প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচারসর্বস্ব রাজনীতির উদাহরণ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না করেই নির্বাচনী প্রচারের জন্য তড়িঘড়ি উদ্বোধন করা হয়েছিল এই সেমি হাইস্পিড ট্রেনের। শুরু থেকেই একের ওপর এক দুর্ঘটনায় থমকে পড়েছে এই ট্রেন। বন্দে ভারতের ধাক্কায় গরু, মোষ থেকে মানুষের মৃত্যু বারবার এই ট্রেনের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নিয়মিত ইট-পাথর ছোঁড়ার ঘটনাতেও বিতর্কের কালি লেগেছে বন্দে ভারতের গায়ে। রেলের দেওয়া তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি ইট-পাথর ছোঁড়া হয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে।
আরও পড়ুন-জলপথে আক্রমণের পরিকল্পনা, নৌবাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ দিলেন পুতিন
উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও গুজরাত, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও বিহার থেকেও বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি থেকে কানপুর এবং এলাহাবাদ হয়ে বারাণসী পর্যন্ত প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনটি চালু হয়েছিল। এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রার সময়েই তাতে পাথর পড়েছিল যোগীরাজ্যে। ভেঙে গিয়েছিল জানলার কাচ। এর পর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই দু’মাসে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে কমপক্ষে ১২ বার পাথর মেরে প্রথম বন্দে ভারত ট্রেনের কাচ ভাঙা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-আমেরিকায় একই পরিবারের আট সদস্যের দেহ উদ্ধার
দিল্লি থেকে বারাণসীর দিকে যাত্রা করার সময়ই এই ঘটনা ঘটে। রেলমন্ত্রক স্বীকার করেছে, এখনও পর্যন্ত এই সুপার ফাস্ট ট্রেনের সবচেয়ে বেশি পাথর ছোঁড়া হয়েছে বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ থেকেই। এজন্য প্রথম বন্দে ভারত চালুর প্রথম দু’মাসেই রেলের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। বারবার ট্রেনের দামি কাচ বদলাতে হয় রেল দফতরকে। তারপরই পাথর ছোঁড়ার ঘটনা রুখতে এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত বন্দে ভারতের প্রতিটি কামরার বাইরের দিকে ছ’টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল। তবে প্রতি কামরায় ক্যামেরা বসিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। দিল্লি-বারাণসী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পর এখনও পর্যন্ত সাতটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হয়েছে। পাথরের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি এই ট্রেনগুলিও। সর্বশেষ বাংলায় বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা নিয়ে নির্লজ্জ রাজনীতি শুরু করেছিল বিজেপি। গেরুয়া দলের নেতাদের মুখে ঝামা ঘষে খোদ রেল দফতরই জানিয়েছে, বাংলার বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়া হয় বিহারের মাটি থেকে।
আরও পড়ুন-রুশ ইঞ্জিনিয়ারের কপাল ও চোখে ভারী আঘাতের চিহ্ন
বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়ার তালিকায় অন্য একাধিক রাজ্য আছে। যেমন, দ্বিতীয় বন্দে ভারত চালু হয়েছিল ২০১৯-এর অক্টোবরে। কিন্তু ওই ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রার সময়ও পাথর ছুঁড়ে ভেঙে দেওয়া হয় ট্রেনের সামনের কাচ। এরপর সতর্কতামূলক কারণে দিল্লি-কাটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ৬৫৪ কিলোমিটার রুটে, জম্মু এবং পাঠানকোটের মতো সংবেদনশীল স্টেশনগুলিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডোদের মোতায়েন করা হয়। তবে তারপরেও পাথর ছোঁড়া থামেনি। বিজেপি শাসিত গুজরাতের গান্ধীনগর থেকে মুম্বইগামী বন্দে ভারতেও একাধিকবার পাথর ছোঁড়া হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে এই ট্রেনে চেপে আমেদাবাদ থেকে সুরাত যাচ্ছিলেন মিম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি।
আরও পড়ুন-গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় দল
সেই সময় তাঁদের কামরা লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। ভেঙে যায় জানলার কাচ। এই ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে মিম। এর পর দিল্লি-উনা, চেন্নাই-মহীশূর এবং বিলাসপুর-নাগপুরগামী বন্দে ভারতেও পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। বারবার কাচ ভাঙার ঘটনা ঠেকাতে রেলমন্ত্রক জানায়, বন্দে ভারতে এমন কাচ লাগানো হবে যা পাথরের আঘাতেও ভাঙবে না। শেষ পর্যন্ত বন্দে ভারতে অপেক্ষাকৃত শক্ত এবং পাথরের আঘাতরোধী পলিকার্বনেটের জানলা লাগানো হয়। তবে তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। বিহার থেকে বাংলার বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়াই তার প্রমাণ।