পিয়ালী মুখোপাধ্যায়: রসেবশে ব্লগার : কথায় আছে, অর্ধেক ভোজন শুধু ঘ্রাণে, নাকি ‘রসেবশে বাঙালি’-র কাছে এখন অর্ধেক ভোজন দর্শনেও? ভোজনরসিক বাঙালির কাছে অবশ্যই দ্বিতীয়টাও। সহজ কথায় বললে বাঙালি এখন শুধু জিভ দিয়ে চেখে নয়, মুখে তোলার আগে খাবার কতটা ‘স্টাইলিশ’, তা চেখে দেখছে দু’চোখ দিয়েও। শুধু স্বাদ নয়, খাবার দেখতে এমন হবে যাতে তা আপনার চোখ ছুঁয়ে যায়। মুখে তোলার আগে স্বাদ বা গন্ধ নেওয়ারও আগে খাবার কতটা স্টাইলের সঙ্গে ছবির মাধ্যমে পরিবেশন করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেটাও এখন প্রয়োজনীয়। এমনকী সেই খাবার আর তার স্টাইল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো আর সেই বিষয় নিয়ে ফুড-ব্লগিং এখন দারুণ জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন-আজ নন্দীগ্রাম যাচ্ছেন কুণাল, পতাকা ছিঁড়ে তৃণমূলকর্মীদের মেরে নন্দীগ্রামে গেরুয়া-সন্ত্রাস
এক কথায়, ফুড ব্লগিং হল খাদ্য সাংবাদিকতা।
খাবারের গুণমানকে ও বৈশিষ্ট্যকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, সেটা বুঝতে হলে অনলাইন ফুড সাইটগুলোর দিকে তাকাতে হবে। বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষ রোজ হাজারো পদের খাবার রান্না করছে, অর্ডার নিচ্ছে, বিক্রি করছে, অন্য অনেকে আবার সেসব খাবারের রিভিউ লিখছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামভর্তি মুখরোচক সব খাবারের ছবি। লেখাপড়া জানা ছেলেমেয়েরা আজকাল বিদেশে গিয়ে রান্নাবান্নার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন। এক কথায়, মা-ঠাকুমার রান্নাঘর এখন সোশ্যাল মিডিয়ার গুণে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।
আরও পড়ুন-ট্রেইল পাস জয়
বাঙালির নস্টালজিয়া : রান্নাঘর শুধুমাত্র বাঙালি পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকেই চিহ্নিত করে না, ভোর থেকেই বাড়ির সবচেয়ে ব্যস্ততম অংশ হিসেবেই গুরুত্ব পায়।
বাঙালিরা, যারা ভোজনরসিক হিসেবে পরিচিত তারা শুধু বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারই আস্বাদন করে না বরং অতিথিদের পরিবেশন করতেও আনন্দ পায় ।
বাঙালির খাবারের থালায় স্ন্যাকস থেকে শুরু করে মুখ্য কোর্স থেকে মিষ্টি পর্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্রময়। যদিও খাদ্যাভ্যাস, স্বাদ, পছন্দ এবং আইটেম সবসময়ে বিভিন্ন জেলা, সম্প্রদায় এবং ধর্মের সাথেই পরিবর্তিত হয়, তবে মৌলিক কোর্সটি সাধারণত একই থাকে যেখানে ভাত এবং মাছ একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। সম্ভবত এই কারণেই একজন বাঙালিকে প্রায়শই ‘মাছে-ভাতে-বাঙালি’ হিসাবে টাইপ করা হয়, যেখানে মাছ মানে মাছ এবং ভাত মানে সেদ্ধ ভাত।
আরও পড়ুন-উলুবেড়িয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সের ধাক্কায় হত ২, অবরোধে দুর্ভোগ
অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিরা বিভিন্ন রন্ধনসম্পর্কীয় প্রভাবকেও গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মোগল, চিনা, ব্রিটিশ এবং বিভিন্ন টাইপের ইউরোপীয় খানা। আসলে, বাংলার একটি সমৃদ্ধ এবং তাৎপর্যপূর্ণ অতীত রয়েছে, যাতে মুঘল এবং ব্রিটিশদের মতো বিভিন্ন বিদেশি আক্রমণকারীদের যেমন চাইনিজ, ফরাসি এবং ডাচদের মতো অন্যান্য অনেক বিদেশি সম্প্রদায়ের উপস্থিতিও প্রত্যক্ষ করা যায়।
ধীরে ধীরে চিরকালের ভোজনরসিক বাঙালিরা এই ধরনের বিদেশি সম্প্রদায়ের অনেক সুস্বাদু খাবার নিজেদের খাদ্যতালিকায় গ্রহণ করে। বিখ্যাত এবং জনপ্রিয়দের মধ্যে চাইনিজ খাবার যেমন চাউমিন, চাইনিজ স্যুপ, চিলি চিকেন, ও মুঘলদের মোগলাই খাবার যেমন বিরিয়ানি, কাবাব ও মুর্গ তন্দুর এবং ব্রিটিশ সহ অন্যান্যদের তৈরি বেকড মিষ্টান্ন, চপ এবং কাটলেটের বৈচিত্রময় পরিসর সত্যিই লোভনীয়। তবে সবের মধ্যে উল্লেখ্য হল সম্ভবত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রভাবিত চা ও কফি পানের অভ্যাস।
আরও পড়ুন-জামতাড়ায় মাটির নিচে অস্ত্র কারখানা খুঁজে পেল এসটিএফ
প্রতিযোগিতায় বাংলার খাবার : নিরপেক্ষ ভাবে বলা যায়, পৃথিবীর প্রায় ৪০–৪৫টি দেশের খাবারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলার খাবারের কোনও তুলনা হয় না। আমাদের মাছ, আমাদের সবজি, আমাদের টক, আচার, আমাদের মুরগির ঝোল, আমাদের পিঠা, পুলি, পায়েস, আমাদের রান্নার ধরন ও রকম— সব মিলিয়ে বাঙালির রোজকার খাবার পৃথিবীর যে কোনও দেশের খাবারের পাশে অনায়াসে অহংকার নিয়ে দাঁড়াতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, আমরা ইতিহাসের পথ ধরে যেসব বিদেশি খাবারকে আপন করে নিয়েছি ও নিচ্ছি, আবার সেসব খাবারের মধ্যে আমাদের নিজস্ব যেসব গুগলি দিচ্ছি, সেগুলোও কিন্তু লাজবাব। নিজেদের ঐতিহ্য যখন অনেক ঋদ্ধ হয়, তখন অন্যেরটাকে ধারণ করতেও কোনও দ্বিধা হয় না। আর ফুড-ব্লগিং-এর গুণে তা এখন সর্বময় হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন-ডেঙ্গি রুখতে জেলাগুলিকে সতর্ক করল নবান্ন
লোকে খাচ্ছে, বাহবা দিচ্ছে এবং নিজের করে নিচ্ছে। আবার সময় ও চাহিদামতো কখনও আবার সাদামাটা মাছ-ভাত ভাল না লাগলে তার মধ্যে একটুখানি ফিউশনও ঢুকে যাচ্ছে। মাছের ঝোল হঠাৎ ভোল পাল্টে লেমন ফিশ হয়ে যাচ্ছে। সে যাই হোক, মোদ্দা কথা হচ্ছে, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বাঁচার জন্য খায়, আর বাঙালি খাওয়ার জন্য বাঁচে।
আবার শহুরে মানুষের খাবার-দাবার এবং গ্রামের মানুষের খাবার দাবারের মধ্যেও অনেক পার্থক্য আছে। শহরের মানুষ আগামী কাল কী রান্না করবে তা চিন্তা করে রাখে কিন্তু গ্রামের মানুষের সেই চিন্তা নেই। গ্রামের মানুষ সকালে উঠে চিন্তা করে দুপুরে কী রান্না করবে।
আরও পড়ুন-দলের আদি কর্মীদের সম্মান
ফুড-ব্লগিং ও ফুড-স্টাইলিং : এক কথায় ফুড ব্লগিং একটি সহজ, বিনামূল্যের শখ, কিন্তু এই ধরনের তথ্যপূর্ণ, ভিজ্যুয়াল ট্রিট তৈরি করা সহজ কাজ নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি শিল্প এবং যে কোনও গুরুতর শিল্পের মতো, এটির জন্য প্রচুর পরিশ্রমের প্রয়োজন। যে কোনও রাঁধুনি যাঁরা তাঁদের রেসিপিগুলোকে পূর্ণতা দিতে চান, তার জন্য শুধু রন্ধনসম্পর্কীয় দক্ষতাই নয়, ফটোগ্রাফির প্রতিভা এবং একজন দক্ষ লেখনীরও প্রয়োজন।
ফুড ব্লগগুলি প্রথম দিকে সাধারণত খাদ্য উৎসাহীদের পাগলামিতেই শুরু হয় এবং যেগুলিকে প্রায়ই ‘খাদ্যপ্রিয়’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ব্লগাররা লাভ অর্জনের জন্য ফুড-ব্লগগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে থাকেন। প্রথম ফুড ব্লগটি ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে চৌহাউন্ড ওয়েব সাইটে জিম লেফ একটি চলমান উদাহরণস্বরূপ হিসাবে চালু করেছিলেন।
আরও পড়ুন-মাল-দুর্ঘটনা ছটপুজোয় সতর্কতা
বর্তমানে ফুড ব্লগগুলিতে রান্নার বই, লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনের বিষয়ও মিলিত হয়েছে৷ ব্লগাররা এখন হোম কুক থেকে শুরু করে তাঁদের পছন্দের সৃষ্টিও শেয়ার করতে উপভোগ করেন। বিখ্যাত শীর্ষ শেফ যারা ভার্চুয়াল স্পেস ব্যবহার করে তাঁদের চূড়ান্ত রেসিপি এবং শীর্ষ টিপস পর্যন্ত শেয়ার করেন।
একই সঙ্গে বিভিন্ন ফুড রেসিপি, খাদ্য/রেস্তোরাঁর পর্যালোচনা, খাদ্য এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত আলোচনা এবং ফুড ফটোগ্রাফি এবং বিশদ রেসিপিতে পরিপূর্ণ খাদ্য ব্লগগুলি ভার্চুয়াল খাদ্যপ্রেমীদের সঠিক চাহিদা মেটাতে গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে এগিয়ে এসেছে। বলা যেতে পারে, ফুড ব্লগিং এখন ডিজিটাল স্কিল নির্ভর ব্যবসা রূপে বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন দিকের সন্ধান দিয়েছে।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে মালবাজারে প্রস্তুতি তুঙ্গে
নেশার পেশা : শুধু খাবার টেবিল বা রান্নাঘরেই খাবারের প্রতি ভালবাসা আর আটকে থাকে না৷ খাবারদাবার নিয়ে চিন্তাভাবনা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য ব্লগ লেখা শুরু করে উৎসাহী খাদ্যরসিকরা। শুরু হয় ফুড-ব্লগিং। বর্তমানে ফুড ব্লগিং নিয়ে উৎসাহও বেশ নজরে পড়ার মতো৷ অনেকেই পুরোদস্ত্তর পেশা হিসেবে ফুড ব্লগিংকে বেছে নিচ্ছেন আজকাল৷ তবে ফুড ব্লগিং কিন্তু বেশ পরিশ্রমসাধ্য কাজ৷ সফল ফুড ব্লগার হয়ে উঠতে তাই মাথায় কিছু টিপস রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। কনটেন্টের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা, নিয়মিত ইন্টারনেটে ফুড ব্লগে খাবার সম্পর্কে নিজ অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করা, সেটা কোনও রেস্তোরাঁর খাবার প্রসঙ্গেই হোক, অথবা নিজের কোনও রেসিপিই হোক, সৎ চিন্তার প্রকাশ হল ফুড-ব্লগিং-এর অন্যতম শর্ত৷ তাছাড়া ফুড ব্লগিং-এর ক্ষেত্রে ছবি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাল ছবির উপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ ক্রিয়েটিভ আইডিয়াগুলোকে এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মতো করে তার স্বাস্থ্যসম্মত দিকটা ব্যক্ত করা, নিয়মিত ব্লগে পোস্ট করা, ব্লগে অন্যের কমেন্ট লেখার পথ প্রশস্ত রাখা, ইত্যাদি হল ফুড-ব্লগিং-এর অন্যতম শর্ত।
আরও পড়ুন-দলের আদি কর্মীদের সম্মান
পেশায় যখন ফুড-ব্লগার : ফুড-ব্লগিং এখন নেশা ও পেশার অন্যতম নিদর্শন এমন দু’জনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁদের এই বিষয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি হল কীভাবে? কবে থেকে শুরু করেছিলেন? কীভাবে এই বিষয়ে কাজ করেন? কতটা সময় দেন? কোন কোন খাবারের গুণমানকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন?
রাজারহাটের বাসিন্দা সুপ্রিয় মজুমদার জানান, নতুন নতুন খাবারের প্রতি কৌতূহল থেকেই তিনি ফুড-ব্লগিং শুরু করেন ২০১৮ সালে। এছাড়াও ইনস্টাগ্রাম, জোশ অ্যাপ WordPress-এ খাবারের ছবি/ভিডিও দেন, লেখালিখিও করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে collaboration করার মাধ্যমে উপার্জন করেন। এছাড়া এই কয়বছরে ইনস্টাগ্রাম বা জোশ অ্যাপ থেকেও কিছু rewards/ goodies পেয়েছেন। তাঁর মতে, এখন গলৌটি কাবাব, মটন কালা ভুনা, বিরিয়ানি ইত্যাদি কলকাতার খাদ্যপ্রেমীদের প্রিয় খাবার, এমনকী তিনিও এগুলো খেতে অত্যন্ত পছন্দ করেন। তাঁর মতে, কলকাতার মিষ্টি এমনই যা সারা ভারতে অন্যতম। এই প্রসঙ্গে তিনি ফেলু মোদকের মোহিনী সন্দেশ, নকুরের জলভরা, অমৃত-র দই-এর উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন-সিএবি নির্বাচনে লড়বেন সৌরভ
দমদম এয়ারপোর্টের নিকটস্থ নিবাসী বাঁধন সরকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী। আত্মীয়-স্বজন থাকার সূত্রে তাঁর এপার-ওপার দুই বাংলার খাবারের সঙ্গেই পরিচিতি। তিনিও একজন বিশিষ্ট ফুড-ব্লগার। পড়াশোনার পাশাপাশি এই পেশায় নিজের উৎসাহকে কাজে লাগিয়েছেন। ২০২১, ২০২২-এ তিনি এই সূত্রে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট তাঁকে নিজেদের খাবারের গুণমানকে সকলের সামনে জনপ্রিয় করবার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এছাড়াও জোশ, জোম্যাটো, গুগল ইত্যাদিতে রেস্টুরেন্ট পরিচিতিতে তিনি সাহায্য বা লেখালেখি করেন। প্রথম দিকে ফেসবুককে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কেন্দ্র করে শুরু করেছিলেন ফুড-ব্লগিং। এখন সেটাই ইনস্টাগ্রাম ছাড়িয়ে ব্যাপ্তিতে বিশালতা লাভ করেছে। তিনি বিরিয়ানি-বিভাগে ‘কাচ্চি বিরিয়ানি-র’ কথা বললেন, যা স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়।
আরও পড়ুন-নন্দীগ্রাম থানা এবার ডিএসপি সদরের নিয়ন্ত্রণে
মূলত একই উদ্দেশ্য নিয়ে খাবার সম্পর্কে জানা, এর দাম, মান, স্থানভেদে খ্যাতি এবং সুস্বাদু খাবারের বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে একদল খাবারপ্রেমী মানুষও ফেসবুকের একটা গ্রুপের মাধ্যমে শুরু করে ফুড ব্লগিং। যদিও প্রথমে এটা ফুড ব্লগিং হিসেবে পরিচিত ছিল না। আস্তে আস্তে এখানে যুক্ত হয় লেখা ও ছবিপ্রেমী মানুষজন। নান্দনিক লেখা ও রুচিশীল ছবির মাধ্যমে মানুষজন তুলে ধরে খাবারের স্বাদকে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে ফুড ব্লগিং, যা এখন ফেসবুককে ছাড়িয়ে ইনস্টাগ্রামেও বেশ সাড়া ফেলছে।
আরও পড়ুন-খোয়াইহাটে বহু সুবিধাযুক্ত ভ্রাম্যমাণ বাস চালু
আর ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে কেন্দ্র করেও গড়ে উঠছে ফুড ব্লগিং। এতে করে নতুন জায়গায় খাবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে কারও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। ফলে অর্থ, সময় দুটোই সাশ্রয় হওয়াতে এই ফুড ব্লগিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফুড ব্লগাররা সাধারণত ক্রেতার মতোই যান রেস্তোরাঁয়। খাওয়া-দাওয়া করেন এবং খেয়াল রাখেন কর্মীরা রেস্তোরাঁর নিয়মকানুন মেনে চলছেন কি না! তারপর নিজেদের মতো করে রিপোর্ট তৈরি করেন তাঁরা। তাঁর মতে, ‘‘এই কাজে যুক্ত হওয়ার সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল, নজর রাখার ক্ষমতা। শুধু খাবারের স্বাদ যাচাই করলেই হবে না। রেস্তোরাঁ যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন কি না, কর্মীরা ঠিকমতো সেবা দিচ্ছেন কি না, খেয়াল করতে হবে সবই।
ফুড ব্লগিংকে অনেকেই পেশা বলে মনে করেন। তবে এটাকে পেশা হিসেবে না বলা গেলেও তা ফুড ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয় অংশ। খাবারের রেসিপি, রেস্তোরাঁর রিভিউ, ফুড স্টোরি সবই থাকতে পারে ফুড ব্লগে। এ ছাড়া খাবারের ছবি হতে হবে এমন যা চোখে দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে! এই দায়িত্বটাই পালন করেন ফুড ব্লগাররাই।
আরও পড়ুন-জামতাড়ায় মাটির নিচে অস্ত্র কারখানা খুঁজে পেল এসটিএফ
‘‘ফুড ব্লগার হতে গেলে শুধু খেতে ভালবাসলে হবে না। খাবার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। বিভিন্ন খাবার সম্পর্কে জানাটাও জরুরি।” এমনটাই মনে করেন বেহালা নিবাসী অমিতাভ ব্যানার্জি। নেশায় একজন ক্রিয়েটিভ রাঁধুনি। খেতে এবং খাওয়াতে অত্যন্ত ভালবাসেন। আর নতুন নতুন রান্না, খাবারের নাম, নতুন রেসিপি, নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট আবিষ্কার করতে অত্যন্ত ভালবাসেন। ব্লগিং-এর সঙ্গে অতটা পরিচিত হয়তো নন, কিন্তু একজন সফল খাদ্যরসিক তো বটেই। তাঁর মতে, ‘‘ফুড-ব্লগিংয়ের মাধ্যমে সকলের মাঝে একটা কালচারাল বদল হচ্ছে বলেই আজ কলকাতায় তৈরি হয়েছে নানা বিদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট।” তাই বাংলাদেশের ‘কালাভুনা’ আজ এপার বাংলাতেও হয়েছে সাংঘাতিক জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন-নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রাম, উদাসীন বিজেপি পঞ্চায়েত
ডিজিটাল বিশ্ব ও ফুড-ব্লগিং : ডিজিটাল বিশ্ব যেভাবে রেসের লাগামহীন ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছে তাতে পরিবর্তন এসেছে জীবনযাত্রার মানে এবং কর্মক্ষেত্রেও। এরকম ভাবেই বিভিন্ন ফুড-ব্লগাররা নিজের খাদ্য-রসিকতার মাধ্যমে একটা নতুন প্রোজেক্টের জন্ম দিয়েছেন। ফুড-ব্লগিং, ফুড-স্টাইলিং এখন তারই একটা জ্বলন্ত নমুনা। তাই বলা যেতে পারে যে, ভাল থাকুক খাদ্যরসিকের দল আর ফুড-ব্লগাররা।