প্রাণায়াম
সারাদিন কাজের শেষ নেই মহিলাদের। কেউ ঘর সামলান, কেউ অফিস, আবার কেউ ঘর এবং অফিস দুটোই। অন্যদের খেয়াল রাখতে গিয়ে অনেকেই উপেক্ষা করেন নিজেদের। নেন না শরীরের যত্ন। এর ফলে কোনও-না-কোনও সময় তাঁদের পড়তে হয় নানারকম জটিল শারীরিক সমস্যায়। তাই শরীর এবং মন ভাল রাখতে প্রাণায়াম খুব ভাল উপায়। প্রাণায়াম অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন-যোগ-ব্যায়াম
কপালভাতি প্রাণায়াম
এই প্রাণায়াম শরীরের মধ্যে এনার্জি ও ফ্রেশনেস বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। এই প্রাণায়াম সুগারের যম। এছাড়াও এই প্রাণায়াম ব্রেনের প্রতিটি কোষের মধ্যে অক্সিজেন সঞ্চালনের মাত্রা থেকে স্ট্রেস লেভেল কমানো— সবেতেই সাহায্য করে।
প্রণালী : প্রথমে একটি সমান জায়গায় বসতে হবে। সুখাসন বা পদ্মাসনে। মেরুদণ্ড সোজা করে। এবার বাঁ হাত হাঁটুর উপরে ও ডান হাত নাভির উপর রাখতে হবে। এর পর নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বায়ু পেটের মধ্যে নিতে হবে এবং পেটে চাপ দিয়ে নিঃশ্বাস বাইরে ছাড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, শ্বাসপ্রণালীর মধ্যে যেন পেটও কানেক্ট করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত করতে হবে। যতটা সম্ভব। ৫ থেকে ১০ মিনিট প্র্যাকটিস করা যায়। নিজের সুবিধা অনুযায়ী।
আরও পড়ুন-ডায়েটিকরণ
অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম
অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম শরীরের মধ্যে থাকা দুটি প্রধান নাড়ির উপর সমতা আনে ফলে শরীরের শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। এর ফলে শরীরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন হরমোনের সমস্যা দূর হয়। যেমন ইনসুলিন। অক্সিজেন যুক্ত রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করে।
প্রণালী : প্রথমে একটি সমতল জায়গায় পদ্মাসনে বা সুখাসনে— যাকে বলে বাবু হয়ে বসুন। মেরুদণ্ড এবং মাথা সোজা করে গভীর নিঃশ্বাস নিন। বাঁ হাত কোলের উপর রাখতে হবে, তার পর ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক বন্ধ করুন তর্জনী এবং মধ্যমার আঙুলটা কপালে দুই ভ্রুর মাঝে ঠেকে থাকবে এবার বা নাক দিয়ে ধীরে ধীর নিঃশ্বাস নিন। আর অনামিকার আঙুল দিয়ে বা নাক চেপে ধরে ডান নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। আবার সঙ্গে সঙ্গে ডান নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে ওই একইভাবে বাঁ নাক দিয়ে ছাড়ুন। এই গোটা সাইকেলটা এক-এক করে গুনুন— এইভাবে দশবার করুন।
আরও পড়ুন-পৌষের শুরুতেই এল শহরে জাঁকিয়ে শীত
ভ্রামরী প্রাণায়াম
ভ্রামরী শব্দটি ভোমরা বা মৌমাছির থেকে নেওয়া। ভ্রামরী শব্দের অর্থ হল ভ্রমরসম্বন্ধীয় বা মৌমাছির গুনগুন শব্দ। যা অনেকটা ওম প্রকৃতির। এই প্রাণায়ামের সাহায্যে ব্লাডসুগার থেকে শুরু করে কোলেস্টেরল, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রণালী : সুখাসনে বা পদ্মাসনে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা করে মাথা কিছুটা উপরে তুলে গভীর ভাবে নিঃশ্বাস নিন। এবার দুটি হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে দুটি কান বন্ধ করুন দুটো হাতের তর্জনী দুই ভুরুর উপরে রাখুন এবং বাকি তিনটে আঙুল দিয়ে চোখ হালকা করে চেপে ধরুন। এবার গভীর ভাবে নিঃশ্বাস নিন। এবং ছাড়ার সময় মুখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে ছাড়বেন কিন্তু একটা ওম উচ্চারণ করতে করতে। ঠোঁট বন্ধ করে উচ্চারণ ওমের মতো শোনাবে। এই ভাবে দশবার করুন।
আরও পড়ুন-গেরুয়া রং নিয়ে বিজেপি ঘৃণ্য রাজনীতি করছে
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম
এই প্রাণায়াম সুগার থেকে শুরু করে শরীরের ঝিমুনি ভাব কমায় এছাড়া শরীর এবং মনের এনার্জি দেয়।
প্রণালী : প্রথমে সমতল জায়গাতে বসতে হবে। সুখাসন বা পদ্মাসনে। মেরুদণ্ড সোজা করে এবং মাথা সামান্য উপরে দিকে তুলে। এবার নিজের হাত দুটি ধ্যান মুদ্রায় দুই হাঁটুর উপর রাখতে হবে। এর পর গভীর ভাবে কয়েকটি নিঃশ্বাস নিতে হবে। তার পর এমন ভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হবে, যাতে শ্বাসবায়ু বুকের মধ্যে জমা হয়। নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় বুকের উপর চাপ দিয়ে ছাড়তে হবে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
চন্দ্রভেদী প্রাণায়াম
এই প্রাণায়ামকে চন্দ্রভেদী বলার কারণ এই প্রাণায়াম আমাদের চন্দ্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। এই প্রাণায়াম শরীরে নার্ভ-এর সমস্যা থেকে শুরু করে সুগার, হাই ব্লাডপ্রেশার, মানসিক চিন্তা বা স্ট্রেস ও ভয় সবকিছু থেকে মুক্ত করে।
প্রণালী : সুখাসন বা পদ্মাসনে বসতে হবে। যেন মেরুদণ্ড একদম সোজা থাকে। এরপর ডান হাত দিয়ে নাকের ডান দিক বন্ধ করুন এবং এরপর বাঁ দিক দিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়ুন। এইভাবে দশবার করুন। চাইলে একটু দ্রুত করতে পারেন।
ধ্যান
মনকে শান্ত, স্থির, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি মুক্ত করতে মেডিটেশন বা ধ্যান খুব উপকারী। ধ্যান মনের ভয় কাটায়, মনকে ইগোমুক্ত করে, মনের, অ্যাকসেপটেন্স বা গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের মতো ধীরে ধীরে কাজ করে এবং ফল দেয় দীর্ঘপ্রসারী। সারাদিন ব্যস্ততার শেষে একবার ধ্যান করলে অনেক মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
মেডিটেশন শুরুর আগে নিজেকে রিল্যাক্স বা সঠিক স্থিতিতে নিয়ে আসা জরুরি শর্ত। নিজের বডিকে রিল্যাক্স ও ব্যালান্স করার সবচেয়ে সরল সমাধান হল গভীর ভাবে শ্বাস নেওয়া। চোখ বন্ধ করে কুড়িবার শ্বাস নিন আর ছাড়ুন খুব ধীরে ধীরে।
আরও পড়ুন-তাঁতশিল্পীরা কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতির শিকার, প্রতিবাদ
চিন্তাশূন্যতাই ধ্যান
ধ্যান বা মেডিটেশনকে অনেকে আধ্যাত্মিক পদ্ধতি বলে ব্যাখা দেন। ধ্যান আসলে চিন্তাশূন্য একটি স্তর। যেখানে মনে কোনও চিন্তা বা ছবি থাকবে না। মন নিবিষ্ট করে ধ্যানে বসা তাই খুব কঠিন কাজ। সেই কারণে ধ্যানের সময় কোনও একটি ছবি বা বিষয়ের উপর মন নিবিষ্ট করতে বলা হয়। যাতে সুবিধাজনক হয়। ধ্যানে বসার পর বহু চিন্তা ধীরে ধীরে মাথায় এবং কল্পনায় আসতে শুরু করে। সেই চিন্তার স্তরকে বাধা দেবেন না আসতে দিন। ধীরে ধীরে ওই চিন্তা আপনা থেকেই চলে যেতে শুরু করবে তখনই ধ্যান শুরু হয়। অসুবিধে হলে কোনও একটা বিষয় নিয়ে বা ছবি নিয়ে ভাবতে পারেন। সেই কারণেই বলা হয় যে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ে সে আসলে ধ্যানই করে। ধ্যান স্থির গভীর মনোযোগ ছাড়া আর কিছুই না। তাই ঠিকঠাক ধ্যান করতে দীর্ঘদিনের অভ্যেস জরুরি। একদিনে সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন-আজ নবান্নে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী
ওম উচ্চারণে ধ্যান
চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে ওম উচ্চারণের মাধ্যমে ধ্যান অভ্যেস খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি। নানা ধরনের মিউজিক বা সাউন্ড রয়েছে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির, যেগুলো কানে শুনে ধ্যানের অভ্যেস করা যেতে পারে।
দেহভঙ্গি এবং মুদ্রা
মেডিটেশন বা ধ্যান করুন সুখাসন, পদ্মাসন এবং বজ্রাসনে বসে। মেডিটেশনের সময় হাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাত বা হাতের ভঙ্গি শরীরের বিভিন্ন এনার্জি সিস্টেমকে অ্যাকটিভ করতে পারে।