সতর্ক হলেই কমবে ঝুঁকি

কোনও একটা দিবস পালন ততক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে না, যতক্ষণ না নিজেরা সচেতন হচ্ছি। প্রতিবছর ৮ জুন বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস পালিত হয়। অথচ WHO-র রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ ষাট হাজার মানুষ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়। তাই দরকার একটু নজরদারি, সতর্কতা এবং যত্ন। তাহলেই ঝুঁকি কমানো যাবে ব্রেন টিউমারের। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

মস্তিষ্কের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিটাকেই সাধারণত আমরা ব্রেন টিউমার আখ্যা দিয়ে থাকি। নানাধরনের ব্রেন টিউমার হয়। কিছু ক্যানসারাস আবার কিছু নন-ক্যানসারাস। এই টিউমার সাধারণত শরীরের অন্য কোনও অঙ্গে শুরু হয় এবং পরে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। আবার সরাসরি মস্তিষ্কেও হতে পারে।
জার্মানের ব্রেন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন প্রথম ২০০০ সালে ৮ জুন দিনটি নির্বাচন করে সাধারণের কাছে ব্রেন টিউমার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। এই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা ১৯৯৮ সালে। এই সংস্থায় রয়েছে চোদ্দোটি দেশের পাঁচশোরও বেশি রেজিস্টার্ড সদস্য। এদের কাজ হল সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগীকে এবং তার পরিবারকে যতটা সম্ভব চিকিৎসা-সংক্রান্ত সাহায্য প্রদান।

আরও পড়ুন-কটক হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেডিক্যাল টিমকে ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রীর

এই দিনটি প্রতিবছর আসে এবং আমরা প্রতি বছর ব্রেন টিউমার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টায় উঠে-পড়ে লাগি। আসলে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। তাই বিপদে পড়ার আগেই নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। আর দরকার একটু সতর্কতা।
সব মাথাব্যথাই ব্রেন টিউমার নয়
মাথা থাকলেই মাথাব্যথা হবে এটা প্রাচীন প্রবাদ। তাই সব মাথাব্যথায় যেমন ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই তেমনই মাথাব্যথা হলে লক্ষণ বুঝে সতর্ক হওয়াটাও জরুরি। ব্রেন টিউমার-জনিত মাথাব্যথা কিন্তু একদম আলাদা। সঙ্গে থাকে আরও কিছু অন্য উপসর্গ।

আরও পড়ুন-ট্রাক্টরে রোড শো করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জনজোয়ার হরিপাল-তারকেশ্বরে

টেনশন থেকে হেডেক
মাথার পিছনের দিকে হয় টেনশন থেকে হেডেক, যাকে বলে টেনশন হেডেক। এক্ষেত্রে ঘাড়ের সামান্য উপরের থেকে ব্যথা হয়। প্রথমে মাথার এই অংশটি ভারী হয়ে যায়। তারপর ব্যথা হতে শুরু করে। কাঁধ এবং গলা শক্ত হয়ে যাওয়াও এই সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। আবার অনেকসময় এই টেনশন হেডেক কপাল থেকেও শুরু হয়।
চোখের কারণে মাথাব্যথা
চোখের সমস্যা হলে তার উপসর্গ কেবল চোখের চারপাশেই সীমিত থাকে না। একটানা মাথাব্যথাও হতে পারে। এক্ষেত্রে মাথার সামনের দিকে বা কপালে ব্যথা হয়। ব্যথা কমে-বাড়ে। ম্যাসাজ করলে অনেক সময় এই ব্যথা কমে যায়।

আরও পড়ুন-ব্রহ্মপুরে এক্সপ্রেস ট্রেনে ধোঁয়া, বিপাকে যাত্রীরা

সাইনাস-জনিত মাথাব্যথা
আমাদের মাথার ভিতর রয়েছে ছোট ছোট বায়ুভর্তি কুঠুরি যা মাথা হালকা রাখতে সাহায্য করে। কোনও সংক্রমণের কারণে এই অংশে সমস্যা হলে এই কুঠুরিতে প্রদাহ তৈরি হয়। তখন তীব্র মাথাব্যথা হয়। মাথা তুলতে বা চোখ খুলতে সমস্যা হয়। এটাই সাইনাস থেকে হয় তবে এর সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকে।
মাইগ্রেন-জনিত মাথাব্যথা
এই ব্যথা মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশে হতে পারে। সেই ব্যথা মাথা থেকে চোখেও চলে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞের মতে, মাইগ্রেনের ব্যথার পিছনে কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর কাজ করে যেমন— আলো, শব্দ, গন্ধ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন-জ্ঞানেশ্বরীর মতো পরিণাম যেন না হয়: সুখেন্দুশেখর

ব্রেন টিউমার-জনিত মাথাব্যথা
বিপদটা এখানেই। এত মাথাব্যথার ভিড়ে চেনা দায় কোনটা ব্রেন টিউমার-জনিত ব্যথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, মোট ২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ প্রতি বছর ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন। রেশিওটা কিন্তু খুব কম নয়। অতএব চিনে নিতে হবে।
ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার ধরনটা অন্য রকম হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই তীব্র মাথার যন্ত্রণা করে। ঘুমের মধ্যেও মাথাব্যথা হয় তাই রোগী ঘুম থেকে জেগেও সেই অনুভূতিটাই পায়। ব্যথা ক্রমে বাড়তেই থাকে।

আরও পড়ুন-বুলেট ট্রেন পাই বা না-পাই, বুলেট গতিতে মৃত্যু এল ট্রেনে

মাথাব্যথার সঙ্গে সারাক্ষণ বমি-বমি ভাব হয়।
মাথার ভেতরে চাপ বাড়ে তাই সবসময় মাথায় চাপ-চাপ অনুভূতি হতে পারে।
মাথার সামনে, পেছনে বা পুরো মাথাই দপদপ করে ব্যথা করবে।
সামনে ঝুঁকলে, কাশি বা হাঁচি হলে ব্যথা বেড়ে যায়।
প্রায় সবসময়ই মাথাব্যথা থাকে, বিশেষ করে সকাল আর বিকেলে ব্যথার পরিমাণ বেশি হয়।
প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধে ব্যথা সাময়িক কমলেও আবার ফিরে আসে। এর পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন খিঁচুনি, অনিদ্রা ইত্যাদি। তবে মূল উপসর্গ মাথার যন্ত্রণা। এই সময় যোগাযোগ করুন চিকিৎসকের সঙ্গে।
ব্রেন টিউমারের পরোক্ষ কারণ
এই রোগের প্রত্যক্ষ কারণ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। সবচেয়ে খারাপ ধরনের ব্রেন টিউমারের জন্য ক্রোমোজোম অনেকটা দায়ী। তবে এর পরোক্ষ কারণ অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার, মোবাইল টাওয়ার, ইয়ার ফোনের ব্যবহার ব্রেন টিউমারে ঝুঁকি বাড়ায়। যাঁরা কাজের জন্য নিয়মিত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসেন তাঁদের এবং বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। সঙ্গে রয়েছে ফুড হ্যাবিট।

আরও পড়ুন-দিলীপ ও গদ্দারকে গ্রেফতারের দাবি

ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কমায় যে খাদ্য
বিনসকে ডায়েটে রাখুন। বিনস শুধু ব্রেন টিউমারের বিরুদ্ধে সক্রিয় এবং মস্তিষ্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরির মতো ফলগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র‍্যাডিক্যালের সঙ্গে লড়াই করে যে কোনও ক্যানসার যা টিউমার থেকে হয় তা থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
টমেটোর মধ্যে লাইকোপেন রয়েছে যা ক্যানসারের কোষকে প্রতিরোধ করে। তাই ডায়েটে টমেটো অবশ্যই রাখুন।

আরও পড়ুন-জ্ঞানেশ্বরীর মতো পরিণাম যেন না হয়: সুখেন্দুশেখর

হলুদ ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কমায়। যে-কোনও ক্যানসারের কোষের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে তোলে।
ফ্ল্যাক্স সিড সুপারফুড নামে পরিচিত। নিয়মিত এই খাবার খেলে কোনও ভাবেই ব্রেন টিউমার তথা ক্যানসারের ঝুঁকি থাকবে না।
রোজকারের ডায়েটে বাদাম বিশেষত দুটো আমন্ড অন্তত রাখুন। বাদাম ও শুকনো ফল শরীরের একাধিক মারণরোগকে প্রতিরোধ করতে কার্যকর ভূমিকা পান করে।
প্রতিদিন দুটো করে কাঁচা রসুনের কোয়া খান, দেখবেন রোগ-ভোগ দূরে পালিয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রসুন শরীর থেকে সমস্ত ক্যানসারের কোষকে দূর করতে সক্ষম।
যে-কোন ধরনের ম্যাগন্যান্সির অন্যতম কারণ সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি। এই ক্ষেত্রে সিট্রাস ফ্রুট-এর ভিটামিন সি শরীরে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রোগ প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলে এইসব ফল।
একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ফ্যাটি ফিশের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা ব্রেন টিউমার তথা যে কোনও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন-পুর কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে নজরদারি

ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায় যে খাদ্য
কৃত্রিম রং, কৃত্রিম চিনি, রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করে তৈরি খাবার পরিহার করতে হবে। পরিশোধিত খাবারের ব্যবহার কমাতে হবে। সাদা চাল, সাদা আটা, সাদা চিনি কম খাওয়াই ভাল। পরিশোধিত খাদ্যশস্য বিশেষ করে ময়দা সাদা করার জন্য যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। হটডগ, সালামি, সসেজ বহু মানুষের দৈনন্দিন খাবার। প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়াম নাইট্রেটের মতো ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ থাকে। ধূমায়িত বা উচ্চতাপে পোড়ানো মাংস নাইট্রেট বিক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হয়। প্রক্রিয়াজাত মাংস বর্জন করতে হবে। ক্যানফুড ব্যবহার কমাতে হবে। প্লাস্টিক বোতল, প্লাস্টিক প্যাকেট, প্লাস্টিকের বক্সে রাখা খাবার ব্যবহার কমাতে হবে।

Latest article