নিমগ্ন সাধনার নান্দনিক উচ্চারণ

অদ্ভুত এক ভাললাগা এবং স্নিগ্ধতায় তিনি ভরিয়ে তোলেন পাঠকমন। বিভিন্ন স্বাদ ও ভাবনার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে কবির বিভিন্নমুখী এবং বহুবর্ণ গভীর জীবনবোধ

Must read

মানস ভাণ্ডারী: সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে পঙ্কজ সাহার কবিতা গ্রন্থ ‘সময়ের কাছে দু’হাত পেতে’।
বাহাত্তরটি কবিতা নিয়ে গড়ে ওঠা এই কাব্যের প্রতিটি রচনাতেই প্রতিষ্ঠিত এই কবির শক্তিসত্তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত। অদ্ভুত এক ভাললাগা এবং স্নিগ্ধতায় তিনি ভরিয়ে তোলেন পাঠকমন। বিভিন্ন স্বাদ ও ভাবনার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে কবির বিভিন্নমুখী এবং বহুবর্ণ গভীর জীবনবোধ।
প্রায় দু’ডজন কাব্য ও ছড়াগ্রন্থের রচয়িতা পঙ্কজ সাহা দীর্ঘদিন নিমগ্ন রয়েছেন তাঁর নিবিড় সাধনায়। অরুণ মিত্র এই কবি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন— ‘এর উচ্চারণ অন্য উচ্চারণ থেকে স্বতন্ত্র।’ বাস্তবিকই তাই। নিজস্ব উচ্চারণ ও মগ্নতার সাধনায় তিনি প্রকৃতই এক ভিন্ন অস্তিত্ব। তাঁর কাব্যকৃতির মধ্যে ‘নিসর্গ প্রকৃতি ও মানবজীবনের এক লাবণ্যময় সমন্বয়’ খুঁজে পেয়েছেন পিনাকেশ সরকার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেখেছেন ‘বিশ্বমানবতা এবং স্বদেশী ভাবনা মিলেমিশে আছে তাঁর কবিতায়।’

আরও পড়ুন-মায়া লেগে আছে অক্ষরে অক্ষরে

গ্রন্থমধ্যে পঙ্কজ সাহার কবিতা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কয়েকজনের মূল্যায়ন মুদ্রিত হয়েছে। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত লিখেছেন তাঁর ‘কবিতায় লেগে থাকে নান্দনিক বিষদগুণ এবং অতৃপ্ত অন্বেষা। জীবন্ত বাক্‌-স্পন্দের আয়োজনের মধ্যেও ওই নিঃশর্ত অন্তর্গতি নিয়তির মতো জেগে থাকে।’
সংযত ও মৃদু উচ্চারণ, সহজিয়া আত্মমগ্ন দৃষ্টি, অহেতুক চমক সৃষ্টির চেষ্টাকৃত প্রবণতার বিরোধিতা, মিস্টিক রহস্যময়তা তাঁর কবিতাগুলিকে অনবদ্য এবং আন্তরিক করে তুলেছে। অসাধারণ কিছু দৃশ্যের আয়োজন, শব্দ ব্যবহার, গভীর জীবনসত্য, প্রেম, নৈঃশব্দ্যের আবহ, সহজ কথার ভিতরে অসহজ আলোর উজ্জ্বলতা, জ্যোৎস্নারেণুর বিকিরণ, গভীর প্রশান্তি ইত্যাকার নানান পরিবেশনের কুশলতায় তিনি পাঠককে মুগ্ধ করে তোলেন।

আরও পড়ুন-বিরিয়ানি আজ সর্বজনীন

সম্পূর্ণ ভাবে কবিতায় নিবেদিত এই কবির সৃষ্ট শব্দচিহ্নগুলি আপাদমস্তক শেষ পর্যন্ত সবসময় সফল ও প্রকৃত কবিতা-ই হয়ে ওঠে। তাঁর চিন্তনে কবিতা এবং কবি ভিড় করে আসে বিভিন্ন অনুষঙ্গে। কবিতা পুস্তকটির প্রথম কবিতা ‘কবিতার আত্মা’য় তিনি লিখেছেন: ‘কবিতার মধ্যে থেকে কবিতা উঠে আসে। কবিতার মধ্যে কবিতার অবসান/… কবিতার আত্মা পৃথিবীতেই/ ফিরে ফিরে আসে/ … কবিতা যেতে যেতে ফিরে দেখে/ কবিতার সুখ।’ কিংবা ‘কবির সঙ্গে দেখা’ শীর্ষক অন্য একটি কবিতা: ‘কবির সঙ্গে কথা বলব বলে/আমি বাইরে এসেছি।/… কবির সঙ্গে দেখা হবে বলে/ আমি নিজের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি।/ ঈশ্বরের সঙ্গে তো দেখা হল না,/ কবির সঙ্গে দেখা হোক।’

আরও পড়ুন-আধ্যাত্মিকতা সামাজিকতা ও অর্থনীতির সুষম মেলবন্ধন এই কোরবানি

পঙ্কজ সাহার কবিতা দীর্ঘদিন যাবৎ পাঠ করার অভিজ্ঞতা সুন্দর এক মূল্যায়ণ হয়ে উঠেছে জয় গোস্বামীর লেখা এইসব পংক্তিতে— ‘পঙ্কজ সাহার কবিতা নম্রস্বরে ছোট ছোট পংক্তি নিয়ে অগ্রসর হয়। মৃদু দীপালোক যেন জ্বলে থাকে তাঁর কাব্যে। তাঁর কবিতায় একান্ত আত্মগত উচ্চারণ থাকে।… সেখানে আছে ধীর গতির এক ক্রম উন্মোচন হৃদয়ের ও বোধের। আত্মাকে তিনি তাঁর কবিতায় নম্রভাবে জ্বালিয়ে রেখেছেন আজও।’
গ্রন্থটির প্রচ্ছদ নির্মিত হয়েছে শিল্পী যোগেন চৌধুরীর অনবদ্য শিল্পকলায়।

Latest article