বর্ষা-সাহিত্যে জীবনের জলছবি

ঋতুরাজ যদি হয় বসন্ত তাহলে ঋতুর রানি অবশ্যই বর্ষা। ঋতুচক্রে রানির মতো তার বিরাজ। সৃষ্টির শাশ্বত সুর বুকে নিয়ে সে সমৃদ্ধ করে চলেছে আমাদের জীবন ও সাহিত্য। বর্ষা ছাড়া সাহিত্য কিংবা জীবন অনেকটাই কষ্ট-কল্পনা। তাই বর্ষার কাছে আমরা চিরঋণী। লিখছেন সৌরভকুমার ভুঞ্যা

Must read

প্রাক্‌কথন
ঋতুর রানি বর্ষা। সাহিত্যের সঙ্গে তার নিবিড় যোগ। বর্ষা নিয়ে যত লেখা হয়েছে তা অন্য কোনও ঋতুকে নিয়ে হয়নি। আমাদের প্রাণের ঋতু মোহময়ী বর্ষা। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে বিধ্বস্ত জীবনে শান্তির সুধা নিয়ে বর্ষার আগমন। বিবর্ণ, মলিন প্রকৃতির বুকে করে নতুন প্রাণের সঞ্চার। একদিকে কৃষকের লাঙলের ফলায় মাটির বুক বিদীর্ণ হয়, অন্যদিকে স্রষ্টার কলমে জেগে ওঠে নবসৃষ্টির উন্মাদনা।

আরও পড়ুন-বর্ষায় ঘর-গেরস্থালির দেখভাল

সাহিত্যে মোহময়ী বর্ষা
বর্ষার রূপ বড় মোহময়ী। কখনও রিমঝিম কখনও-বা মুষলধারায়। থেকে থেকে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানি। আবার কখনও ভয়ঙ্কর বজ্রনির্ঘোষ। বজ্রপাতের সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছে ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের ‘চরপূর্ণিমা’ উপন্যাসে। ‘…হঠাৎ ভয়ঙ্কর চিক্কির মেরে মস্ত আঁকাবাঁকা জ্বলন্ত তরোয়াল আকাশ ফালাফালা করে বনবিহারীর খেড়ো আবাস ডিঙিয়ে পুকুর পাড়ের আমগাছটা চমকিয়ে দেয়। সবুজ পাতায় পাতায় বৃষ্টি… বৃষ্টিতে সে আগুন ঝলসে যায়।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসে বর্ষার আকাশের বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে, ‘আকাশ নিবিড় মেঘে ঢাকিয়া গিয়াছে। দুর্ভেদ্য অন্ধকারে জেলেপাড়ার পথ পায়ের তলেও হইয়া আছে অদৃশ্য। অত্যন্ত সন্তর্পণে পা ফেলিয়া আগাইতে হয়।’ ময়মনসিংহ গীতিকার ‘দেওয়ানা মাদিনা পালা’য় বর্ষা আর বাণিজ্যের সুন্দর ছবি ফুটে উঠেছে। ‘আইল আষাঢ় মাস লইয়া মেঘের রানী/নদী নালা বাইয়া আইসে আষাঢ়িয়া পানী।/শকুনা নদীতে ঢেউয়ে তালেপার করে/বাণিজ্য করিতে সাধু যত যাহে দেশান্তরে।’ সমরেশ বসুর উপন্যাস ‘গঙ্গা’য় মেঘ-বৃষ্টির সুন্দর বর্ণনা আছে একাধিকবার— ‘দুদিন ধরে মহিষকালো আকাশে কেবল বিদ্যুতের ঘটা গেল। বৃষ্টি হল ফিসফিস করে। তারপর মহিষগুলো দাপাদাপি করল। বৃষ্টি এল মুষলধারে। মেঘ নামল গড়িয়ে গড়িয়ে, জড়িয়ে ধরতে আসছে যেন গোটা গঙ্গার বুকখানি। বাজ পড়ল হুঙ্কার দিয়ে। পূবসাগরে রুদ্র ঝড় শুরু হল হঠাৎ।’

আরও পড়ুন-বর্ষায় ইলিশে বাঙালি

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ প্রকৃতিকে মলিন করে। বর্ষা সেখানে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। বৃষ্টির স্পর্শে গাছপালা সবুজ হয়ে ওঠে। গাছে গাছে নতুন পাতা জন্মায়। ‘…কদিনের বর্ষায় ডালে ডালে কচি পাতা, কচি ডগে ক্ষণিকে হাজার ফুলঝুরির চমক।’ (চরপূর্ণিমা)। অন্যদিকে প্রবল বর্ষণে পশুপাখিদের অবস্থা খুব সঙ্গিন হয়। কবিগুরুর কথায়, ‘…কুলায়ে কাঁপিছে কাতর কপোত/দাদুরি ডাকিছে সঘনে।’ অপরদিকে ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘আষাঢ়ের আকাশে ঝিমকিনি দিয়ে বৃষ্টি। গাছ-গাছালির ডগায় খড়কুটোর বাসা। কাক পাখি দোল খায়। ডানা, পিঠের পালক ভিজে জবজবে। ছাঁচের জল দাওয়ার ধার বেয়ে উঠোনে গড়ায়।’ জলভরা উঠোন আমাদের স্মৃতিমেদুর করে। ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশব আর কৈশোরের মধুর দিনগুলিতে। প্রবল বর্ষণে বাড়ির উঠোন যখন হয়ে উঠত নদী তখন শিশুরা কাগজের নৌকো তৈরি করে সেখানে ভাসাত। সে এক অপরূপ দৃশ্য। আজকাল কাগজের নৌকো ভাসানোর সেই দিনগুলি প্রায় হারিয়ে গেছে। যেমন করে হারিয়ে গেছে গ্রাম জীবনের বৃষ্টিমাখা অনেক চেনা ছবি।

আরও পড়ুন-বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত ৮

বর্ষা-জীবনের গল্পগাথা
বর্ষা কখনও হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর অভিশাপ। আবার এই বর্ষাই কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ। লাঙল-বলদের দিন হারিয়ে এখন বর্ষা নামলে মাঠে-মাঠে ট্রাক্টরের দাপাদাপি। তবে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কৃষকের ধানের চারা রোপণ, ক্ষণিক বিশ্রামে মাঠের আলের ওপর বসে দুপুরের খাওয়া সারার দৃশ্যগুলো আজও অমলিন। বর্ষা কৃষকের কাছে লক্ষ্মীর আগমনের পথ প্রস্তুত করে।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

আমাদের নদীমাতৃক দেশের একটি বৃহৎ অংশের মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষায় উত্তাল নদী-সমুদ্রের বুকে জীবন বাজি রেখে তাঁরা পাড়ি জমান। পদে পদে মৃত্যুর ভয়। তবুও বর্ষা তাঁদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। জল-জাল নিয়ে যাঁদের জীবন সেই ধীবর সম্প্রদায়ের বর্ষাজীবনের ছবি উঠে এসেছে অসংখ্য লেখায়। অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর এক জায়গায় আমরা দেখতে পাই, তিতাসের বুকে চর বেড়ে গিয়ে নদী হয়ে গেছে ক্ষীণকায়া। অসহায় মালোরা আকুল হয়ে অপেক্ষা করছে কখন বর্ষা নামবে। নদী আবার ফুলে ফেঁপে উঠবে। তাতে আসবে মাছ। যে মাছ তাদের জীবনে বাঁচার রসদ জোগাবে। জেলেদের সেই কঠোর জীবনসংগ্রামের ছবি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে সমরেশ বসুর উপন্যাস ‘গঙ্গা’তেও। মাছের কথা বললে অবশ্যই এসে যায় বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশের কথা। বর্ষায় ইলিশের সন্ধানে জেলেরা দিনের পর দিন উত্তাল নদী সমুদ্রের বুকে পাড়ি জমায়। সেই ছবি দেখতে পাই ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের ‘চরপূর্ণিমা’ উপন্যাসে। ‘…সমুদ্র ফুলে ওঠে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিঠেন জলের টান খেয়ে মোহনামুখী। এমন আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের গাঙ…গাঙ তো নয়, স্রোত হারিয়ে সাগরে একাকার। বিস্তারিত জলভাগে শুধু ঢেউ। আকাশ ডেকে দুম করে ঘন কালো। ভয়ঙ্কর জল কলরোল। ডিঙি উথালপাতাল। জাল বিছিয়ে জল।’

আরও পড়ুন-সুনীলদের নিয়ে জট খোলার চেষ্টায় ফেডারেশন

বিষাদের বর্ষা-পাঁচালি
বর্ষা গরিব মানুষদের জীবনে ভয়ানক কষ্ট ডেকে আনে। একটা সময় গ্রামের বাড়িগুলো ছিল খড়ে ছাওয়া, মাটির। বর্ষায় চাল ফুটো হয়ে ঘরে জল পড়ত। বৃষ্টি ভেজা হয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হত মানুষ। সেইরকমই ছবি দেখতে পাই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে। এক বৃষ্টিমুখর রাতে সর্বজায়া দুর্গাকে বলছে, ‘…পাশ ফিরে শো তো দূর্গা। বড্ড জল পড়ছে। একটু সরে পাশ ফির দিকি।’ আবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে লেখক গরিব কুবেরের কুটিরের বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে, ‘রাত্রি বাড়তে থাকে, বৃষ্টি ধরিবার কোনো লক্ষ্মণ দেখা যায় না, পিসী ঢেঁকি ঘরে গিয়া বাঁক বন্ধ করিয়া শুইয়া পড়ে। … বাহিরে চলতে থাকে অবিরাম বর্ষণ। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হইবার পর ঘরের ফুটা কোন দিয়া ভিতরে জল পড়িতে আরম্ভ করিয়াছিল।’

আরও পড়ুন-বাতাসে আর্দ্রতার প্রকোপ ৪৮ ঘণ্টায় ৬ জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

বর্ষার গায়ে ছুঁয়ে থাকে যেন বিদায়ের সুর। পরিচিত কেউ মারা গেলে তাঁর পরিজনের চোখে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি আর বিদায়ের হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায় পথের পাঁচালীতে। আশ্বিনের অকালবৃষ্টিতে ভিজে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় দুর্গা। তারপর এক ঝড়বৃষ্টির রাতে পৃথিবীর মায়া ছাড়িয়ে দুর্গা পাড়ি জমায় কোনও এক অজানা লোকে। মনে হয় প্রকৃতিও যেন ছোট্ট মেয়েটির অকালবিদায়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।
প্রেম-বিরহের কলমে বর্ষা
বর্ষার সঙ্গে প্রেমের নিবিড় সম্পর্ক। বর্ষা-সাহিত্যে বারে বারে উঠে এসেছে প্রেম-বিরহের কথা। বর্ষা এলে আমাদের মন উচাটন হয়। প্রিয়তম মানুষটিকে ভালবাসার কথা বলার জন্য আকুলতা জাগে মনে। কবির কথায়, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায়/এমন মেঘস্বর বাদল ঝরঝরে/তপনহীন ঘন তমসায়।’ মনের কথা বলার জন্য ইচ্ছে হয় তার কাছে ছুটে যেতে। বিরহী হৃদয় আকুল হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কখন আসবে তার আমন্ত্রণ। মনের মধ্যে নীরবে উচ্চারিত হয়, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন/কাছে যাবো কবে পাবো বলো তোমার নিমন্ত্রণ?’

আরও পড়ুন-সেমিফাইনালে হার লক্ষ্যের

প্রেমের সঙ্গে বিরহের নিবিড় যোগ। বিরহই প্রেমকে মহিমান্বিত করে। চর্যাপদ থেকে শুরু করে বর্তমানের সাহিত্য, সমস্ত জায়গায় দেখি প্রেম-বিরহের নিবিড় উপস্থিতি। চর্যাপদের কবি বিদ্যাপতির কবিতায় ফুটে ওঠে বিরহী সুর, ‘সখি হামারি দুঃখের নাহি ওর/এ-ভরা বাদর মহা ভাদর/শূন্য মন্দির মোর।’ বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে আমরা দেখি কৃষ্ণকে কাছে না পাওয়ায় রাধা কীভাবে বিরহে কাতর হয়েছে। ‘আষাঢ় শ্রাবণ মাসে মেঘ বরিষে যেহ্ন/ঝর-এ নয়নের পানী/আল বড়ায়ি।/সংপুটে প্রণাম করি/বুইলো সব সখিজন/কহো নান্দো কাহ্নাঞিকে আনী।’ প্রেমের সঙ্গে যেমন বিরহের নিবিড় সম্পর্ক তেমনি অভিসারেরও। চণ্ডীদাসের কয়েকটি লাইন এমন, ‘এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা/কেমনে আইলা বাটে/আঙ্গিনার মাঝে বধূয়া ভিজিছে/দেখিয়া পরাণ ফাটে।’

আরও পড়ুন-১৯১১-র ঐতিহাসিক ২৯ জুলাই পালন করল উত্তরপাড়া

প্রেম-বিরহের কথায় অবশ্যই করে বলতে হয় মহাকবি কালিদাসের কথা। তাঁর অমর সৃষ্টি মেঘদূত। কুবেরের অভিশাপে যক্ষকে কাটাতে হয় রামগিরিতে। অনেকদিন প্রেমিকাকে না-দেখা যক্ষের মন আষাঢ়ের আগমনে চঞ্চল হয়ে ওঠে। বিরহ তাকে শোকাতুর করে তোলে। ‘পাশে প্রিয়তমা, মেঘ দরশনে/আকুল-ব্যাকুল তবুও হৃদয়,/প্রিয়া যার দূরে তার পোড়া মনে/কি অনল জ্বলে, বলিতে কি হয়?’ শোকে কাতর যক্ষ স্থির করে সেই মেঘের হাত দিয়ে প্রেয়সীর কাছে নিজের বার্তা পাঠাবে। ‘আসিল বরষা’ ভাবিয়া অন্তরে/বাঁচাইতে নিজ দয়িতা-জীবন,/স্বকুশল-বার্তা জলধর-করে/পাঠাইতে যক্ষ করিল মনন!’ এরপর দেখি সেই হৃদয়স্পর্শী কয়েকটি লাইন, ‘তাপিত জনের তুমি হে শরণ;/কুবেরের কোপে এ বিরহ হায়!/আমার বারতা করিয়া বহন/প্রিয়া-পাশে তুমি যাও অলকায়।’ মেঘকে দূত করে তার হাত দিয়ে প্রেয়সীর কাছে যক্ষের চিঠি পাঠানো, যা আমাদের মনকে নাড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন-কুমোরটুলি থেকে এবার বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে দুর্গা

প্রেমের সঙ্গে শরীরেরও নিবিড় সম্পর্ক। বর্ষা শুধু হৃদয় নয় শরীরেও আলোড়ন তোলে। প্রেমিক-প্রেমিকা মন চায় একে অপরের শরীরে স্বর্গীয় সুখের উত্তাপ পেতে। নারী-পুরুষের সেই নিবিড় সম্পর্কের কথা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন তাঁর ‘বর্ষাকাল’ কবিতায়, ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরণীর উপর/রমণী রমণ লয়ে/সুখে কেলি করে/দানবাদি দেব যক্ষ সুখিত অন্দরে।’
এই ভাবে অসংখ্য সাহিত্য সৃষ্টিতে বারে বারে উঠে এসেছে বর্ষা আর প্রেমের ছবি। সাহিত্যের পাশাপাশি বর্ষার প্রেম-বিরহ নিয়ে কত যে গান লেখা হয়েছে তার হিসেব নেই। বৃষ্টি নিয়ে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন সাহিত্যিকেরা। কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দিন, জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় বারে বারে উঠে এসেছে বর্ষা।

আরও পড়ুন-নিউটাউনে ম্যানহোল পরিষ্কারে আনা হল লেটেস্ট রোবট

সংক্ষেপে বলার, আমাদের জীবন ও সাহিত্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বর্ষা। বর্ষা ছাড়া যেমন জীবন সম্ভব নয়, তেমনি বর্ষা ছাড়া সাহিত্যও অনেকটা ফিকে হয়ে যায়। তবে বর্ষা তার আগের গরিমা এখন অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। যন্ত্র-দানবের মাতামাতি, মানুষের লালসা আর অসচেতনতায় প্রকৃতি হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক ছন্দ, ঋতু হারিয়েছে রূপ, বৃষ্টি হয়ে গেছে খামখেয়ালি। পাশাপাশি যান্ত্রিক সহজ মাধ্যম ও মানসিকতার পরিবর্তনের কারণে বর্ষা এখন আর আগের মতো প্রেমিক-প্রেমিকার মনকে উদ্বেলিত করতে পারে না। তবে এটাও ঠিক বর্ষাকে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তো, আজও বর্ষাকে নিয়ে গান-কবিতা সৃষ্টি হয়ে চলেছে এবং আগামী সময়েও সেই ধারা অব্যহত থাকবে। এককথায় বলা যায়, বৃষ্টির আশীর্বাদে পৃথিবীর বুকে যেমন বয়ে চলে সৃষ্টির প্রাচীন ধারা, তেমনি করে আমাদের জীবন-সাহিত্য ও গানে সে মিশে থাকবে তার অফুরন্ত সৃষ্টির ভাণ্ডার নিয়ে।

Latest article