নারীঘাতী কুৎসিত বীভৎসা পরে হানিতে পারি যেন…

অশান্ত মণিপুর। জাতিদাঙ্গা আর গোষ্ঠীসংঘর্ষে রোজ বাড়ছে মৃত্যুর খতিয়ান। কেন্দ্রীয় সরকারের বিস্ময়কর নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করেছে। আসলে এই হিংসার উল্লাসের পিছনে আছে গেরুয়া পার্টির বিভাজনকারী রাজনীতি, বিদ্বেষের বীজ বপন। সব মিলিয়ে গোটা ব্যাপারটার জন্য দায়ী এক পক্ষই। সেই পক্ষের গায়ে গেরুয়া জার্সি। লিখছেন দেবু পণ্ডিত

Must read

প্রায় প্রতিদিন একটা একটা করে নতুন নতুন নির্যাতন কাহিনি প্রকাশ্যে আসছে। মণিপুরের ডবল ইঞ্জিন সরকারের অপকীর্তি একটা একটা করে ফাঁস হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনাই নারী নির্যাতনের ঘটনা। মোদিজির আশীর্বাদপুষ্ট সরকারের ‘বেটি বাঁচাও’ স্লোগানের অসারত্ব প্রকটিত প্রতিটি ঘটনায়।
৩ মে, ২০২৩। ৬২ বছর বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত আমলা থাঙ্গি হামারের বাড়ি দুষ্কৃতীরা রাতে লন্ডভন্ড করে দিল। নির্যাতিত হলেন শ্রীমতী হামার। বাড়ি পুড়িয়ে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাওয়ার সময় থাঙ্গির দুটো কুকুরও নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

আরও পড়ুন-বনবিজ্ঞানী হয়ে নজির গড়লেন কৃষক কন্যা

৪ মে, ২০২৩। রাজ্য সরকারের সচিব পদে আসীন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ৫৭ বছর বয়সি গৌজাভুঙের ছেলে ও পুত্রবধূ ইম্ফলে তাঁদের সরকারি বাসস্থান থেকে দু’কিমি দূরের ত্রাণ শিবিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দুষ্কৃতী হামলার শিকার হলেন তাঁরা। শ্রীমতী গৌজাভুঙের আপ্রাণ চেষ্টায় প্রাণে বাঁচলেও বিশ্রীভাবে আহত হয়ে এখনও শয্যাশায়ী তাঁর পুত্রবধূ।
৪ মে, ২০২৩ সকালের ঘটনা। ইম্ফল থেকে সপরিবারে চিংথিয়ানিয়াঙ ত্রাণ শিবিরে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে ২০০-২৫০ জনের একটা দল তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করল। শ্রীমতী চিংথিয়ানিয়াঙকে গাড়ি থেকে ট্রেনে নামায় তারা। মেরে মাথা ফাটিয়ে ফের। তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে মেরে ফেলে দাঙ্গাবাজরা।

আরও পড়ুন-ত্রিপুরা বিজেপিতে গৃহযুদ্ধ চরমে, ২২ গজেও শাসক দলের দ্বন্দ্বের ছায়া

৪ মে, ২০২৩ সন্ধ্যার ঘটনা। পেরোমপত, ইম্ফলের নাইটিঙ্গেল নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রী অ্যাগনেস নেইখোহাট তাঁদের হোস্টেলে দুষ্কৃতী হামলায় শিকার হন। লাঠিপেটার শিকার হয়ে ওই ছাত্রী জ্ঞান হারান। সামরিক বাহিনীর প্রহরায় তাঁকে লামকার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
৪ মে ২০২৩-এ বিকেল ৫টা থেকে সন্ধে ৭টার মধ্যেকার একটা ঘটনা। মেইতেই মহিলারা লামকায় ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা হচ্ছেন, এই ভুয়ো খবর রটিয়ে দেওয়া হয়। পরিণামে ইম্ফলে একটি গাড়ি ধোয়ার কেন্দ্রে দু’জন কুকি-জো মহিলা কর্মীরা ওপর হামলা হয়। উপস্থিত মেইতেই মহিলারাও ওদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলার দাবি তোলে। দুই কুকি-জো মহিলা কর্মী হামলাকারীদের হাতে নিহত হন।
৪ মে, ২০২৩-এই বিবস্ত্র করে দু’জন কুকি-জো মহিলাকে হাঁটানো হয়। এঁদের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় চারিদিকে এত হইচই, এত কুমিরের কান্না।
ওইদিনই মা ও তাঁর দুই মেয়েকে হত্যা করা হয় ইম্ফলের উরিপোকে। এঁদের হত্যা করার পেছনে উসকানি ছিল একটি ভুয়ো ভিডিওর। তাতে দেখানো হয়, লামকায় দু’জন মেইতেই মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। পরে জানা যায়, ওই দু’জনের অন্তত একজন দিল্লির বাসিন্দা। সে খুন হয়েছিল, তবে কোনও জাতি দাঙ্গায় নয়। তার বাবা-মা তাকে খুন করেছে।

আরও পড়ুন-দিনভর উত্তাল সংসদে একজোট ইন্ডিয়া

৫ মে, ২০২৩। নিউ লামকার বিকাশ হোটেলের সামনে গুলি করে মারা হল নিয়ংঘোইচিং সিমতেকে। নিয়ংঘোইচিং ২০২১ থেকে চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৬ মে ২০২৩। কাংপোকোই জেলার কেইতাইচিং গ্রামের ৪৫ বছর বয়সি থিয়াংডাম ভাইকেই, দুই মেয়ের মা ও বিধবা। তাঁর মাথা, হাত, পা কেটে দেওয়া হল। বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হল।
১৫ মে, ২০২৩। ইম্ফলের চেকঅনে একটা এটিএম-এ টাকা তুলতে এসেছিল ১৮ বছর বয়সি একটি মেয়ে। তাকে অপহরণ করে পালাচ্ছিল একদল মেইতেই দুষ্কৃতী। উদ্দেশ্য ছিল বিষ্ণুপুরে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া। ধর্ষিতা মেয়েটি এক মুসলমান অটো রিকশা চালকের সাহায্যে পালাতে সমর্থ হয়।

আরও পড়ুন-তৃণমূল করার দায়ে জমির ধানবীজ নষ্ট করল বিজেপি

৪ জুন, ২০২৩। ত্রাণ শিবিরে পৌঁছনোর আগেই অ্যাম্বুল্যান্সে অগ্নিসংযোগের কারণে ৪৫ বছর বয়সি মীনা হাংসিং এবং লিডিয়া লেটরেবাম জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। পুড়ে মরে মীনার ৭ বছর বয়সি ছেলে তংসিংও।
১০ জুন, ২০২৩। ভোর চারটের সময় ৬৫ বছর বয়সি শ্রীমতী ডিখোহই-সহ আরও দুই ব্যক্তিকে খোকেন গ্রামে হত্যা করে একদল দুষ্কৃতী। শ্রীমতী ডিখোহই তখন গ্রামের গির্জায় প্রার্থনা করছিলেন।
৬ জুলাই, ২০২৩। পশ্চিম ইম্ফলে শিশু নিষ্ঠা স্কুলের বাইরে গুলি করে মারা হয় দোন্নাগাইচিং নামে এক কুকি মহিলাকে। নিহত দোন্নাগাইচিং স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন-মঙ্গলাহাটের তালিকা নিয়ে সঙ্কট

৫ মে, ২০২৩। লাং গিং-এর এক কুকি মহিলা বিয়ে করেছিল এক মেইতেই যুবককে। তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাঁকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে ধর্ষণ ও খুন করে দুষ্কৃতীরা। মহিলার দেহ একটা ধানখেতে পড়েছিল।
মণিপুরে নারী নির্যাতনের ঘটনাবলিকে লঘু করে দেখানোর জন্য যাঁরা উপমা খুঁজছেন, তাঁদের একটা কথাই বলব। মনুষ্যত্বহীনতার অন্তিম কূপে নিজেদের অসংবেদনশীল হৃদয় বন্দি রাখবেন না।
ছিঃ! আপনাদের ধিক্কার।

Latest article