মধুসূদন দত্ত’। লেখাটিতে পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট। সত্যজিৎ রায় ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক। ছবি আঁকতেন, লিখতেন। তাঁর ক্রীড়াপ্রেম সম্পর্কে সৌমিক পাহাড়ী লিখেছেন ‘ক্রীড়াপ্রেমী সত্যজিৎ’। লেখাটি আকর্ষণীয়। সৈকতকুমার বসুর লেখার শিরোনাম ‘আমার সত্যজিৎ’। কীভাবে একজন একাকী, অন্তর্মুখী মানুষ সত্যজিৎ-সৃষ্ট চরিত্রগুলোর হাত ধরে কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখলেন, জানা যায়। রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ। আড়ালে থাকা একজন মানুষ। তাঁকে নিয়ে ‘আলোর পেছনেই থেকে গেছেন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ লিখেছেন অর্পিতা ঘোষ পালিত। কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপর নিবন্ধ ‘আমার যাবার সময় হলো, দাও বিদায়’ উপহার দিয়েছেন প্রদীপকুমার পাল। লেখাটি গবেষণাধর্মী। বটুকৃষ্ণ হালদার লিখেছেন ‘নিজেকে শিশুসাহিত্যিক মানতেন না ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়’। পাণ্ডব গোয়েন্দার স্রষ্টাকে নিয়ে অনবদ্য একটি রচনা।

আরও পড়ুন-লাইফলাইন শেষ, চাঁদের দেশে চিরঘুমে বিক্রম-প্রজ্ঞান

সন্দীপ দত্তকে স্মরণ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্রে। লিটল ম্যাগাজিনের আপনজনকে নিয়ে লিখেছেন পার্থসারথি সরকার বিশ্বাস এবং সম্পাদক। প্রকাশিত হয়েছে কৃতিকণা চিনির নেওয়া সাক্ষাৎকার।
আছে একগুচ্ছ ছোটগল্প। মন ছুঁয়ে যায় তথাগত চট্টোপাধ্যায়, আইভি চট্টোপাধ্যায়, শুভ্রা সান্যাল, সুমন দিন্দা, সুস্মিতা দেবনাথের লেখা। ব্যক্তিগত গদ্য উপহার দিয়েছেন চন্দ্রনাথ শেঠ, বরুণ বিশ্বাস।
ভ্রমণে ‘মামা ভাগ্নে পাহাড়’ নিয়ে লিখেছেন দেবেশ চক্রবর্তী। অমিতাভ মাইতির হাত ধরে ঘুরে আসা যায় ‘ভালকিমাচান’।
আছে কয়েকটি কবিতা। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় আরণ্যক বসু, অজিতেশ নাগ, বিক্রমজিৎ ঘোষ, অমিত মুখোপাধ্যায়, রবিনকুমার দাস, তীর্থঙ্কর সুমিতের নাম। এ-ছাড়াও আছে অণুগল্প, রম্যরচনা, মুক্তগদ্য, পরিবেশ ইত্যাদি লেখা। সবমিলিয়ে পুজো উপলক্ষে আন্তরিক আয়োজন। দাম ২৮০ টাকা।

Latest article