আহা কী দেখিলাম! জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না…

শনিবারের পঞ্চায়েত ভোট। গণতন্ত্রের উৎসবকে উৎ‘শবে’ পরিণত করার চক্রান্ত। সাংবিধানিক পদে থেকেও রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসন-প্রধানের বিচিত্র উসকানি। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লোডশেডিং অধিকারীর হতাশাজাত হুঙ্কার। আসলে কী চাইছে এরা? প্রশ্ন তুলছেন সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

Must read

মাত্র ৬০টি বুথে হিংসার উৎসব, চক্রান্তের সাফল্য। বাকি ৬০ হাজারেরও বেশি বুথে গণতন্ত্রের উৎসব। ফলে রক্তের ছবি, লাশের ফোটো, তাণ্ডবের লেন্সবন্দি-চিত্র খুব বেশি সংখ্যায় হাতে আসেনি দুঃখের বাজারে একটি পত্রিকায়।
রবিবার তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় হেডিং ‘লজ্জা, ঘৃণা, ভয়…।’

আরও পড়ুন-বিজেপির নোংরা দালালি কেন? আলিমুদ্দিনে বিক্ষোভ কমরেডদের

এমন সন্ত্রাসের, ভয়ের লাগাম যাদের হাতে ছিল, তারা কিন্তু অমন বেলাগাম হেডিং ছাপতে পারেনি।
তারা আপন শক্তির প্রকাশ ঢেকে রাখতে পারেনি। তাই, তাই-ই, রবিবার তাদের মুখপত্রে প্রথম পাতায় হেডিংয়ের প্রথম শব্দবন্ধ গতে বাঁধা ‘হিংস্র সন্ত্রাস’ (যেন ‘সায়েন্টিফিক রিগিং’-এর সৌজন্যে একদা ‘অহিংস সন্ত্রাস’ বলবৎ করা হত!), আর তার পরেই, নিজেদের বাহুবলী সত্তা লুকোতে না-পেরে আর একটি শব্দবন্ধ ‘জেদি প্রতিরোধ’।

আরও পড়ুন-জোর ধাক্কা বিরোধীদের, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার জরুরি শুনানি নাকচ কোর্টের

ভোট পড়েছে। ‘গেল গেল’ রব তোলা সত্ত্বেও মানুষই লাইনে দাঁড়িয়ে বুথে বুথে ভোট দিয়েছেন। এই সময়ে সেই কথাটা চেপে রাখা সম্ভব নয়।
সেজন্যই আর একটি বাংলা কাগজের রবিবারের সংস্করণে প্রথম পাতায় স্বীকারোক্তি ‘রক্তধারা পেরিয়েও বুথে ঢল।’
সব মিলিয়ে, বাংলা ভাষায় বহুল প্রচারিত দৈনিকগুলোতে রবিবারের সংস্করণে প্রথম পাতার শিরোনামসমূহ ইঙ্গিত দিচ্ছে পাঁচটি সত্যের। যে সত্যগুলোকে আবেগ মাখিয়ে বাজারে ঢেকে দেওয়া যায়, কিন্তু যুক্তি-বুদ্ধির কাছে যেগুলো অগোপন থাকে না কিছুতেই।
(১) ভোট হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি বুথে, সেখানে গোলমাল হয়েছে মোটে ৬০টি বুথে। তাই ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। বেলাগাম সন্ত্রাসের আবহ থাকলে ভোটের হার এরকম হত না।

আরও পড়ুন-প্রয়াত প্রাক্তন বার্সেলোনা তারকা লুইস সুয়ারেজ

(২) যেসব বুথে গোলমাল হয়েছে, সেসব জায়গায় গোলমালের মুখ্য কারিগর ছিল জগাই-মাধাই-গদাইরা। তাই ভোটের বলি যদি ১৮ জন হন তবে তার সিংহভাগ, কমপক্ষে ১২ জন, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী, সমর্থক।
(৩) গোলমালের যে নীলনকশা, তার পেছনে ছিলেন পদ্মপাল। তিনি যে একটি বড় ষড়যন্ত্রকারী, সেকথা বলতে ইতস্তত করেননি খড়গ্রামে নিহত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সাত্তারউদ্দিন শেখের দুই ভাইপো। তাঁদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, ‘রাজ্যপাল আসায় ওরা (ঘাতকরা) বুকে বল পেয়ে কাকাকে খুন করেছে।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের এই ন্যক্কারজনক ভূমিকা তুলে ধরে একটি কাগজের প্রথম পাতায় সংশ্লিষ্ট সংবাদের হেডিং ‘রাজ্যপাল ফিরতেই বদলার খুন।’

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রী কথা দিলে কথা রাখেন, বুঝেছেন মানুষ, রঘুনাথপুরে ঘটছে নিঃশব্দ বিপ্লব

৪) রাজ্যপাল অতি-উৎসাহী হয়ে রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে যে অতি-তৎপর ভূমিকা পালন করে চলেছেন, সেটাও এই অবকাশে প্রকাশিত হয়েছে। বারাসত ১ নম্বর ব্লকের কদম্বগাছি এলাকার পিরগাছি গ্রাম। সেখানে নির্দল প্রার্থীর সমর্থক মহম্মদ আবদুল্লা খুন হয়েছেন শুনে লাফাতে লাফাতে পদ্মপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁর বাড়িতে হাজির হন। মহম্মদ আবদুল্লার স্ত্রী সাহানারাবিবির সঙ্গে দেখা করেন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। তখন যা ঘটেছে তার বর্ণনা দিতে বাধ্য হয়েছে দুঃখের বাজার সৃষ্টি করতে চাওয়া খবরের কাগজে। ওই কাগজের রবিবারের সংস্করণের তৃতীয় পৃষ্ঠায় ‘‘ভোটের ‘পবিত্র’ দিনে পথে নেমে হতাশ রাজ্যপাল’’ শীর্ষক খবরে লেখা হয়েছে, ‘রাজ্যপালের উপস্থিতিতে ওই সমবেদনা পর্বে আচমকাই খবর আসে, আবদুল্লার আঘাত গুরুতর হলেও মৃত্যু হয়নি।’ অর্থাৎ, তৃণমূল কংগ্রেসের বদনাম করতে অতি-তৎপর পদ্মপাল সত্য-মিথ্যা যাচাই না-করেই রাজ্যের নানা অংশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছেন। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন, তেমনটা হয়নি। ভোটে নিজে বিজেপির এজেন্ট হিসাবে যতটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, ততটা পালন করা সম্ভব হয়নি। এটা অনুভব করে ভোট-পর্বের শেষে শোনা গিয়েছে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘রাজ্যপাল হয়ে যা করা উচিত, তাই করব। সংশ্লিষ্ট জায়গায় আমি আমার মতামত জানিয়ে রিপোর্ট দেব।’ অর্থাৎ, মা-মাটি-মানুষের সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টা চালিয়েই যাব।

আরও পড়ুন-বিজেপি-বাম হার্মাদের আক্রমণ তৃণমূলকে

৫) এ-সবের পাশাপাশি তথাকথিত ‘সন্ত্রস্ত’ বাংলায় দুজন বিরোধী বিধায়কের অবস্থানটাও দেখে নেওয়া যাক। দুঃখের বাজার তৈরি করবে বলে মাঠে সক্রিয় যে পত্রিকা যাদের প্রথম পৃষ্ঠাতেই বিরাট হেডিং ‘লজ্জা, ঘৃণা ভয়…’ তারই ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় মিঁউ মিঁউ করে স্বীকার করেছে, ভাঙড়ে ‘দেখা নেই নওসাদের, ঝিমিয়ে আইএসএফ’। আর নন্দীগ্রামে ‘বেসুরো শুভেন্দু’ ওই প্রতিবেদনে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, লোডশোডিং অধিকারীর গলায় ‘অসহায়তার সুর’ শোনা গিয়েছে, মহাতেজে, পরম বিক্রমে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বাংলার পঞ্চায়েতগুলিতে বরাদ্দ টাকা বন্ধ করার জন্য তিনি কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাবেন। অর্থাৎ নিজের রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ কারার জন্য বাংলার গরিব মানুষের পেটে লাথি মারতে ইতস্তত করবেন না বাংলার বিরোধী দলনেতা। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার পেছনে আসলে কারা, সেটাও এবার স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট হয়ে গেল।
যে-সব ফেসবুক-বিপ্লবী বাংলায় গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অহরহ অশ্রুপাত করছেন, তাঁদেরকে অনুরোধ, উল্লিখিত পাঁচটি ঘটনাকে অসত্য প্রমাণ করুন এবং তারপর আপন মতামতের যথার্থতা যাচাই করতে বসুন।

আরও পড়ুন-বিরোধী-চক্রান্ত চলছে সতর্ক থাকুন এজেন্টরা

‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যাবে।

অস্বীকরণ বা Disclaimer : এই নিবন্ধটি বাজার চলতি পত্রিকাগুলিতে ৯ জুলাই, ২০২৩ (রবিবার) প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লিখিত। এটিতে প্রদত্ত তথ্যের সত্যাসত্যের দায় নিবন্ধকারের নয়।

Latest article