মোদি জমানার গৈরিকীকরণ! পাঠ্যসূচি থেকে মোছা হল মুঘল জমানার ইতিহাস

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের চক্রান্ত বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সরব হয়েছেন ইতিহাসবিদ ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন

Must read

নয়াদিল্লি : শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের কুৎসিত নজির তৈরি করল বিজেপি সরকার। তীব্র সংখ্যালঘু বিদ্বেষ থেকে এবার মুঘল জমানার ৩০০ বছরের ইতিহাসকেই পাঠ্যসূচি থেকে মুছে ফেলা হল। যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে দ্বাদশ শ্রেণির স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হল মুঘলদের ইতিহাস। এরপর ইউপি বোর্ড এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-এর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা আর মুঘল দরবারের ইতিহাস পড়বে না। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের চক্রান্ত বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সরব হয়েছেন ইতিহাসবিদ ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।

আরও পড়ুন-মোদির সিবিআই স্তুতি, খোঁচা তৃণমূলের

ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইন্টারমিডিয়েটে এতদিন ধরে চলে আসা ইতিহাসের বই ‘ভারতীয় ইতিহাসের বিষয়-২’ থেকে মুঘল শাসক এবং ইতিহাসের অধ্যায় (ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দী) সরিয়ে দিয়েছে। বিজেপি সরকারের বেনজির সাফাই, এতদিন পর্যন্ত দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। মুঘল ইতিহাসের নামে মুসলিম শাসকদের মহিমান্বিত করা হত। তাই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে উত্তরপ্রদেশ বোর্ড এবং সিবিএসই উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে মুঘল ইতিহাস পাঠ্যসূচি থেকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত। বলাই বাহুল্য, উত্তরপ্রদেশ এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সংখ্যালঘু বিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ইতিহাস বিকৃতি করতেও পিছপা হচ্ছে না মোদি-যোগী প্রশাসন। আর এই পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের ফলে ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাসপাঠ অসম্পূর্ণ থাকলেও মাথাব্যথা নেই গেরুয়া শিবিরের।

আরও পড়ুন-হয় বিজেপির পক্ষে না হয় বিপক্ষে, এটাই এখন দেশের ডাক, বিরোধী সম্মেলনে বললেন ডেরেক

এতদিন পর্যন্ত ইতিহাসের পাঠ্যসূচিতে আকবরনামা, বাদশাহনামা, পাণ্ডুলিপির রচনা, মুঘল সম্রাট ও তাঁদের সাম্রাজ্য, আদর্শ রাষ্ট্র, উপাধি, রাজকীয় আমলাতন্ত্র, রাজপরিবার ও সাম্রাজ্য, মুঘল অভিজাততন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হত। এসব এখন বাদ যাচ্ছে। একইভাবে, নাগরিক বিজ্ঞান বই থেকে ঠান্ডা যুদ্ধ এবং মার্কিন আধিপত্যের পাঠও মুছে ফেলা হয়েছে। এছাড়া একাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে ইসলামের উত্থান, শিল্প বিপ্লব, সংস্কৃতির সংঘর্ষ এবং সময়ের সূচনা বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকী স্বাধীন ভারতের রাজনীতি বিষয়ক বই থেকে গণআন্দোলনের উত্থান এবং একদলীয় আধিপত্যের যুগ বাদ দেওয়া হয়েছে যেখানে কংগ্রেস, সমাজতান্ত্রিক দল, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতীয় জনসংঘ, স্বতন্ত্র পার্টির আধিপত্যের প্রকৃতি শেখানো হত। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে গণতন্ত্র ও বৈচিত্র, গণসংগ্রাম ও আন্দোলন, গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ বিষয়ক পাঠ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

আরও পড়ুন-দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন শুরু

পাঠ্যসূচিতে পরিকল্পিত কোপ সম্পর্কে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক সাফাই দিয়েছেন, আমাদের উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করানো। এতদিন এদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানার শিক্ষা থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত। প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী, সিলেবাস সংশোধনের সময়ই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সারা দেশে গৈরিকীকরণের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে অর্ধসত্য পরিবেশন করে পড়ুয়াদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। এই ইতিহাস বিকৃতি অল্প বয়স থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভেদ-বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার বীজ বপন করতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষামহলের।

Latest article