ইতিহাস বিকৃতি! এবার জাতীয় প্রতীককেও বদলানোর চেষ্টা বিজেপির

কংগ্রেস নেতা মণিকম টেগোর বলেছেন, গত ৭৫ বছর ধরে দেশে জাতীয় প্রতীক একইরকম ছিল। হঠাৎ করে সংঘপন্থীরা নয়া প্রতীক নিয়ে এসেছেন।

Must read

নয়াদিল্লি : ভারতের জাতীয় প্রতীককে অপমান করেছে মোদি সরকার। বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের। একই অভিযোগ তুলে সরব অন্য বিরোধী দলগুলিও। নতুন সংসদভবনের মাথায় জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্রোঞ্জের যে নতুন অশোকস্তম্ভ বসানো হয়েছে সেখানে স্তম্ভে সিংহের প্রতিকৃতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলল তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। সোমবার নতুন সংসদভবনের আবরণ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে কোনও বিরোধী দলের নেতা এমনকী কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও ডাকা হয়নি।

আরও পড়ুন-দ্রুত খুলছে ডিপিএল-জট

আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন এই নতুন সংসদভবনেই বসার কথা। নতুন সংসদভবনের উপর জাতীয় প্রতীক উন্মোচনের পর থেকেই বিতর্কে জড়িয়েছে মোদি সরকার। একদিকে যেমন অভিযোগ উঠছে লোকসভার স্পিকারের মাধ্যমে উদ্বোধন না করিয়ে সংবিধানের লঙ্ঘন করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তেমনই অন্যদিকে জাতীয় প্রতীককে বিকৃত করার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের সম্মিলিত তোপের মুখে বিজেপি পাল্টা বলেছে এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদিও বিরোধী নেতারা বলছেন, ইতিহাস বিকৃতির যে প্রবণতা মোদি জমানায় দেখা যাচ্ছে তারই সর্বশেষ নমুনা সংসদভবনের জাতীয় প্রতীক। ভারতের চিরাচরিত অশোকস্তম্ভের প্রতীকের চেয়ে অনেকটাই আলাদা মোদির উদ্বোধন করা অশোকস্তম্ভ। বিরোধীদের কটাক্ষ, ইতিহাস বদলাতে গিয়ে এবার জাতীয় প্রতীকও বদলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-কোচের দায়িত্ব ছাড়লেন অরুণ

সংসদভবনের মাথায় যে জাতীয় প্রতীক বসানো হয়েছে তা ব্রোঞ্জের তৈরি। সাড়ে ছ’মিটার উচ্চতার প্রতীকের ওজন সাড়ে ন’হাজার কেজি। সাধারণভাবে অশোকস্তম্ভে যে সিংহমূর্তিগুলির প্রতিকৃতি থাকে তাদের চেহারায় দেখা যায় শান্ত অথচ রাজকীয় মেজাজ। এই রাজকীয় মেজাজকেই অসাধারণ আঙ্গিকে প্রতিফলিত হতে দেখা যায় সিংহমূর্তির অবয়বে। অথচ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদভবনের চূড়ায় যে প্রতীকের আবরণ উন্মোচন করেছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ এবং হিংস্রভাবে দাঁত বের করা সিংহমূর্তি। চিরাচরিত জাতীয় প্রতীকের পাশে বর্তমান ছবিটি রাখলেই স্পষ্ট হচ্ছে বৈপরিত্য। এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার ট্যুইট করে বলেছেন, নতুন সংসদভবনে অশোকস্তম্ভ যা করা হয়েছে তা আমাদের জাতীয় প্রতীকের অবমাননা। রাজকীয় অশোকস্তম্ভের সিংহটি যেখানে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী সেখানে মোদি জমানার সিংহের চেহারাটি হল রাগে দাঁত বের করা, অপ্রয়োজনীয় আক্রমণাত্মক এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বিকৃতি লজ্জার। অবিলম্বে এর পরিবর্তন দরকার। লোকসভার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁর ট্যুইটে অশোকস্তম্ভ দুটির পাশাপাশি ছবি দিয়ে তুলনা করে তীব্র সমালোচনা করেছেন মোদি সরকারের। তৃণমূলের আর এক নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ কীর্তি আজাদ ট্যুইটারে লিখেছেন, অমর জওয়ান জ্যোতি সরিয়ে দেওয়ার এবার জাতীয় প্রতীকে বদল! নিদারুণ লজ্জার।

আরও পড়ুন-নতুন কেলেঙ্কারিতে অধিকারী পরিবার, দুর্নীতি মামলায় তলব কৃষ্ণেন্দু ও দিব্যেন্দু-পত্নী

কংগ্রেস নেতা মণিকম টেগোর বলেছেন, গত ৭৫ বছর ধরে দেশে জাতীয় প্রতীক একইরকম ছিল। হঠাৎ করে সংঘপন্থীরা নয়া প্রতীক নিয়ে এসেছেন। আসল এবং নকলের পার্থক্য স্পষ্ট। রাষ্ট্রীয় জনতা দল জাতীয় প্রতীক বিকৃতির কড়া সমালোচনায় বলেছে, আসল প্রতীকের চেহারায় শান্ত, সুভদ্র মেজাজ আর অমৃত যুগে তৈরি প্রতীকে হিংস্র, নরখাদক প্রবণতার আভাস। যেকোনও প্রতীক মানুষের অভ্যন্তরীণ চিন্তাভাবনা প্রতিফলিত করে। নয়া প্রতীকেও সরকারের মনোভাবই যে প্রতিফলিত তা বোঝাতে চেয়েছে লালুর দল। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেছেন, সংসদ এবং প্রতীক ভারতের জনগণের। কোনও এক ব্যক্তির নয়। সিপিএম বলেছে, ক্ষমতার সাংবিধানিক পৃথকীকরণ। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে। সিপিআইএমএল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জাতীয় প্রতীক বিকৃতির নিন্দা করেছেন। একইভাবে সংসদভবনে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় প্রতীক উন্মোচনের সমালোচনা করেছেন সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েসিও।

Latest article