মর্যাদার ডার্বিতে লড়াই আবেগ ও মগজাস্ত্রের, বাগানকেই এগিয়ে রাখছেন ব্যারেটো

Must read

প্রতিবেদন : আইএসএলে ডার্বি জয়ের হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু হাইভেল্টেজ ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে বেশ সতর্ক অ্যান্তোনিও লোপেজ হাবাস। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশ কোচের চিন্তার কারণ, এবারের ইস্টবেঙ্গল বদলে যাওয়া নতুন একটা দল। ধারে-ভারে হাবাসের দল অনেক এগিয়ে থাকলেও শনিবারের বড় ম্যাচ নিয়ে সাবধানী বাগান কোচের উপলব্ধি, এই ম্যাচ একেবারে নতুন। তার উপর ডার্বি হওয়ায় আগের পরিসংখ্যান, রেজাল্ট মাথায় রাখা যায় না।
রয় কৃষ্ণদের কোচের কথায়, ‘‘ডার্বির গুরুত্ব বুঝি। গোয়ায় বসেই কলকাতার সমর্থকদের প্রত্যাশা বুঝতে পারছি। সমর্থকদের জন্যই এই ম্যাচ আমরা জিততে চাই।’’ হাবাস সাফ জানিয়ে দিলেন, এটা আর একটা ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল প্রথম ম্যাচ ড্র করলেও ভাল ফুটবল খেলেছে।
আপফ্রন্টে কৃষ্ণ, বৌমাস, লিস্টনদের ফর্ম বাগানের এক্স ফ্যাক্টর। কিন্তু ডার্বি জিততে হাবাসের অস্ত্র টিম গেম। স্প্যানিশ কোচের বক্তব্য, ‘‘আমার দলে শুধু কৃষ্ণ, হুগো নেই। কার্ল ম্যাকহিউ, প্রীতম কোটাল, অমরিন্দর সিংরাও আছে। দলগত পারফরম্যান্সই সাফল্য এনে দেয়। কাউকে আলাদা করে নয়, সবার সমান গুরুত্ব আমার কাছে। ঠিক যেমন প্রত্যেক ম্যাচকে আমি সমান গুরুত্ব দিই। গতবার ডার্বিতে কী হয়েছে, সেটা অতীত। নতুন করে এই ম্যাচে সমর্থকদের জয়ের স্বাদ এনে দিতে হবে। চেষ্টা করব এই ম্যাচেও একশো শতাংশ জয়ের রেকর্ড ধরে রাখতে।’’ তিরি চোট সারিয়ে এখনও ফিট নন। তাই আগের ম্যাচের রক্ষণ কম্বিনেশনই খেলাতে পারেন হাবাস। লেফট উইং ব্যাকে সুসাইরাজ হতে পারেন স্প্যানিশ কোচের অন্যতম সেরা বিকল্প। তাঁকে প্রথম একাদশে হাবাস রাখেন কি না, দেখার। বাগান কোচ বলছেন, ‘‘কেরলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচকে হালকাভাবে নিয়েছিল ফুটবলাররা। মাঠে ৯০ মিনিট সমান গুরুত্ব দিতে হবে।’’ বিপক্ষ দলে চিমা, পেরোসেভিচের মতো স্ট্রাইকারদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা নেই মোহনবাগান কোচের। ‘‘খেলাটা এগারোজনের। ওদের সবাইকে নিয়ে ভাবতে চাই।’’

আরও পড়ুন : ডিএসপিতে বেতনচুক্তি নিয়ে ক্ষোভ

ইস্টবেঙ্গলের নতুন স্প্যানিশ কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজ অতীত মনে রাখতে চান না। এটিকে মোহনবাগান কোচের কাছে শনিবারের বড় ম্যাচ যতই আর পাঁচটা ম্যাচের মতো হোক না কেন, লাল-হলুদের স্প্যানিশ বসের কাছে ডার্বির গুরুত্ব আলাদা। সমর্থকদের কথা ভেবে মর্যাদার ডার্বি জয়ের অঙ্ক দিয়াজের। প্রথম ম্যাচে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছিল। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই টিমের বাঁধন মজবুত করেই শনিবাসরীয় মেগা ম্যাচে পরীক্ষায় বসছেন রিয়াল মাদ্রিদের বি দলের প্রাক্তন হেডস্যার। এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে আন্ডারডগ বলা হচ্ছে। এই তকমা নিয়ে অবশ্য একেবারেই ভাবছেন । অরিন্দম-পেরোসেভিচদের কোচ। দিয়াজ সাফ বলে দিলেন, ‘‘আমরা আন্ডারডগ তকমা মাথায় রাখছি না। নিজেদের সেরাটা মাঠে উজাড় করে দেব। এটিকে মোহনবাগান শক্ত প্রতিপক্ষ। ওদের নিয়ে আমরা সতর্ক। ওরা এএফসি কাপ খেলে প্রস্তুতি সেরেছে। তবে আমরা ওদের বেগ দিতে তৈরি।’’ হুগো বৌমাস, রয় কৃষ্ণ, লিস্টন কোলাসোর মতো তারকাদের নিয়ে গড়া সবুজ-মেরুন আক্রমণভাগকে আটকাতে লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচের স্ট্র্যাটেজি ছকা হয়ে গিয়েছে। ডার্বির ২৪ ঘণ্টা আগে শুনিয়ে রাখলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ওদের আটকানোর পরিকল্পনা থাকবে। জোনাল মার্কিং, নাকি ম্যান মার্কিং হবে, তা পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক হবে। তবে বিপক্ষ দলে আরও অনেক ভাল ফুটবলার আছে, তাদের নিয়েও ভাবতে হবে।’’ ইস্টবেঙ্গল কোচ বুঝিয়ে দিলেন, ঐতিহ্যের ডার্বি জিততে প্রতিআক্রমণই অস্ত্র। দিয়াজ বললেন, ‘‘এটিকে মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ ডিফেন্স করা যায় না। অনেক বেশি পাস খেলে অ্যাটাকিং হাফে সুযোগ তৈরি করতে হবে।’’ বিপক্ষের দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই বড় ম্যাচ জিততে চাইছেন দিয়াজ। ডাচ মিডফিল্ডার ড্যারেন সিডওয়েলকে মাঝমাঠের নেতৃত্বে আনতে পারেন স্প্যানিশ কোচ। বললেন,‘‘ড্যারেন আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বড় ম্যাচের জন্য ওকে ভাবা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন : ডিএসপিতে বেতনচুক্তি নিয়ে ক্ষোভ

এদিকে মোহনবাগান আর জোস রামিরেজ ব্যারেটো প্রায় সমার্থক হয়ে যাওয়া নাম। বহু ডার্বি মোহনবাগানকে জিতিয়েছেন সবুজ তোতা। ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়েছেন ১৭ বার। সেই ব্যারেটো শনিবারের আইএসএল ডার্বি নিয়ে বেশ উৎসাহী। এবার দু’দলের প্রথম ম্যাচ যেটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে তাতে ব্যারেটোর মনে হয়েছে, এটিকে মোহনবাগান অনেক এগিয়ে থেকেই বড় ম্যাচ খেলতে নামবে। মুম্বইয়ে রিলায়েন্স অ্যাকাডেমির খুদে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় ব্রাজিলীয় তারকাকে। ব্যস্ততার মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপ কলে ব্যারেটো বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের একটা ম্যাচ দেখে মতামত দেওয়ার সময় আসেনি। কিন্তু এটিকে মোহনবাগান পরীক্ষিত। ওদের রক্ষণ একটু কমজোরি লাগলেও মোহনবাগানের আক্রমণভাগ শক্তিশালী। এবার হুগো দলে যোগ দেওয়ায় শক্তি আরও বেড়েছে। কাউকোও মাঝমাঠে ভারসাম্য বাড়িয়েছে।’’ এর পর বাগানের বহু ডার্বি জয়ের নায়ক যোগ করলেন, ‘‘এই ম্যাচে ফরোয়ার্ড লাইন যাদের ভাল তারা একটু সুবিধা পায়। গোল খেলে গোল দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কোচ তখন রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিতে পারে। হাবাসের দলের আক্রমণভাগ শক্তিশালী হওয়ায় ওদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীররা কী করতে পারে আমরা জানি। হুগোও গোল করছে। সেখানে একটা ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স দেখে ডার্বিতে তাদের নিয়ে খুব আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।’’

Latest article