শুধু পদকপ্রাপ্তিতে লাভ কী!

কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের পদকপ্রাপ্তি দেখলে আনন্দিত ও উল্লসিত হওয়ার কথা। কিন্তু এমনটা হওয়ার কোনও কারণ নেই। কেন? বিশ্নেষণে, অনুসন্ধানে দেবু পণ্ডিত

Must read

ক র্ণম মালেশ্বরী প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন। তাঁর একটি উত্তর সম্পাদকীয় একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে মালেশ্বরী বলছেন, কমনওয়েলথ গেমসে (Commonwealth Games) এবারের সাফল্যে যেন আমরা মোহিত হয়ে না যাই। বরং যাতে এই সাফল্যটা ধারাবাহিকতা অর্জন করে, সেটার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা জরুরি। এ-বিষয়ে মালেশ্বরী চিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য চিন কমবেশি ২০ জন অ্যাথলিট মজুত রাখে। উদ্দেশ্য, চোট আঘাতের কারণে কারোকে না-পাওয়া গেলে কোনও একটি বিভাগে যোগ্য প্রতিযোগীর উপস্থিতিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয়। তা ছাড়া, একটা বিশেষ বিভাগে জনা কুড়ি প্রতিযোগীর মনোনয়ন মানেই ওই ২০ জনের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা আছে। সেক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেকের পারফরম্যান্স আরও ভাল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকছে। এরকম প্রতিটি বিভাগে ২০/২২ জন প্রতিযোগীর জোগান অব্যাহত রাখার জন্য তৃণমূলস্তর থেকে ক্রীড়াবিদদের তুলে আনা দরকার। জেলায় জেলায় রাজ্যে রাজ্যে যে একাডেমিগুলো আছে সেখান থেকে ছেলেমেয়েদের বেছে নিতে হবে। এজন্য চাই নিবিড় পরিকল্পনা। তবে তৃণমূলস্তর থেকে প্রতিভাবানদের বেছে নিতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। যেনতেনপ্রকারেণ বাছাইপর্ব সারলে আখেরে কোনও লাভ হবে না, জানাচ্ছেন মালেশ্বরী। যেমন, ভারোত্তলনের ক্ষেত্রে ১১ বছর বয়সিদের শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার। দেখা দরকার, সে যখন ২০ বছর বয়সে পা দেবে, তখন তার পেশিগুলো কতটা শক্তপোক্ত হবে, সে কতটা লম্বা হতে পারে, তার পেশির নমনীয়তা কতটা বজায় থাকবে ইত্যাদি। শুধু ভারোত্তলন নয়, সব ব্যাপারেই এগুলো বিচার করে নবীন প্রতিভা বাছাই করতে হবে। দৌড়, হাইজাম্প, লংজাম্প, সব কিছুতেই এই নীতি প্রয়োগ করতে হবে। অন্য কোনও উপায় নেই। দেশের প্রত্যেকটা স্পোর্টস ইউনিভার্সিটিকে এই বাছাই পরীক্ষার সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও ক্রীড়া সংগঠনগুলিকে এ-ব্যাপারে অধিক উদ্যোগী ও মনোযোগী হতে হবে। নিছক কতগুলো ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন এবং সেগুলোতে যারা বিজয়ী, তাদেরই প্রতিপালন, এই পদ্ধতি অনুসৃত হলে কাজের কাজ কিছু হবে বলে মনে হয় না।

আরও পড়ুন: অগ্নিপুরুষ হেমচন্দ্র কানুনগো ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধী ছিলেন

এই প্রসঙ্গে স্পোর্টস ইউনিভার্সিটির পাঠ্যক্রমের ওপর নজর দেওয়ার কথাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার কথা বলেছেন মালেশ্বরী। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লক্ষ্য করেছেন, স্পোর্টস ইউনিভার্সিটির পাঠ্যক্রমের বেশিরভাগটাই জুড়ে থাকে খেলাধুলো। মালেশ্বরী বলছেন, শধু খেলাধুলো করানোটাই সব নয়। অন্তত তিরিশ শতাংশ পাঠ্যক্রম জুড়ে থাকা উচিত এমন সব বিষয়, যাতে শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে স্পোর্টস ফিজিও থেরাপিস্ট, মনস্তত্ত্ববিদ, পুষ্টিবিদ কিংবা প্রশিক্ষক হতে পারে। সব মিলিয়ে বার্তা একটাই। কমনওয়েলথ গেমসে (Commonwealth Games) স্বর্ণবর্ষণ নিঃসন্দেহে অ্যাথলিটদের উদ্দীপ্ত করবে।
কিন্তু সেটাই বোধ হয় শেষ কথা নয়।
আর সেজন্যই এত কথা। এত ভাবনা।

Latest article