ইন্ডিয়ার চাপে থরহরিকম্প বিজেপির, ইতিহাস বদলানোর চক্রান্ত

শিক্ষাক্ষেত্রে ঘৃণ্য রাজনীতি হামলা এবার পাঠ্যপুস্তকেও

Must read

প্রতিবেদন : প্রবল ভয় পেয়েছে বিজেপি। ইন্ডিয়া জোটের নাম শোনার পর থেকেই পাগল পাগল অবস্থা তাদের। কোনও অবস্থাতেই এই জোটকে সামলাতে না পেরে যেভাবে হোক না কেন তাকে প্রতিহত করতে চাইছে ভীতু বিজেপি। তাই একের পর এক দেশ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েই চলেছে। এবার তো একেবারে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে হামলা চালাতে শুরু করেছে। আগেও বদলেছে। ফের বদলাতে চাইছে ইতিহাস। ইন্ডিয়া জোটের প্রবল চাপে ও ব্যাপক ভয় পেয়ে এবার পাঠ্যপুস্তকেও ভারত লেখার দিকে এগোচ্ছে বিজেপি৷ ইন্ডিয়া নয়, পাঠ্যবইতে লেখা হবে ভারত (India-Bharat)। সেইসঙ্গে প্রাচীন ইতিহাসের বদলে ক্লাসিক্যাল ইতিহাস পড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ইন্ডিয়াতে জুজু দেখছে বিজেপি। এছাড়া সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, জহর সরকার, শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, ওমপ্রকাশ মিশ্ররা ধিক্কার জানিয়েছেন শিক্ষায় বিজেপির এই রাজনৈতিক হামলাকে। এর আগে বিরোধীরা জোট করার পর থেকেই নাম নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। প্রথমে ইংরেজিতে প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়ার বদলে লেখা হল প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত। এইসব নিয়ে আলোচনা, বিরোধীদের সমালোচনার মধ্যে দিয়েই হয়ে গিয়েছে জি-২০ সম্মেলন। সেখানেও একাধিক এই উদাহরণ দেখা গিয়েছে। এবার দেশের সব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত (India-Bharat) লেখার সুপারিশ করল এনসিইআরটি (NCERT)। বিজেপি এর আগেও ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আমলে একের পর এক বদলে গিয়েছে ঐতিহাসিক জায়গা, সৌধ, রাস্তার নাম। ভারতীয় আইন বিধিও বদলে ন্যায়সংহিতা করার প্রস্তাব এসেছে। এবার সরাসরি আঁচ শিক্ষাক্ষেত্রে।
কমিটির চেয়ারপার্সন সি আই আইজ্যাকের মতে, পাঠ্যপুস্তকে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত (India-Bharat) নাম লেখার পক্ষে প্যানেল। শুধু তাই নয়, পাঠ্যক্রমে ‘প্রাচীন ইতিহাস’-এর পরিবর্তে ‘শাস্ত্রীয় ইতিহাস’ চালু করা এবং ভারত সম্পর্কে জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। এনসিইআরটি আধিকারিকরা অবশ্য বলেছেন যে প্যানেলের সুপারিশগুলিতে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কমিটি সর্বসম্মতভাবে সুপারিশ করেছে যে ‘ভারত’ নামটি পাঠ্যপুস্তকে লেখা উচিত। জাতীয় শিক্ষা নীতি (নেপ)২০২০-র সঙ্গতি রেখে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলির পাঠ্যক্রম সংশোধন করছে এনসিআরটি৷ চূড়ান্ত করার জন্য ১৯ সদস্যের একটি জাতীয় পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ কমিটি (এনএসটিসি) গঠন করা হয়েছে৷ কমিটির অন্যান্য সদস্যর মধ্যে রয়েছেন আইসিএইচআর-এর চেয়ারপার্সন রঘুবেন্দ্র তানওয়ার, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অধ্যাপক বন্দনা মিশ্র, ডেকান কলেজ ডিমড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য বসন্ত শিন্ডে এবং হরিয়ানার একটি সরকারি স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকা মমতা যাদব।
শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতি করা নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। এবার ‘ভারত বনাম ইন্ডিয়া’ (India-Bharat) বিতর্কের আঁচ গিয়ে পড়ল শিক্ষাক্ষেত্রে। আগামী লোকসভা ভোটে দিল্লি থেকে মোদি সরকারকে হটাতে কয়েক মাস আগেই গঠিত হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। আর ইতিমধ্যেই তার প্রভাব দেখে পায়ের তলার মাটি সরছে গেরুয়া শিবিরের। বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে ইন্ডিয়া জোট।

আরও পড়ুন- বিশ্বের সেরা দশে বাংলার শিক্ষক

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যা বললেন
এটা আসলে অপরিণামদর্শিতা। দেখেশুনে মনে হচ্ছে জুজুর ভয়। ইন্ডিয়া জোটে জুজু দেখছে বিজেপি সরকার। হিন্দুস্থান শব্দের ইংরেজি অর্থ হতে পারে ইন্ডিয়া। এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি। ভারত সেখান থেকে দূরে। বিজেপি ইন্ডিয়া জোট ও তার অন্যতম মধ্যমণি আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছে। এটা পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত নামিয়ে আনার কোনও দরকার ছিল না।

 

সুখেন্দুশেখর রায় (সাংসদ) : এটা ঐতিহাসিক ভুল। ইতিহাসকে বিকৃত করছে বিজেপি। তাদের এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আখেরে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সর্বনাশ হবে। এভাবে ইতিহাস বদলানো যায় না। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আসলে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এর জোরালো প্রতিবাদ দরকার। আসলে ইন্ডিয়া জোটকে বিজেপি এত ভয় পেয়েছে যে দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

 

জহর সরকার (সাংসদ) : ‘হনুমানে কয় কথা/জাম্বুবানে নাড়ে মাথা’। পৃথিবীর ২২০টা দেশে ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের কথা সকলেই জানেন। হঠাৎ এইভাবে ইতিহাসকে উপড়ে ফেলা যায় না। বিজেপি আসলে এভাবে পলিটিক্যাল গ্যাস বেলুন উড়িয়ে দেখছে। কিন্তু কিছু করতে পারবে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ইন্ডিয়া জোটের চাপে পড়েই এসব উল্টোপাল্টা কাণ্ড করছে বিজেপি।

 

 ভাদুড়ী (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ) : ইন্ডিয়া-ভারত সমার্থক। আসলে এই নাম তো এক রাজার দেওয়া। সিন্ধু থেকে হিন্দু। তারপরে ইন্ডিয়া। বিজেপি চাইলেই তো আর এভাবে ইতিহাস বদলে দেওয়া যায় না। ক্লাসিক্যাল হিস্ট্রি বলতে ওরা কী বলতে চাইছে, সেটা আগে পরিষ্কার করুক। বিদেশে একে বলে প্রি-মডার্ন হিস্ট্রি। তাই যদি হবে তাহলে সেখানে ব্রিটিশ আর মুঘল অধ্যায়ও রাখতে হবে। সেগুলো কি থাকবে? বিজেপি আগে এসবের উত্তর দিক।

 

ওমপ্রকাশ মিশ্র (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ) : বিজেপির এই প্রয়াস সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক। ইন্ডিয়া-ভারত দুটোই সমার্থক। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে বিজেপি এই বিভাজন রেখা টানার চেষ্টা করছে। দেশের নাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। ইন্ডিয়া যে ভাবনা থেকে তৈরি রাজনৈতিক কারণেই বিজেপি এই বিরোধিতা করছে। এর তীব্র ধিক্কার জানাই।

Latest article