লে লো বাবু দু’কোটি

ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে ময়দানে পদ্মপক্ষ। সতর্ক করার জন্য ওদের মুখোশ টেনে ছিঁড়লেন দেবলীনা মুখোপাধ্যায়

Must read

‘পৃথিবী আমারে চায়’ ছবির সেই দৃশ্যটার কথা মনে আছে?
উত্তমকুমার ফেরি করছেন। ঠেলে নিয়ে চলেছেন পশরা-ভর্তি গাড়ি। গাইছেন, “নিলামবালা ছ আনা, লে লো বাবু ছ আনা, যা নেবে তাই ছ আনা…।” কণ্ঠ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কথা বিধায়ক ভট্টাচার্য। সুর নচিকেতা ঘোষ।

আরও পড়ুন-রামের নাম না বলায় বর.খাস্ত স্কুল শিক্ষক, যত কাণ্ড উত্তরপ্রদেশে!

প্রায় অবিকল এক দৃশ্য। ছবির নাম, জঞ্জাল পার্টি ফের দেশ দখল করতে চায়। মোদিজি স্বপ্ন ফেরি করছেন। গাইছেন, “নিলামওয়ালা দু কোটি, লে লো বাবু দু কোটি, লে লো বিবি দু কোটি, সব স্বপ্নই দুকোটি। কণ্ঠ নরেন্দ্র মোদি। কথা ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি। সুর অমিত শাহ।
২ কোটি। নরেন্দ্র মোদির প্রিয় অঙ্ক। ১০ বছর আগে ছিল, এখনও আছে।
আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে আরও একবার প্রচারের পাহাড়চূড়ায় কেকের ওপর আইসিংয়ের মতো বসে রয়েছে ‘২ কোটির গ্যারান্টি’।

আরও পড়ুন-টালবাহানার পর ছত্তিশগড়ের নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও

রবিবার সকাল পর্যন্তও এই সংখ্যাটা চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। অর্থাৎ, বছরে দু’কোটি চাকরি।
তারপর ঝুলি থেকে বের হয়েছে ফেরির জন্য নতুন স্বপ্ন— বছরে দু’কোটি লাখপতি দিদি। প্রকল্পের পোশাকি নাম, ‘নমো ড্রোন দিদি’। গ্রামাঞ্চলে যাঁরা এর কথা জানেন, তাঁরা ‘নমো দিদি’তেই অভ্যস্ত। অর্থাৎ, দিদিকে প্রণাম। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি স্বনিযুক্ত প্রকল্পের মহিলাকে এক লক্ষ টাকা করে আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। যাতে গ্রামীণ মহিলারা গর্বিতভাবে বলতে পারেন, তিনি লক্ষ টাকা আয় করেন। ২ কোটি লাখপতি দিদি তৈরিই আমার স্বপ্ন।’
হ্যাঁ! মোদির গ্যারান্টি।

আরও পড়ুন-আজ ৫০০০ পাট্টা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী

কী বলছেন, তার মানেই জুমলা গ্যারান্টি। নেহাতই কথার কথা। ফাঁপা বুলি। খুব একটা ভুল বলছেন না। অতীত অভিজ্ঞতা তো তেমনটাই বলছে।
অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ঢোকার কথা এখনও ভোলা যায়নি কিনা, সেজন্যই এই সংশয়। সেজন্যই এত সন্দেহ।
মহিলা ভোট যে কতবড় ফ্যাক্টর হতে পারে, ২০২১-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেই শিক্ষা পেয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে সেই ফর্মুলা মেনে শেষ মুহূর্তে অঙ্কের ফল বদলে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই মহিলাদের স্বপ্ন দেখানোর কসরত শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ এর পর এবার ‘নমো দিদি’। যে-সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়েছে, সেখানেই আত্মপক্ষ সমর্থনে একটি শব্দও বলার সুযোগ পেলেন না মহুয়া মৈত্র। আর যারা এটা করল, সেই পদ্ম পক্ষই ‘নমো দিদি’র নামে নতজানু হচ্ছে মহিলাদের সামনে! হিসেবটা ঠিকঠাক মিলছে না।

আরও পড়ুন-শীত এল, আহিরণ বিলে এল না পরিযায়ী পাখি, ১০০ দিনের টাকা না মেলায় বন্ধ সংস্কার

আসলে এই যে প্রকল্পের নামের আগে ‘নমো’ যুক্ত করা হচ্ছে, এটা নরেন্দ্র মোদির নামেরই সংক্ষিপ্ত রূপ। নিজের নাম পরোক্ষে সরকারি প্রকল্পে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আত্মপ্রচারের শিখরে পৌঁছাতেই এসব ধান্দাবাজি তাঁর।
গরিবের জন্য, মহিলাদের জন্য তাঁর প্রাণ নাকি কাঁদে। বলে বেড়াচ্ছেন, ‘মোদি গরিবের পুজারি। যার কেউ থাকে না, তার মোদি থাকে।’ ওদিকে বাংলার মেহনতি মানুষের টাকা গায়েব করে বসে আছেন। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা এবং স্বাস্থ্য খাতে আটকে থাকা প্রাপ্য আদায় করতে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিল্লি যেতে হচ্ছে। ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর— এই তিনদিন রাজধানীতে থাকবেন তিনি। আর তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই মর্মে তিনি একটি কড়া চিঠিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। তাঁর সাফ দাবি, এই তিনদিনের মধ্যেই তিনি মোদির সাক্ষাৎপ্রার্থী। আর যদি দেখা না করেন প্রধানমন্ত্রী? জননেত্রী স্পষ্ট বলেছেন, ‘ওই তিনদিনের মধ্যে যে কোনও একদিন দেখা করার (প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে) সময় চেয়েছি। যদি সময় না দেন, তখন বুঝে নেব।’ অর্থাৎ বার্তা স্পষ্ট, বকেয়া আদায়ে ‘পুরনো ঝাঁজে’ই ফিরতে চলেছেন তিনি। ‘তখন বুঝে নেব’— এই শব্দবন্ধনীর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এই ইস্যুতে কেন্দ্র-বিরোধী কঠোর অবস্থান। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাংলার প্রতি আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগে সদা সরব তিনি। বারবার বলছেন, বাংলা থেকে জিএসটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে ওরা (কেন্দ্র)। একটাই ট্যাক্স। সেখানে আমাদের রাজ্যকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন্দ্র আমাদের বঞ্চিত করলেও বাংলার উন্নয়নের কোনও প্রকল্প রাজ্য সরকার বন্ধ করেনি। আমাদের প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। যদি অন্য রাজ্য টাকা পায়, তবে বাংলাকে কেন বঞ্চিত করা হবে?

আরও পড়ুন-দিঘায় বিজেপির গীতাপাঠের পাল্টা চণ্ডীপাঠ করবে সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট

একদিকে যখন এরকম শয়তানি অন্য দিকে তখন স্পষ্ট ন্যাকামি। স্বনিযুক্তি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নারীদের ড্রোন চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের পর ১৫ হাজার টাকা করে প্রাথমিক সহায়তা করা হবে। এসব বলছে কেন্দ্র। মোদি বলেছেন, ‘ফসলের খেতে সার দেওয়া, কীটনাশক স্প্রে, পাহারা দেওয়ার মতো কাজ আগামী দিনে সার্বিকভাবে ড্রোননির্ভর হয়ে যাবে। আর সেই ড্রোনের পরিচালিকা হবে গ্রামীণ মেয়েরাই।’ একদিকে ড্রোন, অন্যদিকে বিভিন্ন যন্ত্র, এলইডি বাল্ব তৈরি, প্লাম্বিং প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। মোদি বলেছেন, ‘আমার স্বপ্ন হল, ২ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করা।’
ফের মিথ্যে কথা। ফের ভুয়ো স্বপ্ন ফেরির ধান্দা।

Latest article